ওমর ফারুক, রাজশাহী:
হাইকোর্টের নিদের্শনা অমান্য করে রাজশাহীতে যত্রতত্র যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার চলছেই। হাসপাতালসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে হর্ন না বাজানোর নির্দেশনা থাকলেও মানছেন না অনেক পরিবহন চালক। তারা এসব কিছুর তোয়াক্কা না করেই হাইড্রোলিক হর্ন বাজিয়ে শব্দ দূষণের সৃষ্টি করছে। নগরজুড়েই রয়েছে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার। অথচ ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের নির্দেশ দেওয়ার পর প্রায় পৌণে দুই বছর হতে চললেও তা
বাস্তবায়িত হয়নি। এখনো উচ্চ শব্দের হর্ন বাজিয়ে ছুটছে যানবাহন। হর্ন বাজানোর ক্ষেত্রেও মানা হচ্ছে না এলাকাভিত্তিক নির্দেশিকা। এর বিরুদ্ধে মাঝে মধ্যে মামলা দিয়ে দায় সারছে সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক পুলিশ। তবে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) অনির্বান চাকমার নজরে বিষয়টি নিয়ে আসলে তিনি তাৎক্ষণিক ট্রাফিক বিভাগে দায়িত্ব পালনকারী সার্জেন্টদের হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহৃত যানবাহনগুলো ধরে হর্নগুলো খুলে মামলা দেওয়ার নির্দেশ দেন। এক্ষেত্রে কোন ধরণের নমনিয়তা না করার নির্দেশ দেন তিনি। হাইকোর্টের রায়ে হাইড্রোলিক হর্ন আমদানি ও বিক্রি বন্ধের
নির্দেশ থাকলেও তা বন্ধ হয়নি। নগরীর অনেক দোকানেই নিষিদ্ধ এ হাইড্রোলিক হর্ন বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে ট্রাক, বাস, মিনি ট্রাক, থ্রি-হুইলার, কাভার্ড ভ্যান এমনকি মোটরসাইকেলেও হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করা হচ্ছে। নগরের রাস্তায় কিছু বখাটে যুবক হাইড্রোলিক হর্ন বাজিয়ে উচ্চ শব্দে রাস্তায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে চলে যায়। তাদের এমন কর্মকাণ্ডে রাস্তায় চলাচলকারী অন্য পথচারী ও যানবাহন চালকরা ভীতির মধ্যে পড়েন। অথচ তারা আইনের আওতায় আসছে না। হাইড্রোলিক হর্ন হচ্ছে উচ্চ মাত্রার শব্দ সৃষ্টিকারী বিশেষ হর্ন। আমেরিকান স্পিচ অ্যান্ড হেয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন (আশা) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার
(ডব্লিউএইচও) মতে, মানুষের জন্য শ্রবণযোগ্য শব্দের সহনীয় মাত্রা সর্বোচ্চ ৪০ ডেসিবেল। কিন্তু হাইড্রোলিক হর্ন শব্দ ছড়ায় ১২০ ডেসিবেল পর্যন্ত। এর স্থিতি ৯ সেকেন্ডের বেশি হলে ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। স্বাস্থ্য ও শ্রবণের জন্য ক্ষতিকর বলে উচ্চ আদালতে করা এক রিটের প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ২৩ আগস্ট প্রথম রাজধানী ঢাকায় হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন আদালত। হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে রিট করেছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। আবেদন শুনানির পরে ৫ নভেম্বর সারাদেশে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার বন্ধে নির্দেশ
দেন হাইকোর্ট এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। গত সোমবার দুপুরে সরজমিনে দেখা যায়, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ির হর্নের শব্দ তো আছেই, মাঝে মাঝে হাইড্রোলিক হর্ন বাজিয়ে চলছে বিভিন্ন পরিবহনের বাস ও ট্রাক। শুধু রাজশাহী মহানগরই নয় আশেপাশের উপজেলার রাস্তাঘাটেও হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করা হচ্ছে যানবাহনে। এ নিয়ে কোন চালকই আদালতের নির্দেশ মানছে না। আরএমপির ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শুধু মাত্র ২০১৯ সালের জানুয়ারী থেকে আগস্ট পর্যন্ত হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারের জন্য প্রায় দুই হাজারের অধিক মামলা
দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত মামলা দেওয়া হয়। পুলিশের নজর ফাঁকি দিয়েও অনেক যানবাহন চলে যায়। সচেতনতার অভাবে নিষিদ্ধ হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার চলছে। এক্ষেত্রে অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় মোটরসাইকেলেও এখন হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করা হচ্ছে। হাইড্রোলিক হর্নের বিকট শব্দ পথচারী ও স্কুল-কলেজ এবং অফিস-আদালতগামী মানুষের কান ঝালাফালা হয়ে যায়। এই শব্দের পরিমাণ বেশি সময় ধরে স্থায়ী হলে কানের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সংস্থা জানিয়েছে। এ বিষয়ে আরএমপির ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার অনির্বান চাকমা বলেন, ২০১৯ সালেই এ পর্যন্ত হাইড্রোলিক
হর্ন ব্যবহারের দায়ে আনুমাকি দুই হাজার মামলা দেওয়া হয়েছে। মামলা এখনো চলমান রয়েছে। তবে বাস-ট্রাকে সার্জেন্টরা মামলা দিতে গেলে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়। তারপরও আইন প্রয়োগ করা হয়। বিষয়টি জানার পর হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারকারী সকল যানবাহন ধরে কর্তব্যরত সার্জেন্টকে সেই যানবাহন থেকে হর্ন খুলে নিয়ে মামলা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে ইজিবাইক ও রিক্সার ক্ষেত্রে তাদের খরচে শুধু খুলে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মামলা
দিয়ে এটি কমানো সম্ভব হচ্ছে না। কারণে অনেক আগেই আইনের কারণে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারকারীকে মাত্র ১০০ টাকার জরিমানার বিধান রয়েছে। এ কারণে চালকরা টাকার তোয়াক্কা না করেই হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করছে। এ জন্য সকলকে আইন মানতে হবে। সচেতনতাই এ থেকে পরিত্রান দিতে পারে। মামলা দেওয়া যানবাহন থেকে হাইড্রোলিক হর্ন খুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে কোন শিথিলতা দেখানো হবে না।
আর/এস
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- k24ghonta@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০