স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদ। আগামীকাল বুধবার নির্বাচন। আজও নিখোঁজ আসিফ। পেরিয়ে গেছে ৯০ ঘন্টা। এখনো দেখা মিলছে না আসিফের। ৪ দিন আগে গত শুক্রবার থেকে নিখোঁজ আসিফ। পরিবার ও স্বজনদের মাঝে চাপা ক্ষোভ। মিডিয়াতে নিজের পরিচয় গোপন রাখতে বারবার অনুরোধ করছেন আসিফের ঘনিষ্ঠ স্বজনরা। এরই বা কারণ কী? কেন তারা এত ভয় পাচ্ছিলেন? কেউ বলছেন আতঙ্ক ও ভীতি। অনেকে বলছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা পরিচয় দিয়ে আসিফের পরিবার ও গুরুত্বপূর্ণ সমর্থকদের আরো ১০-১২ দিন পূর্ব থেকেই মুঠোফোনে নানা ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছিলেন কিছু লোক।
দেখিয়েছিলেন ১০-১২টি মামলার ভয়। গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে আসিফ নিখোঁজ। পরিবারের দাবি- নিখোঁজ আসিফ কোথায় আছেন তারা জানেন না। আবার নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় লোকজন জানান, আসিফের ওপর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য অনেক চাপ ছিল। ছিল নানা ধরনের হুমকি। শঙ্কা ছিল গ্রেপ্তারেরও। তাই নিজেকে রক্ষার জন্য আসিফ নিজে থেকেই আত্মগোপন করে থাকতে পারেন। বিষয়টিকে ঘিরে গোটা নির্বাচনী এলাকায় নানা ধরনের রহস্যের জাল বিস্তার করছে। আসিফ নিখোঁজের খবরে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন ইসি।
সরজমিন অনুসন্ধান ও পারিবারিক সূত্র জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের আসন্ন উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আসিফ আহমেদ। সবশেষে ৪ জন প্রার্থীর মধ্যে দুজনই ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। একজন হচ্ছেন বিএনপি থেকে পদত্যাগ করা নেতা উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া। আরেকজন আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদ। এই আসনের দুই বারের সাবেক এমপি এড. জিয়াউল হক মৃধা সরে দাঁড়ানোর আগে আসিফ খুবই স্বাচ্ছন্দ্যে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। তাঁর সমর্থকরা দিনে রাতে নির্বাচনী এলাকার মাঠ চষে বেড়িয়েছেন। প্রার্থী আসিফ ও কর্মীদের মুখে হাসি ছিল। তারা আশাবাদী ছিলেন আসিফ আহমেদই জয়লাভ করবেন। কিন্তু নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসতে থাকে ততই চাপ বাড়তে থাকে আসিফ ও তাঁর কর্মী সমর্থকদের ওপর।
চাপের পরও মাঠ ছাড়তে নারাজ আসিফ। তখন মাঠের কর্মীদের উপর বাড়তে থাকে প্রশাসনের নজরদারি। আসিফের মুঠোফোনে রাজনৈতিক দলের জেলার নেতা পরিচয় দিয়ে মামলার ভয় দেখাতে থাকেন। এক সময় আসিফের বাসার চারদিকে অবস্থান করতে থাকে অপরিচিত ২০-২৫ জন লোক। আসিফের বাস ভবন থেকে যারা বের হন তাদের স্বস্তি নেই। কারণ তাদের পিছু নেন আরেক শ্রেণির লোক। আবার আসিফের বাসায় আসলে সেখানে অবস্থানকারী অপরিচিত লোকজন তাদের পরিচয় জানতে চান। বাসায় আসা যাওয়ার সময় ওই লোকদের ছবিও তুলেন। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে আসিফের মাঠের কর্মীদের মাঝে। এরই মধ্যে গত শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে মুঠোফোনে আসিফ এই প্রতিবেদককে বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট তিন নেতা এক সাথে একই সময়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিলেন।
