রশি দিয়ে বাধা এক কিশোর। মানসিক প্রতিবন্ধী সে। শিশু বয়স থেকেই শারীরিক ও মানসিক ভাবে অসুস্থ। যে বয়সে তার স্কুলে যাবার কথা, অবসরে খেলাধূলা করার কথা সে বয়সেই তাকে বেছে নিতে হয়েছে বন্দী জীবন। সঠিক সময়ে সে শারীরিকভাবে পরিপূর্ন হতে পারেনি। যখন তার ৫ বছর বয়স তখন তার কিছু অস্বাভাবিক আচরনের জন্য তার পিতা মাতা তাকে রশি দিয়ে বেধে রাখতে শুরু করে। সে থেকেই চলছে তার বন্দী জীবন। এখন তার বয়স ১৫ বছর। বলছি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার গোমস্তাপুর ইউনিয়নের বালুগ্রাম দক্ষিণটোলা গ্রামের টুটুলের ছেলে সহিদের কথা। ছেলেটির জীবন অন্যদের মতো নয়। মুখে কথা সে বলতে পারেনা। তার হিস্টিরিয়া রোগ আছে। তাছাড়া তার মাথা সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নানান সমস্যা রয়েছে।
সহিদের মা আয়েশা বেগম বলেন, আমার জমজ দুটি ছেলে হয়েছিল। তার মধ্যে এই ছেলেটির বয়স যখন এক বছর তখন তার শরীরে জ¦র সহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়। ফলে তার শারীরিক ও মানসিক সমস্যা হয়। অনেকদিন পর্যন্ত সে হাটাচলা করতে পারেনি। তাকে বিভিন্ন হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা করার পরেও সুস্থ করা সম্ভব হয়নি। ছেলেটিকে নিয়ে আমাকে অনেক কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। আমার আরো দুইটি ছেলে স্বাভাবিকভাবে অন্যদের মতো জীবন যাপন করে। ছেলেটি যখন হাটতে পারা শুরু করে তখন সে সুযোগ পেলেই পালিয়ে যায়। রশি দিয়ে বেঁধে রাখার কারন হচ্ছে, পাশে খাঁড়ি, সে পানিতে ঝাপ দিতে পারে। আবার বাড়ীর পাশের রাস্তা দিয়ে সে দৌড় দিয়ে অনেক দূরে পালিয়ে যায়। তাকে খুঁজতে আমাদের অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। আমার অভাব-অনটনের এই সংসারে ব্যয়ভার খুব বেশি। স্বামী হাট-বাজারে লবনের ব্যবসা করে। তেমন আয় রোজগার হয় না। যার ফলে এই ছেলেটির উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছিনা। ৪ বছর হল তার প্রতিবন্ধী ভাতা চালু হয়েছে। তাও আবার ৩ মাস পর পর পাই। এতে তেমন কিছু হয় না। সপ্তাহে ছেলের জন্য একশত পঞ্চাশ টাকার ওষুধ ক্রয় করতে হয়। তিনি আরো বলেন দিনের শুরু হয় তাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে প্রাকৃতিক কাজকর্ম ও খাওয়া-দাওয়া করিয়ে রশি দিয়ে বেঁধে সাংসারিক কাজ শুরু করি। তারপরে দুপুরে আবার তাকে খেতে দি। সে অন্যদের মতো স্বাভাবিকভাবে খাওয়া-দাওয়া করতে পারে। কিন্তু খাইয়ে দিতে হয়। বিকেলে গোসল করায়, তারপর সন্ধ্যায় ঘুমের ওষুধ খাওয়ায়। তার সাথে অন্য ওষুধ খাইয়ে তাকে ঘুমিয়ে দি।
প্রতিবেশী আব্দুল মতিন বলেন, ওদের ঘরবাড়ি অনেক ভাঙাচুরা। সহিদের বাবা একজন ফেরিওয়ালা লবণ ব্যবসায়ী। সামান্য টাকা আয় করে তাও আবার ছেলের ওষুধ ও পরিবারের খাওয়া-দাওয়াতেই শেষ হয়ে যায়। উন্নত চিকিৎসা কিভাবে করাবে ? পরিবারের উপার্জনকারী ব্যক্তি হচ্ছে সে একাই। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন এই অসহায় পরিবারটির দিকে দেখে কিছু আর্থিক সহায়তা করলে হয়তো বা শহীদের জীবন স্বাভাবিকে ফিরে আসবে।
ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন বলেন, ছেলেটির বিষয়ে আমার তেমন কিছু জানা নেই। আর ছেলেটি যদি অসুস্থ থাকে এবং টাকার জন্য চিকিৎসা করাতে না পারে , তাহলে আমি তার খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এস/আর
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০