খবর২৪ঘণ্টা.কম, ডেস্ক: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার রায়ের দিন ৮ ফেব্রুয়ারি। এদিনকে ঘিরে ঢাকাসহ সারা দেশে চলছে ব্যাপক ধরপাকড়। রাজনীতিতে বিরাজ করছে উত্তেজনা। আতঙ্কের ছায়া ঘিরে ফেলছে জাতিকে, অস্বাভাবিক ভীতিতে কাঁপছে দেশ।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু ৮ ফেব্রুয়ারি প্রসঙ্গে বলেছেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। রায় দেখব, এরপর আমাদের সিদ্ধান্ত নেব। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সমাধানের পক্ষে আমরা। সরকারই পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে চাইছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রায় তো সরকারের কথাতেই হচ্ছে, নইলে আগাম অবস্থান নেবে কেন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে। সরকার শত শত নেতাকর্মীকে আটক করে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করছে। সময় বুঝেই সরকারের সব কর্মকাণ্ডের জবাব দেয়া হবে বলে জানান শামসুজ্জামান দুদু।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ৮ ফেব্রুয়ারি দেশে কোনও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হতে দেব না। আইনশৃংখলা রক্ষায় পুলিশের যা যা করার তাই করবে। দেশের বিচার বিভাগ স্বাধীন। রায়ে কী হবে, তা বিচারক জানেন। তবে রায়ের পর কেউ নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে, অরাজকতা করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃংখলা বাহিনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী পুলিশের প্রস্তুতি সম্পর্কে গত বৃহস্পতিবার রাজারবাগে এক অনুষ্ঠানে বলেন, জানমালের নিরাপত্তায় পুলিশ সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থানে থাকবে। এরপরই ঢাকার কয়েকটি প্রবেশমুখে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। গাবতলী, যাত্রাবাড়ী ও উত্তরার চেকপোস্টগুলোতে দেখা যায় পুলিশের সতর্ক উপস্থিতি। মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানা এলাকার পলওয়েল মার্কেটের সামনে গিয়ে দেখা যায়, চেকপোস্টে পুলিশের কড়া নজরদারি। বাস থামিয়ে চালানো হচ্ছে তল্লাশি। চেকপোস্টের দায়িত্বরত উত্তরা পূর্ব থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুজন মিয়া জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে চেকপোস্টে সার্বক্ষণিক পুলিশ সদস্যরা সতর্কাবস্থায় রয়েছেন। সন্দেহভাজনদের মৌখিক জিজ্ঞাসাবাদ, ব্যাগ তল্লাশি, বাস-প্রাইভেটকারসহ যানবাহনে তল্লাশি করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেলপথে ও নৌপথেও চলছে তল্লাশি। সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে কমলাপুর রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইয়াসিন ফারুক মজুমদার জানান, ঢাকার ভেতরকার প্রত্যেকটি স্টেশনে যাত্রী ওঠার সময় ও নামার সময় গেটে তল্লাশি করা হচ্ছে। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে এটা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। নৌ পুলিশের ঢাকা জোনের সদরঘাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ২ দিন আগ থেকে এখানে নজরদারি, তল্লাশি বাড়ানো হয়েছে। পর্যাপ্ত জনবলকে মাঠে রাখা হয়েছে। নাশকতার উদ্দেশ্যে, বিস্ফোরক নিয়ে কেউ যাতে নৌপথে ঢাকায় ঢুকতে না পারে সে বিষয়টি দেখা হচ্ছে।
রায়ের আগে সারা দেশে গতকাল পর্যন্ত ১১ শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। তার মধ্যে অনেকে কোথায় আছেন, কিংবা তাদের কোথায় নিয়ে রাখা হয়েছে- তার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এ অভিযোগ করেন। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, যত অত্যাচার নির্যাতনই করা হোক না কেন, বেগম খালেদা জিয়া ও তার দল বিএনপিকে ধ্বংস করা যাবে না।
বিএনপির নেতাদের গ্রেফতার হওয়া সম্পর্কে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘যারা পুলিশকে আঘাত করেছে, আসামি ছিনিয়ে নিয়েছে, অস্ত্র কেড়ে নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে স্পেসেফিক মামলা হয়েছে। সেই মামলায় অভিযুক্তদেরই পুলিশ গ্রেফতার করছে।’
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, রায়ের দিনে বড় জমায়েত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। বেগম খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলন আজ। এরই মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) রাজধানীতে ওইদিন জমায়েত কিংবা মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। তবুও রায়ের দিন বিএনপি নেতা-কর্মীরা মাঠে থাকবে বলে জানা যায়।
এদিকে খালেদা জিয়ার মামলার রায় উপলক্ষে নাশকতা ঠেকাতে বুধবার থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গজারি লাঠি হাতে রাস্তায় থাকবেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আশঙ্কা করছি খালেদা জিয়ার সাজা হলে আবারও পরিবহন খাত আক্রান্ত হতে পারে। তাই ১৫ থেকে ২০ হাজার পরিবহন মালিক ও শ্রমিক আত্মরক্ষার্থে ৭ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত রাজধানীর টার্মিনাল ও সড়কে লাঠি হাতে অবস্থান নেব।
রায়কে কেন্দ্র করে যে কোনো ধরনের বিশৃংখল পরিস্থিতি মোকাবেলায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সতর্ক পাহারায় থাকবে বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রায়ের দিন বিএনপি অরাজকতা করার চেষ্টা করতে পারে এমন শঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, তারা সেদিন প্রকাশ্য দিবালোকে হাইকোর্টের সামনে পুলিশের প্রিজনভ্যানে আক্রমণ করে ভাঙচুর চালায়। রাইফেল পর্যন্ত ভাঙচুর করেছে। এই ধরনের ঘটনা যারা ঘটাতে পারে তারা ৮ তারিখেও নাশকতায় আশ্রয় নিতে পারে।
একটি মামলা। একটি রায়। দীর্ঘ প্রতীক্ষার খানিক অবসানও বটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই রাজনীতির মাঠ আবারও উত্তপ্ত। জল্পনা, কল্পনা আর নানা গুঞ্জন এখন রাজনীতি ও রাজনীতির বাইরে, যার কেন্দ্রে প্রকাশ পাচ্ছে আতঙ্কের দাবানল।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/রখ