নদী-নালা, খাল-বিলের পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে প্রতি বছর প্রায় ৬১৭ লাখ ঘনমিটার মাটি খননের সক্ষমতা অর্জনের জন্য ৩৫টি ড্রেজার কিনতে চায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)। ড্রেজারগুলো কেনার জন্য তারা খরচের প্রস্তাব করেছে চার হাজার ৯৮৭ কোটি নয় লাখ টাকা। তবে ৩৫টি ড্রেজার কেনার জন্য এত খরচ প্রস্তাবকে অযৌক্তিক বলছে পরিকল্পনা কমিশন।
কয়েক দিন আগে পরিকল্পনা কমিশনে ‘ক্যাপিটাল ড্রেজিং এবং বাংলাদেশের টেকসই নদী ব্যবস্থাপনার জন্য ৩৫টি ড্রেজার ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ক্রয়’ শীর্ষক প্রকল্পটির ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়েছে।
সভায় পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, ‘প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন ক্ষমতার ড্রেজার ক্রয় বাবদ চার হাজার ৯৮৭ কোটি নয় লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। এসব ড্রেজার ব্যবহার এবং প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিস্তারিত ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) উল্লেখসহ ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় সহযোগী জলযান ও যন্ত্রপাতি ক্রয় বাবদ ৬৭২ কোটি টাকা এবং ড্রেজিং সংশ্লিষ্ট আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ক্রয় বাবদ ২০২ কোটি ৮৫ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। এসব খাতের প্রয়োজনীয়তা পর্যালোচনা করে হ্রাস পূর্বক পুনঃনির্ধারণ করতে হবে।’
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রকল্পটি বাপাউবো বাস্তবায়ন করবে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটির মোট খরচ প্রস্তাব করা হয়েছে ছয় হাজার ১৪২ কোটি ১০ লাখ টাকা। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
লধমড়হবংি২৪
টেকসই নদী ব্যবস্থাপনার জন্য ড্রেজিংয়ের মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করে ক্যাপিটাল ড্রেজিং এবং পরবর্তীকালে মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। ড্রেজিংয়ের মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের জন্য ইতোপূর্বে পরিকল্পনা কশিমন থেকে অনুরোধ করা হলেও আজ পর্যন্ত পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন/চূড়ান্ত করা হয়নি। এ বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রগতি পরবর্তী পিইসি সভায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়কে উপস্থাপন করতে বলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
প্রকল্পের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, দেশের মোট আয়তনের প্রায় নয় হাজার ৭৩৪ বর্গকিলোমিটারজুড়ে রয়েছে নদ-নদী, বিল-ঝিল ও হাওর তথা মুক্তাঞ্চল। দেশের মোট ভূমির শতকরা ৮০ ভাগ প্লাবন ভূমি এবং ২০ ভাগ পাহাড়ি/উঁচু ভূমি। জলবায়ু বিবেচনায় বাংলাদেশের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আর্দ্রতা, নাতিশীতোষ্ণ এবং শীত ও গ্রীষ্মের বিপরীতমুখী বায়ুপ্রবাহ, যা সুস্পষ্ট ঋতুগত বৈচিত্র্য। প্রকৃতির এই বিচিত্র আচরণের ফলে বর্ষায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং দেশের অধিকাংশ ভূমি প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি নদীর পাড় ভাঙনের মুখে পড়ে। বিশেষত পাহাড়ি নদীগুলো এবং হাওর এলাকায় বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই ঢল নামে। হঠাৎ তীব্র স্রোত দেখা দেয় এবং নদী ভাঙন শুরু হয়। ফলে বিপুল পরিমাণ সম্পদ হুমকির মধ্যে পড়ে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ১৮টি মাঝারি নদী স্বল্প সময়ে (পাঁচ বছর), মধ্যম মেয়াদে (১০ বছর) এবং সব বড় নদী যথা- পদ্মা, যমুনা, মেঘনা দীর্ঘমেয়াদে (১৫ বছর) প্রায় এক হাজার কিলোমিটার ড্রেজিং করার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে খাল, বিশেষত হাওর এলাকার ছোট নদী, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছোট নদী এবং বৃহৎ নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের সময় অথবা অব্যবহিত পরে ড্রেজিং করা নদী/নালার নাব্যতা রক্ষার্থে মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং করা অত্যন্ত জরুরি। ৩৫টি ড্রেজার বছরে প্রায় ৬১৭ দশমিক ৫৫ লাখ ঘনমিটার মাটি খনন করতে পারবে। ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ছোট নদী, খাল ও সাকসেসিভ মেইনটেন্যান্স ড্রেজিংয়ের ক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. জাকির হোসেন আকন্দ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখনও আমি প্রকল্পটির মিনিটস (পিইসি সভা পরবর্তী সিদ্ধান্তের কার্যবিবরণী) দেখি নাই।’
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০