খোদ রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) সদর দপ্তরে টেন্ডার ছিনতাইয়ের ঘটনাটি ঘটেছিল চার মাস আগে। একদল টেন্ডারবাজ কয়েকজন ঠিকাদারকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে টেন্ডার ফেলতে বাধা দেন ও মারধর করেন। এ ঘটনায় শাহমখদুম থানায় মামলা হলেও গত চার মাসে শনাক্ত হয়নি কোনো টেন্ডারবাজ। গ্রেফতারও হয়নি কেউ। যদিও সদর দপ্তরের ভেতর ও বাইরের পুরোটাই সিসিটিভি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত। এ ছাড়া আলোচিত টেন্ডার ছিনতাই ঘটনায় আরএমপি কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক একজন উপ-কমিশনারের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। ঘটনার পরদিন ২৫ মে টেন্ডারটি বাতিল করেন আরএমপি কর্তৃপক্ষ।
ভুক্তভোগী ঠিকাদারদের অভিযোগ, শিডিউল বিক্রি ও গ্রহণের নিয়ন্ত্রণ করছিল আরএমপির প্রশাসনিক কর্মকর্তার দায়িত্বে নিয়োজিত জুলমাত হাবিবের দপ্তর। কিন্তু ঘটনার দিন রহস্যজনক কারণে সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয়। এতে বোঝা যায়, টেন্ডারবাজির ঘটনায় আরএমপি সদর দপ্তরের কেউ না কেউ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। তাদের বাঁচাতেই পুলিশ এখনো কোনো টেন্ডারবাজকে গ্রেফতার তো করছে না। এ ভবনে ডিসি সদর দপ্তর, শাহমখদুম থানাসহ কমিশনার, দুই অতিরিক্ত কমিশনার ও বড় বড় কর্মকর্তার দপ্তরের মাঝে ডেন্ডার ছিনতাই হয় কিভাবে-এ প্রশ্ন ভুক্তভোগীদের। মামলাটি তদন্ত করছেন থানার এসআই আবু হারেস। তিনি এখন এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি নন।
জানা গেছে, আরএমপিতে ১০ জন বাবুর্চি ও ১২ জন সুইপার আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগের টেন্ডার শিডিউল জমার শেষ দিন ছিল ২৪ মে। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকজন ঠিকাদার শিডিউল জমা দিতে আসেন এদিন দুপুরে। শফিউল আলমসহ আরও কয়েকজন ঠিকাদার প্রশাসনিক কর্মকর্তার দপ্তরে রক্ষিত বাক্সে শিডিউল ফেলার জন্য ভবনের উপরতলায় ওঠার সময় সশস্ত্র একদল ক্যাডার বাধা দেন। বাধা ঠেলে উপরতলায় উঠলে ক্যাডাররা তাদের মারধর করে শিডিউল ছিনিয়ে নেন। ক্যাডার দল স্থানীয় সিন্ডিকেটের তিনটি শিডিউল বাক্সে ফেলে স্থান ত্যাগ করে। ঘটনার পর থানায় মামলা করেন ঠিকাদার শফিউল আলম।
আরএমপির একাধিক সূত্র জানায়, কোনো টেন্ডার ফেলার দিন থাকলে প্রশাসনিক অফিসার দাপ্তরিক চিঠি দিয়ে টেন্ডার বাক্স পাহারার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের আবেদন করেন। ঘটনার দিন রহস্যজনক কারণে টেন্ডার বাক্স পাহারায় কোনো পুলিশ ছিল না। ফলে সশস্ত্র টেন্ডারবাজরা এ দপ্তরে নির্ভয়ে উঠে যান।
শাহমখদুম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম সরকার জানান, এখনো তদন্তে বিশেষ অগ্রগতি নেই। টেন্ডার ছিনতাইকারীদের চিহ্নিত করা সম্ভব না হলেও তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাননি প্রশাসনিক কর্মকর্তা জুলমাত হাবিব। আরএমপির কমিশনারের গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছে কিনা তাও জানা যায়নি। কারণ, নাম ব্যবহার করে কোনো মন্তব্য দিতে রাজি হননি সংশ্লিষ্ট কমিটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সূত্র- যুগান্তর