আবদুস সাত্তার ও মৃধাকে প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে মাত্র ২০ ঘণ্টা পর মুঠোফোনে প্রতীক পরিবর্তনের বার্তা। এর কিছু সময় পরই আবার নির্বাচন থেকে আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধার সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা আমাকে ভাবিয়ে তুলেছিল। ভাবনার বাস্তবতা আস্তে আস্তে আমার দিকে আসছে। অপরিচিত অনেক লোক দ্বারা আবার বাসা চারদিকে ঘেরাও। আমি ঠিকমতো প্রচার কাজ চালাতে পারছি না। আমার কর্মী-সমর্থকরাও ভয়ে আছে। এত ভয় থাকলে নির্বাচন দিলেন কেন? আমাকে মুঠোফোনে চুপচাপ বসে থাকতে বলা হচ্ছে। জেলা থেকে একাধিক নেতা ফোন দিচ্ছেন। কথা না শুনলে অনেক মামলার ভয়ও দেখানো হচ্ছে। আমি না থাকলে কেন্দ্রে তো ভোটারই আসবে না।
শতকরা কত ভাগ ভোট কাস্ট হবে? তাদের প্রয়োজনেই তো আমাকে নির্বাচনে রাখার কথা। আমি যদি স্বাচ্ছন্দ্যে নির্বাচন করার সুযোগ পাই তবে জয়লাভ করব। আর ওই দিন সন্ধ্যার পর থেকেই আসিফ নিখোঁজ হয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন পরিবার। আসিফের মুঠোফোনটি বাসায়। কে বা কারা আসিফকে নিয়ে গেছেন- সেটি বলতে পারছেন না আসিফের স্ত্রী ও স্বজনরা। তাদের চোখে মুখে বিষাদের চাপ। কেউ মুখ খুলে কোন কথা বলতে চাচ্ছেন না। কেউ একটু বলতে এগিয়ে আসলে অন্যরা চেপে ধরে। কথা বলিস না। বিপদে পড়বি। কী বিপদ? তা বললেও বিপদ হতে পারে। তারা সকলেই কি যেন চেপে যাচ্ছিলেন।
আসিফের ভাগিনা পরিচয় দিয়ে ইমন (২৫) নামের এক যুবক জানায়, কেন জানি কিছু লোক দফায় দফায় মামার (আসিফের) বাসা তল্লাশি করছেন। প্রচারণা করার সময় মামাকে (আসিফ) কিছু লোক হুমকি-ধামকি দিয়েছেন। ভয়ে তিনি দ্রুত চলে এসেছেন। গত শুক্রবার থেকে তো মামাকে পাওয়াই যাচ্ছে না। নির্বাচনী এলাকার সর্বত্রই আমাদের র্কর্মীরা মাঠে নামতে পারছেন না। অনেকে ভয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। এভাবে নির্বাচন হতে পারে? একজন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে কাজ করতে পারবেন না। এটা কেমন নির্বাচন? আমরা খুবই যন্ত্রণায় আছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, আমরা আগে কখনো আসিফের বাসা এভাবে পাহারা দিতে দেখিনি। যা এখন দেখছি। এখন যে চারজন প্রার্থী আছে তারমধ্যে আসিফ বেশি শক্তিশালী না। আবার তাকে ছোট করে দেখারও কিছু নেই। মনে হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাত্তারকে পাস করাতেই এই খেলা। আসিফকে কেউ নিয়ে গেছে। এই কথাটি শতভাগ সত্য না ও হতে পারে। চাপে হুমকি ধমাকিতে ভয় পেয়ে নিজে থেকেই আত্মগোপনে থাকতে পারে আসিফ।
মাঠে নেই আসিফের স্ত্রী:
নির্বাচনী মাঠে আনন্দ উচ্ছ্বাস নিয়ে স্বামীর পক্ষে দাপুটে কাজ করছিলেন আসিফের স্ত্রী মেহেরুন্নেছা। বেশ জমিয়ে তুলেছিলেন নির্বাচন। তৈরি করেছিলেন বিশাল কর্মী বাহিনী। লিফলেট বিতরণ ও পোস্টার সাঁটানোতেও এগিয়ে ছিলেন। বিভিন্ন পাড়ায় মহল্লায় মহিলা ও পুরুষদের সাথে নিয়মিত চলতো উঠান বৈঠক। আওয়ামী লীগ বিএনপি’র প্রার্থী শূন্য মাঠে স্বামীর পক্ষে কাজ করে এগিয়ে গিয়েছিলেন। আর এসবই যে কাল হবে তা জানা ছিল না মেহেরূন্নেছার। স্বামী নিখোঁজ হওয়ার ৫-৬ দিন আগ থেকেই প্রশাসনের নজরদারিতে থাকার কথা জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, আমি কর্মী বাহিনী নিয়ে পালিয়ে মাঠে কাজ করছিলাম। আমার বাড়ির সামনে সাদা পোশাকের লোকজন অবস্থান করছে। নির্বাচন হবে স্বাধীন। এমন হচ্ছে কেন। আমার কর্মীদেরও ভয় দেখানো হচ্ছে। গত শুক্রবারের পর থেকে নির্বাচনী মাঠে নেই আসিফের স্ত্রী মেহেরুন্নেছা। তিনি বলেন, প্রাণনাশের হুমকিও আসছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমরা ৭০-৮০ ভাগ ভোট পেয়ে জয়লাভ করব।
