খবর২৪ঘন্টা শিক্ষা ডেস্কঃ
অবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ভর্তিচ্ছুদের পুনরায় ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় গতকাল ডিন্্স কমিটির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে ডিনস্ কমিটির এ সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রোভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ, প্রোভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মু. সামাদ, ‘ঘ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সমন্বয়কারী ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিনরা।
সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ‘ঘ’ ইউনিটে উত্তীর্ণ ভর্তিচ্ছুদের পুনরায় ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভা শেষে আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল পুনরায় ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়টি মানবজমিনকে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘ঘ’-ইউনিট ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে যে অনাকাঙ্ক্ষিত সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেটি পরখ করে দেখেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা রক্ষার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
এর আগে ‘ঘ’ ইউনিটের ফল বাতিল করে পুনরায় ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফরম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। মৌন মিছিল শেষে ভিসি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে ছাত্রলীগ। সকাল সাড়ে ১১টায় ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ রাজু ভাস্কর্য থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
এরপর মিছিলটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। বেলা ১২টার দিকে মধুর ক্যান্টিন থেকে ছাত্রলীগ চার দফা দাবি নিয়ে ক্যাম্পাসে মৌন মিছিল বের করে। মিছিল শেষে তারা ভিসির কার্যালয়ে গিয়ে ভিসিকে স্মারকলিপি দেয়। এতে নেতৃত্ব দেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। স্মারকলিপি পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস।
ছাত্রলীগের চার দফা দাবির মধ্যে ছিল যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে পুনরায় ভর্তি পরীক্ষা নেয়া অথবা উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিশেষ ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে সুস্পষ্ট প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে আসা; ডিজিটাল জালিয়াতি, প্রশ্নফাঁস বা যেকোনো ধরনের অসদুপায় অবলম্বনকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া; সুস্পষ্ট তথ্য-প্রমাণ সাপেক্ষে জালিয়াতি, প্রশ্নফাঁস বা অসদুপায় উপায়ের মাধ্যমে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিল ও আইনি ব্যবস্থা নেয়া; আধুনিক, যুগোপযোগী ও মানসম্মত ভর্তি পরীক্ষার স্বার্থে শিক্ষাবিদ, বিশেষজ্ঞ, সিনেট, সিন্ডিকেট, অংশীজন এবং ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে পলিসি ডিবেটের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতির সংস্কার করা। এ ছাড়াও সুষ্ঠুভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কয়েকটি বিকল্প প্রস্তাবনাও দেয়া হয়।
প্রস্তাবনাগুলো হলো- ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের শর্তের পুনর্মূল্যায়ন ও নির্দিষ্ট ইউনিটের আসনের বিপরীতে সুনির্দিষ্ট শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া; এমসিকিউ অংশের সঙ্গে বর্ণনামূলক ও সৃজনশীল প্রশ্নমালার সংযোজন এবং নম্বরের পুনর্বণ্টন; বিশ্বের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমাদের দেশের বিদ্যমান বাস্তবতা ও চাহিদার সমন্বয়ের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সুপারিশমালার নিরিখে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা; অপরিকল্পিতভাবে নতুন নতুন বিভাগ চালু না করে, বর্তমানের উপযোগী এবং উচ্চশিক্ষার বৃহত্তর লক্ষ্য পূরণে সক্ষম বিভাগগুলো চালু বা বহাল রাখা।
উল্লেখ্য, গত ১২ই অক্টোবর অনুষ্ঠিত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শুরুর আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রোভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মু. সামাদকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এরপর ভর্তি পরীক্ষা বাতিল চেয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে সরব হয়ে ওঠে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। পরীক্ষা বাতিল চেয়ে বিবৃতি দেয় ছাত্রদল। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৬ই অক্টোবর ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের ঘোষণা দিলে ওইদিন বেলা ১টায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে আমরণ অনশন শুরু করে আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আখতার হোসেন। বিকাল সাড়ে ৩টায় প্রকাশিত ফলাফলে অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ে।
নিকট অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে ২৬ দশমিক ২১ শতাংশ শিক্ষার্থী ইউনিটটিতে পাস করে। এ ছাড়াও মেধাতালিকায় প্রথম হওয়া শিক্ষার্থীসহ প্রথম সারির ১০০ জনের প্রায় ৮০জনই নিজ নিজ ইউনিটে ফেল করে। যদিও তদন্ত কমিটি প্রশ্নফাঁস হয়েছে বলে প্রতিবেদন দেয়। বিষয়টি প্রকাশ হলে নতুন করে কর্মসূচি ঘোষণা করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। অন্যদিকে আখতারের সঙ্গে সংহতি জানায় ছাত্রলীগ। তারাও ফল বাতিল করে পুনরায় ভর্তি পরীক্ষা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি তুলে। পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিক্ষোভ করে ছাত্রদলও। বিবৃতি দিয়ে পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানায় বিএনপি-জামায়াত পন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।
খবর২৪ঘন্টা / সিহাব