গুলিস্থানের ৩০ টাকার কয়েন বিশেষ এক প্রক্রিয়ায় দাম হয় ৭০ টাকা। আর সেই ৭০ টাকার কয়েনের অবিশ্বাসস্য প্রতারণায় মূল্য দাড়ায় কখনো ৫ কোটি আবার কখনো ৭ কোটি। রাজধানীর অভিযাত কিছু এলাকায় এ সংঘদ্ধ প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে অবিশ্বাসস্য প্রতারণার শিকার হয়েছেন কিছু ব্যবসায়ী। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের অভিযোগে এ চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। আর এদের নিকট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ভুক্তভোগীদের ১১ লাখ টাকা। সাথে সেই জাদুকরী কয়েনও। বিশ্বাস
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উদঘাটনে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান জানান, সংঘবদ্ধ চক্রের আরো সদস্যকে গ্রেফতারে কাজ করছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। কয়েন আর পিলার প্রতারণার এ চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তাদের প্রতারণার শিকার হয়ে লাখ লাখ টাকা খুইয়েছেন কিছু ব্যবসায়ী। আর তাদের দেয়া সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে একটি চক্রের ৪ সদস্যকে আটক করা হয়েছে। বাকিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, রাজধানীর উত্তরায় এ চক্রের সদস্যের ফাঁদে পড়ে কয়েকজন ব্যবসায়ী। চক্রের সদস্যরা ব্যবসায়ীদের জানায় তাদের নিকট ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নাম লেখা সেই সময়ের ৪ টি কয়েন একটি স্থানে রয়েছে। সেটি কোটি টাকা দিয়ে আনতে পারলে এর একেকটি কয়েনের মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা। এ সময় ভুক্তভোগীরা বিশাল অঙ্কের টাকার লোভে
পড়ে যায়। পরে তারা সেটি দেখতে চায়। প্রতারক চক্র তাদের অন্য সদস্যদের দিয়ে সেই চারটি কয়েন নিয়েও আসে। পরে একটি রেষ্টুরেন্টে বসে দেখে। প্রতারক চক্রের সদস্যরা সেখানে ভুয়া রেডিওলোজিষ্ট এনে তাদের সামনেই পরীক্ষা করায়। ভুয়া রেডিওলোজিষ্ট ওই ব্যবসায়ীদের জানায় কয়েনগুলো ম্যাগনেটিক পাওয়ার সমৃদ্ধ। এটি বহুমূল্যবান কয়েন। কয়েনগুলো বিদেশিরা লাখ লাখ ডলার দিয়ে কিনে নেয়। প্রতারক চক্রের সদস্যরা ব্যবসায়ীদের নিকট বলে প্রাথমিকভাবে ২০ লাখ টাকা অগ্রিম দিতে।
পরবর্তীতে আরো ২৫ লাখ দিলে একটি কয়েন তারা নিয়ে নেবে। সেই কথা মোতাবেক ব্যবসায়ীরা মোট ৪৫ লাখ টাকা দেন। ওই টাকা দেয়ার পর প্রতারক চক্র একটি কয়েন দিয়ে দেয়। পরবর্তীতে ব্যবসায়ীরা সেটি পরীক্ষা করে দেখে এটি ভুয়া। এ ঘটনার পর তারা উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে। আর এ অভিযোগ নিয়েই অনুসন্ধানে নামে মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের একটি দল। পরবর্তীতে উত্তরা, সাভার, টঙ্গি এলাকায় অভিযান চালিয়ে চার প্রতারক ও তাদের নিকট থাকা ১১ লাখ টাকা উদ্ধার করে।
উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারক চক্রের সদস্যরা কিভাবে প্রতারণা করে তা সম্পর্কে অভিনব ও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে গোয়েন্দা বিভাগের এ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, চক্রের সদস্যরা আগে কয়েন না নিয়েই প্রতারণা করতো। কিন্তু বর্তমানে কয়েন নিয়েই প্রতারণা করে। প্রথমে তারা গুলস্থিান থেকে ৩০ টাকা দিয়ে পুরাতন কয়েন কেনে। এরপর সে কয়েনে আরো ৪০ টাকা খরচ করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি লেখে ভেতরে চুম্বক দিয়ে দেয়। এরপর তারা বড় ব্যবসায়ী টার্গেট করে তার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে। এরপর তারে জানায়, এ ধরনের কয়েন এক জায়গায় রয়েছে সেটি কিনে আনতে পারলে রাতারাতি কোটিপতি হওয়া যাবে।
তিনি বলেন, এ ধরনের লোভনীয় কথা শোনার পর টার্গেটকৃত ব্যবসায়ীরা সেটি দেখতে চায়। পরে তারা তাদের চক্রের অন্য সদস্যদের সেটি নিয়ে আসতে বলে। বড় কোন হোটেল বা বাসাবাড়িতে বসে সেগুলো দেখায়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও চুম্বক লেগে যাওয়া দেখে বিশ্বাস স্থাপন করে। এক পর্যায়ে ২০/৫০ লাখ টাকা দিলে কেনা যাবে এ রকম কথা বলে। ব্যবসায়ীরা টাকা দিলে প্রতারক চক্র সেই টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, কয়েক ধাপে প্রতারক চক্র এ কাজটি করে থাকে। টার্গেটকৃত ব্যক্তি যেন কোনভাবেই বুঝতে না পারে সে প্রতারণার শিকার হচ্ছে এ কারণে তারা খুবই সতর্কভাবে এ কাজ সম্পন্ন করে। কয়েন ছাড়াও ব্রিটিশ আমলের সীমানা পিলার নিয়েও তারা প্রতারণা করে।
বিশ্বাস বাড়াতে ভুয়া রেডিওলোজিষ্ট : গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা বলেন, প্রতারক চক্রের সদস্যরা টার্গেট ব্যক্তিদের বিশস ও আস্থা বাড়াতে ভূয়া রেডিওলোজিস্ট তৈরী করে। কয়েনটি ম্যাগেনেটিক পাওয়ার কি না তা বোঝোতে ভূয়া রেজিওলোস্টি নিয়ে আসে। এরপর কয়েনটিকে ম্যাগনিফাইন গ্লাস দিয়ে ছাড়াও বিভিন্নভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। পরে জানান
কয়েনটিতে ম্যাগনেটিক পাওয়ার আছে। এরপর অনেকেই তাতে আস্থা আনেন এবং টাকাও দেন।
অভিযাত এলাকায় অবস্থান : প্রতারক এ চক্রের সদস্যদের সাধারণত গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরা ও ভাটারা এলাকায় শক্ত অবস্থান। এ এলাকাগুলোতে যেহেতু বিদেশিরা বেশি থাকে সে কারণে তারা এ সকল এলাকা টার্গেট করে থাকে। এছাড়াও ধনাঢ্য ব্যক্তিরাও এসব এলাকায় থাকে।
গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, এ সকল এলাকায় ধনাঢ্য ব্যক্তিদের টার্গেট করেই কয়েন ও পিলার প্রতারণার ফাঁদ পাতে তারা। যারাই ফাঁদে পা দেয় তারাই প্রতারিত হয়।
গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার হারুনুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, কয়েন বা পিলার যে কথা বলা হয় সেটি আসলেই ভূয়া। প্রতারনার জন্যই মূলত ম্যাগনেটিক পাওয়ার বা পরমানু অস্ত্র তৈরীতে এ কয়েন লাগে এ যাবতীয় মিথ্যা কথা বলা হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, কেউ যদি এ ধরনের কথা বলে তাহলে বুঝতে হবে প্রতারণার উদ্দ্যেশে সে এ কথা বলছে। তার ব্যাপারে থানা পুলিশ বা গোয়েন্দা পুলিশে খবর দেওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।
বিএ
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০