আত্মগোপনে কর্মীরা:
আসিফের পক্ষের কর্মীরা সরাইল আশুগঞ্জের প্রত্যেকটি গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছিল। ভোট পক্ষে আনার কাজে তারা সফলতার কথাও বলেছিলেন। একাধিক কর্মী বলেছেন, আসিফ নিখোঁজ হওয়ার পূর্ব থেকেই তারা চাপে ছিলেন। তারা যেখানে যেতেন সেখানে সিভিল ড্রেসে প্রশাসনের লোকজন আশেপাশে থাকতেন। বুঝতে পেরে তারা ভয় পেয়ে যান। এরপর কয়েক দিন পরই আসিফ নিখোঁজ। নির্বাচনী মাঠের প্রাণ মেহেরুন্নেছাও আসছেন না। ভয়ে আত্মগোপনে চলে গেছে আসিফের মাঠ পর্যায়ের সকল কর্মী ও সমর্থকরা। নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন জায়গায় এখন শুধু আসিফের পোষ্টার ঝুলছে। কোন কর্মী সমর্থক মাঠে নেই।
আশুগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজাদ রহমান বলেন, আবু আসিফ নিখোঁজ কিনা তার পরিবার বা কোন স্বজনদের পক্ষ থেকে থানায় এখনো অভিযোগ করেননি। বাড়ির সামনে সাদা পোশাকধারী লোকজনের অবস্থানের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।
প্রসঙ্গত: গত ১০-১২ দিন ধরে নির্বাচনের মাঠে প্রার্থী মাত্র ৩ জন। এরা হলেন দলত্যাগী নেতা উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া, জাপা’র এডভোকেট আবদুল হামিদ ও জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম জুয়েল।
স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদ। আগামীকাল বুধবার নির্বাচন। আজও নিখোঁজ আসিফ। পেরিয়ে গেছে ৯০ ঘন্টা। এখনো দেখা মিলছে না আসিফের। ৪ দিন আগে গত শুক্রবার থেকে নিখোঁজ আসিফ। পরিবার ও স্বজনদের মাঝে চাপা ক্ষোভ। মিডিয়াতে নিজের পরিচয় গোপন রাখতে বারবার অনুরোধ করছেন আসিফের ঘনিষ্ঠ স্বজনরা। এরই বা কারণ কী? কেন তারা এত ভয় পাচ্ছিলেন? কেউ বলছেন আতঙ্ক ও ভীতি। অনেকে বলছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা পরিচয় দিয়ে আসিফের পরিবার ও গুরুত্বপূর্ণ সমর্থকদের আরো ১০-১২ দিন পূর্ব থেকেই মুঠোফোনে নানা ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছিলেন কিছু লোক।
দেখিয়েছিলেন ১০-১২টি মামলার ভয়। গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে আসিফ নিখোঁজ। পরিবারের দাবি- নিখোঁজ আসিফ কোথায় আছেন তারা জানেন না। আবার নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় লোকজন জানান, আসিফের ওপর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য অনেক চাপ ছিল। ছিল নানা ধরনের হুমকি। শঙ্কা ছিল গ্রেপ্তারেরও। তাই নিজেকে রক্ষার জন্য আসিফ নিজে থেকেই আত্মগোপন করে থাকতে পারেন। বিষয়টিকে ঘিরে গোটা নির্বাচনী এলাকায় নানা ধরনের রহস্যের জাল বিস্তার করছে। আসিফ নিখোঁজের খবরে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন ইসি।
