খবর২৪ঘণ্টা ডেস্ক:
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাদণ্ড পাওয়া বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে প্রথমবার গত ১২ মার্চ জামিন দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এরপর ১৪ মার্চ এই জামিন আদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগ।
এরপর আজ বুধবার হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ।
তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, খালেদা জিয়া যে চার মাসের জামিন পেলেন, তা কি প্রথমবারের জামিন আদেশের দিন থেকে, অর্থাৎ ১২ মার্চ থেকে শুরু হবে কি না।
সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানান, ১২ মার্চ নয়, আজ থেকেই শুরু হবে খালেদা জিয়ার জামিনের দিন।
সকালে আপিল বিভাগের দেওয়া জামিন আদেশের পর নিজ কার্যালয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এসব কথা জানান।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গত ১২ মার্চ চার মাসের জামিন দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। পরে ১৪ মার্চ থেকে এই জামিন স্থগিত আছে আপিল বিভাগে। এখন স্থগিতকালীন চার মাসের গণনায় আসবে না। যেদিন হাইকোর্ট (জামিন) দিয়েছিল এবং আপিল বিভাগ যেদিন স্টে (স্থগিত) করেছিল, সেই কয়দিন ধরা হবে। এখন আজকে থেকে ওই দিনগুলোসহ গণনা শুরু হবে।’
আপিল বিভাগ তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়ায় আপিল শুনানিকে খালেদা জিয়া বিলম্বিত করতে পারবেন না বলেও জানান মাহবুবে আলম।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে হাইকোর্ট যে জামিন দিয়েছিলেন, তা বহাল থাকবে। কিন্তু ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে খালেদা জিয়ার আপিলটি নিষ্পত্তি করার জন্য আপিল বিভাগ নির্দেশ দিয়েছেন। নিম্ন আদালতে এই মামলা নয় বছর ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। আপিল বিভাগের এই আদেশের ফলে এখানে তিনি বিচারকাজ বিলম্বিত করতে পারবেন না। যেহেতু আপিল বিভাগ ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন, তাই এই আপিল শুনানির ব্যাপারে সর্বাত্মকভাবে আমরা প্রস্তুত হব।’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ঠিক কয়টি মামলা রয়েছে—জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, ‘তাঁর বিরুদ্ধে কী মামলা আছে, অন্য কোনো মামলায় ওয়ারেন্ট আছে কি না বা কোনো মামলা পেন্ডিং আছে কি না সেটি তো আমি বলতে পারব না। এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং তাঁর আইনজীবীরা বলতে পারবেন।’
খালেদা জিয়ার কারামুক্তির কোনো সম্ভাবনা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘একজনের বিরুদ্ধে যদি পাঁচটি মামলা থাকে, সেখানে একটি মামলায় জামিন পেলে অন্যান্য মামলায় জামিন না পাওয়া পর্যন্ত তাকে জেলেই থাকতে হবে। তবে তার নামে কয়টি মামলা আছে, কোন কোন মামলা কী অবস্থায় আছে, সেটি তো আমি বলতে পারব না। সচরাচর যেটি হয়, যদি পাঁচটি মামলা থাকে, তবে পাঁচটি মামলাতেই তাকে জামিন নিতে হবে।’
তবে রাষ্ট্রপক্ষের দিক থেকে সাজা বাড়ানোর আবেদন করবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমরা তো সাজা বাড়ানোর আবেদন করিনি। এটি করেছে দুদক।’
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন নিম্ন আদালত। এ মামলার অপর আসামি খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বাকি পাঁচজনকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা জরিমানাও করা হয়।
পরে ১২ মার্চ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চার মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়ার জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
১৪ মার্চ খালেদা জিয়ার হাইকোর্টের দেওয়া চার মাসের জামিন স্থগিত করে লিভ টু আপিল দায়েরের জন্য দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। ১৫ মার্চ খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশন।
গত ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। দুই সপ্তাহের মধ্যে সরকার, দুদক ও আসামিপক্ষকে আপিলের সারসংক্ষেপ দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। খালেদা জিয়ার জামিনের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল গ্রহণ করে এ আদেশ দেওয়া হয়।
গত ৮ ও ৯ মে খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের করা আপিল আবেদনের ওপর শুনানি হয়। শুনানি শেষে মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য গতকাল মঙ্গলবার দিন নির্ধারণ করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ গতকালও শুনানি করেন। পরে আদালত আজ আদেশের জন্য দিন রাখেন।
খবর২৪ঘণ্টা / সিহাব