খবর২৪ঘণ্টা,আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মহরম ইস্যুতে বারবার বিতর্ক তৈরি হয় পশ্চিমবঙ্গে। দুর্গা পূজার বিসর্জনের কাছাকাছি সময় মুসলিমদের এই মহরম পালন ঘিরে হয় বিতর্ক। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এব্যাপারে সতর্ক করেছেন। এবার খোদ ইমামরাই বলছেন, যাতে মুসলিমরা ধারাল অস্ত্র প্রদর্শন না করেন মহরমে। এই ধরনের প্রথার সঙ্গে ইসলামের কোনও সম্পর্ক নেই বলেও দাবি করেছেন একাধিক ইমাম।
‘হিন্দুস্তান টাইমস’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, শাসক দল তৃণমূলের তরফে ইতিমধ্যেই মুসলিমদের এই রীতি থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মুসলিম ক্যালেন্ডারের হিসেবে প্রথম মাসের দশম দিনে পালিত হয় মহরম। সাধারণত প্রত্যেকবারই এই দিনে তলোয়ারের মত অস্ত্র হাতে মিছিল বের করেন মুসলিমদের একাংশ। মূলত শিয়া মুসলিমদের মধ্যেই এই প্রথার প্রচলন রয়েছে।
সাত শতকে ইরাকের কারবালায় যুদ্ধে মৃত্যু হয়েছিল হজরত মহম্মদের নাতি হুসেনের। এই বিশেষ দিনে সেই হুসেনের মৃত্যুকে স্মরণ করে, শিয়া মুসলিমরা চেন ও তলোয়ার নিয়ে মহরম পালন করে। অনেক ক্ষেত্রে শিশুদের হাতেও অস্ত্র দেখা যায়। সেখানেই তৈরি হয় বিতর্ক।
তৃণমূল সাংসদ ইদ্রিশ আলি জানিয়েছেন, ”আমরা বিভিন্ন ইমামদের কাছে গিয়ে আবেদন জানিয়েছি, মহরমে এমন কিছু না করা হয় যাতে অন্যান্য ধর্মের ভাবাবেগে আঘাত করে।” তিনি আরও বলেন, এই রীতির সঙ্গে ইসলামের কোনও সম্পর্ক নেই। পাশাপাশি, এই ইস্যুকে বিজেপি হাতিয়ার করে বলেও এই রীতি থেকে বিরত থাকার কথা বলেন তিনি। অন্যদিকে, তৃণমূলের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে রাজ্য বিজেপি। যে ইস্যু নিয়ে রাজ্যে বারবার, রাজ্যের দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এই ইস্যুতেই এবার দিলীপ ঘোষ বললেন, ”এই সিদ্ধান্ত আমাদের নৈতিক জয়।”
চলতি মাসেই রয়েছে মহরম। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর মুসলিমদের সেই বিশেষ দিন। তার আগে তলোয়ার ব্যবহার না করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন একাধিক ইমাম।
কলকাতার নাখোদা মসজিদের ইমাম মওলানা শফিক কাসমি এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বলেন, ”মহরম আমাদের শোকের মাস। মিছিলে কেউ দায় করে লাঠি বা তলোয়ার ব্যবহার করবেন না। এর সঙ্গে ইসলামের কোনও সম্পর্ক নেই। সাম্প্রদায়িক দলগুলি হাতিয়ার করতে পারে, এমন কোনও কাজ করবেন না।” আসানসোলের ইমাম মৌলানা ইমদাদুল রশিদি মহরমে অস্ত্র প্রদর্শনকে অ-ইসলামিক বলে উল্লেখ করেছেন। এর আগে সাম্প্রদায়িক হিংসায় আসানসোলের এই ইমামের নিজের ছেলের মৃত্যু হলেও, তিনি শান্তির বার্তা দিয়েছিলেন।
কিছুদিন আগে, ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, রাজ্যে মহরম কমিটির সঙ্গে পুজো কমিটিগুলির মধ্যে গোলমাল বাধানোর চক্রান্ত করা হয়েছিল৷৷
গত বছর থেকে মহাদশমীর পরদিনই পড়ছে মহরম৷ তাই এ নিয়ে গত বছর থেকেই বিতর্ক হচ্ছে৷ গতবারও রাজ্য সরকার মহরমের জন্য দশমীর বিসর্জনে বিধিনিষেধ টেনেছিল৷ সেবারও আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল বিতর্কের জল৷ কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল ও ডিভিশন বেঞ্চে খারিজ হয়ে গিয়েছিল রাজ্যের আবেদন৷ আদালতের সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছিল রাজ্যকে৷ তার পর এবারও মহরমের জন্য দশমীর বিসর্জনের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল রাজ্য সরকার৷ কিন্তু সেই নিষেধ এবারও কলকাতা হাইকোর্ট খারিজ করে দেয়৷
জেএন