সরজমিন অনুসন্ধান ও পারিবারিক সূত্র জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের আসন্ন উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আসিফ আহমেদ। সবশেষে ৪ জন প্রার্থীর মধ্যে দুজনই ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। একজন হচ্ছেন বিএনপি থেকে পদত্যাগ করা নেতা উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া। আরেকজন আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদ। এই আসনের দুই বারের সাবেক এমপি এড. জিয়াউল হক মৃধা সরে দাঁড়ানোর আগে আসিফ খুবই স্বাচ্ছন্দ্যে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। তাঁর সমর্থকরা দিনে রাতে নির্বাচনী এলাকার মাঠ চষে বেড়িয়েছেন। প্রার্থী আসিফ ও কর্মীদের মুখে হাসি ছিল। তারা আশাবাদী ছিলেন আসিফ আহমেদই জয়লাভ করবেন। কিন্তু নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসতে থাকে ততই চাপ বাড়তে থাকে আসিফ ও তাঁর কর্মী সমর্থকদের ওপর। চাপের পরও মাঠ ছাড়তে নারাজ আসিফ।
তখন মাঠের কর্মীদের উপর বাড়তে থাকে প্রশাসনের নজরদারি। আসিফের মুঠোফোনে রাজনৈতিক দলের জেলার নেতা পরিচয় দিয়ে মামলার ভয় দেখাতে থাকেন। এক সময় আসিফের বাসার চারদিকে অবস্থান করতে থাকে অপরিচিত ২০-২৫ জন লোক। আসিফের বাস ভবন থেকে যারা বের হন তাদের স্বস্তি নেই। কারণ তাদের পিছু নেন আরেক শ্রেণির লোক। আবার আসিফের বাসায় আসলে সেখানে অবস্থানকারী অপরিচিত লোকজন তাদের পরিচয় জানতে চান। বাসায় আসা যাওয়ার সময় ওই লোকদের ছবিও তুলেন। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে আসিফের মাঠের কর্মীদের মাঝে। এরই মধ্যে গত শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে মুঠোফোনে আসিফ এই প্রতিবেদককে বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট তিন নেতা এক সাথে একই সময়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিলেন।
আবদুস সাত্তার ও মৃধাকে প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে মাত্র ২০ ঘণ্টা পর মুঠোফোনে প্রতীক পরিবর্তনের বার্তা। এর কিছু সময় পরই আবার নির্বাচন থেকে আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধার সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা আমাকে ভাবিয়ে তুলেছিল। ভাবনার বাস্তবতা আস্তে আস্তে আমার দিকে আসছে। অপরিচিত অনেক লোক দ্বারা আবার বাসা চারদিকে ঘেরাও। আমি ঠিকমতো প্রচার কাজ চালাতে পারছি না। আমার কর্মী-সমর্থকরাও ভয়ে আছে। এত ভয় থাকলে নির্বাচন দিলেন কেন? আমাকে মুঠোফোনে চুপচাপ বসে থাকতে বলা হচ্ছে। জেলা থেকে একাধিক নেতা ফোন দিচ্ছেন। কথা না শুনলে অনেক মামলার ভয়ও দেখানো হচ্ছে। আমি না থাকলে কেন্দ্রে তো ভোটারই আসবে না। শতকরা কত ভাগ ভোট কাস্ট হবে? তাদের প্রয়োজনেই তো আমাকে নির্বাচনে রাখার কথা।
আমি যদি স্বাচ্ছন্দ্যে নির্বাচন করার সুযোগ পাই তবে জয়লাভ করব। আর ওই দিন সন্ধ্যার পর থেকেই আসিফ নিখোঁজ হয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন পরিবার। আসিফের মুঠোফোনটি বাসায়। কে বা কারা আসিফকে নিয়ে গেছেন- সেটি বলতে পারছেন না আসিফের স্ত্রী ও স্বজনরা। তাদের চোখে মুখে বিষাদের চাপ। কেউ মুখ খুলে কোন কথা বলতে চাচ্ছেন না। কেউ একটু বলতে এগিয়ে আসলে অন্যরা চেপে ধরে। কথা বলিস না। বিপদে পড়বি। কী বিপদ? তা বললেও বিপদ হতে পারে। তারা সকলেই কি যেন চেপে যাচ্ছিলেন।
