খবর ২৪ ঘণ্টা ডেস্ক: বিএনপি থেকে নির্বাচিত একজন সংসদ সদস্য শপথ গ্রহণের পর দলের ভেতর চলছে তোলপাড়। ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান কেন শপথ নিলো? সে কার লোক? তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়নি কেন—এসব নিয়ে নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন দায়িত্বশীল নেতাদের কাছে। এর মধ্যে আরো দুই বা তিনজন এমপি আগামীকাল রবিবার শপথে আগ্রহী বলে জানাগেছে। তাদের দলের পক্ষ থেকে বোঝানোর চেষ্টা করা হলেও গতকাল রাত পর্যন্ত শপথ গ্রহণে বদ্ধপরিকর ছিলেন তারা।
একজন আজ শনিবার তার নির্বাচনী এলাকায় বৈঠক ডেকেছেন শপথ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে। যারা শপথ নিতে চান তারা পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তারা কেন শপথ গ্রহণ করতে চান তার যৌক্তিকতা দলের মহাসচিবের কাছে তুলে ধরেছেন। জাতীয় সংসদের স্পিকারের দপ্তরেও শপথের বিষয়ে আলাপ করে রেখেছেন। দলের মহাসচিব ও বগুড়া-৬ থেকে নির্বাচিত এমপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বলেছেন, ‘বিএনপির নির্বাচিতরা যেন শপথ নেন, সেজন্য সরকারের চাপ আছে।’
এদিকে আজ শনিবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। এ বৈঠকে জাহিদুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলে কমিটির একজন সদস্য জানান। যদিও বহিষ্কার নিয়ে জাহিদুর বা অন্য যারা শপথ নিতে চাচ্ছেন তারা পরোয়া করছেন না। জাহিদুর রহমান বলছেন, আমার আর নির্বাচন করার ইচ্ছা নেই। দল বহিষ্কার করে করুক। কিছুই হবে না। আমি দলকে ছেড়ে যাচ্ছি না। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া অন্য চারজন শেষ পর্যন্ত শপথ নেবেন বলে আমার কাছে খবর আছে। মির্জা ফখরুলও শপথ নিতেন; তবে নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের কথা ভেবে শপথ নেবেন না।
বিএনপি থেকে নির্বাচিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের মো. আমিনুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের মো. হারুনুর রশীদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উকিল আবদুস সাত্তার শপথ নিতে পারেন বলে গুঞ্জন চলছে। বগুড়া-৪ আসনের মো. মোশাররফ হোসেনের নাম আলোচনায় আছে। উকিল আবদুস সাত্তার আজ ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায় সভা ডেকেছেন। সেখানে লোকজনের মতামত নেবেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ থেকে নির্বাচিত মো. হারুনুর রশিদ বলেন, আশা করি দল তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে। আমি এখনো সেই অপেক্ষায় আছি। দল যদি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করে সে ক্ষেত্রে এখনো সময় আছে। সংসদে যাওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরতে গত সোমবার নিজ বাসভবনে সংবাদ ব্রিফিং করেন হারুন। তিনি বলেন, আমার ওপর জনগণের চাপ আছে, তারা চায়, আমি সংসদে গিয়ে কথা বলি। আমি নিজেও মনে করি জনগণের রায় আমার কাছে আমানত।
উকিল আবদুস সাত্তার বলেন, আমরা শপথ নেওয়ার বিষয়ে পজিটিভ। যারা বিপদের মধ্যেও ঝুঁকি নিয়ে ভোট দিয়েছিলেন, তাদের থেকে সংসদে যাওয়ার চাপ আছে। যারা জেল-জুলুম-হামলা-মামলা উপেক্ষা করে তার জন্য এলাকায় কাজ করেছেন তাদের জন্য হলেও সংসদে যেতে চান।
আমিনুল ইসলাম জানান, শপথ না নিলে তিনি এলাকায় যেতে পারবেন না এবং তাকে এলাকার লোকজন মারবে। জনগণের দাবি— আমরা শপথ গ্রহণ করে সংসদে যাই। সংসদে গিয়ে জনগণের দাবির কথা, বেগম খালেদা জিয়ার কথা তুলে ধরি। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে এখনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।
এদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, এসব বিষয়ে আমাদের কোনো উদ্বেগ নেই। বিএনপি জনগণের দল, সেই দল হিসেবে এদেশে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। নিঃসন্দেহে এ চাপ এটা সবসময় থাকে। যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয় না তাদের এ ধরনেরই হীন অগণতান্ত্রিক কৌশল অবলম্বন করতে হয় ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য।
সংসদের প্রথম বৈঠক থেকে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই হিসাবে ২৯ এপ্রিলের মধ্যে শপথ নিতে হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে বিজয়ী প্রার্থীদের। সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে স্পিকারকে চিঠি না দিলে ২৯ এপ্রিলের পর তাদের আসন শূন্য হয়ে যাবে। পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে এসব শূন্য আসনে অনুষ্ঠিত হবে উপনির্বাচন।
খবর২৪ঘণ্টা, জেএন