আসিফের ভাগিনা পরিচয় দিয়ে ইমন (২৫) নামের এক যুবক জানায়, কেন জানি কিছু লোক দফায় দফায় মামার (আসিফের) বাসা তল্লাশি করছেন। প্রচারণা করার সময় মামাকে (আসিফ) কিছু লোক হুমকি-ধামকি দিয়েছেন। ভয়ে তিনি দ্রুত চলে এসেছেন। গত শুক্রবার থেকে তো মামাকে পাওয়াই যাচ্ছে না। নির্বাচনী এলাকার সর্বত্রই আমাদের র্কর্মীরা মাঠে নামতে পারছেন না। অনেকে ভয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। এভাবে নির্বাচন হতে পারে? একজন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে কাজ করতে পারবেন না। এটা কেমন নির্বাচন? আমরা খুবই যন্ত্রণায় আছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, আমরা আগে কখনো আসিফের বাসা এভাবে পাহারা দিতে দেখিনি। যা এখন দেখছি। এখন যে চারজন প্রার্থী আছে তারমধ্যে আসিফ বেশি শক্তিশালী না। আবার তাকে ছোট করে দেখারও কিছু নেই। মনে হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাত্তারকে পাস করাতেই এই খেলা। আসিফকে কেউ নিয়ে গেছে। এই কথাটি শতভাগ সত্য না ও হতে পারে। চাপে হুমকি ধমাকিতে ভয় পেয়ে নিজে থেকেই আত্মগোপনে থাকতে পারে আসিফ।
মাঠে নেই আসিফের স্ত্রী:
নির্বাচনী মাঠে আনন্দ উচ্ছ্বাস নিয়ে স্বামীর পক্ষে দাপুটে কাজ করছিলেন আসিফের স্ত্রী মেহেরুন্নেছা। বেশ জমিয়ে তুলেছিলেন নির্বাচন। তৈরি করেছিলেন বিশাল কর্মী বাহিনী। লিফলেট বিতরণ ও পোস্টার সাঁটানোতেও এগিয়ে ছিলেন। বিভিন্ন পাড়ায় মহল্লায় মহিলা ও পুরুষদের সাথে নিয়মিত চলতো উঠান বৈঠক। আওয়ামী লীগ বিএনপি’র প্রার্থী শূন্য মাঠে স্বামীর পক্ষে কাজ করে এগিয়ে গিয়েছিলেন। আর এসবই যে কাল হবে তা জানা ছিল না মেহেরূন্নেছার। স্বামী নিখোঁজ হওয়ার ৫-৬ দিন আগ থেকেই প্রশাসনের নজরদারিতে থাকার কথা জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, আমি কর্মী বাহিনী নিয়ে পালিয়ে মাঠে কাজ করছিলাম। আমার বাড়ির সামনে সাদা পোশাকের লোকজন অবস্থান করছে। নির্বাচন হবে স্বাধীন। এমন হচ্ছে কেন। আমার কর্মীদেরও ভয় দেখানো হচ্ছে। গত শুক্রবারের পর থেকে নির্বাচনী মাঠে নেই আসিফের স্ত্রী মেহেরুন্নেছা। তিনি বলেন, প্রাণনাশের হুমকিও আসছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমরা ৭০-৮০ ভাগ ভোট পেয়ে জয়লাভ করব।
আত্মগোপনে কর্মীরা:
আসিফের পক্ষের কর্মীরা সরাইল আশুগঞ্জের প্রত্যেকটি গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছিল। ভোট পক্ষে আনার কাজে তারা সফলতার কথাও বলেছিলেন। একাধিক কর্মী বলেছেন, আসিফ নিখোঁজ হওয়ার পূর্ব থেকেই তারা চাপে ছিলেন। তারা যেখানে যেতেন সেখানে সিভিল ড্রেসে প্রশাসনের লোকজন আশেপাশে থাকতেন। বুঝতে পেরে তারা ভয় পেয়ে যান। এরপর কয়েক দিন পরই আসিফ নিখোঁজ। নির্বাচনী মাঠের প্রাণ মেহেরুন্নেছাও আসছেন না। ভয়ে আত্মগোপনে চলে গেছে আসিফের মাঠ পর্যায়ের সকল কর্মী ও সমর্থকরা। নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন জায়গায় এখন শুধু আসিফের পোষ্টার ঝুলছে। কোন কর্মী সমর্থক মাঠে নেই।
আশুগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজাদ রহমান বলেন, আবু আসিফ নিখোঁজ কিনা তার পরিবার বা কোন স্বজনদের পক্ষ থেকে থানায় এখনো অভিযোগ করেননি। বাড়ির সামনে সাদা পোশাকধারী লোকজনের অবস্থানের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।
প্রসঙ্গত: গত ১০-১২ দিন ধরে নির্বাচনের মাঠে প্রার্থী মাত্র ৩ জন। এরা হলেন দলত্যাগী নেতা উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া, জাপা’র এডভোকেট আবদুল হামিদ ও জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম জুয়েল।
জেএন