ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ নামে একটি লঞ্চে গভীর রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪০ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় দগ্ধ হয়েছেন আরও শতাধিক। আহতদের বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আহতদের মধ্যে গুরুতর সাতজনকে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে পাঠানো হয়েছে।
লঞ্চের যাত্রীরা জানান, রাত ৩টার দিকে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর নলছিটির সরই এলাকায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণে লঞ্চের পিছনের অংশে আগুন লেগে যায়। মুহূর্তে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো লঞ্চে। পরে লঞ্চটি সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দিয়াকুল গ্রাম এলাকায় নদীর চর ঘেঁষে থামলে সেখানে যাত্রীরা কুলে উঠতে পারলেও লঞ্চের মধ্যে দগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে ২৮ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়। এসময় অনেক যাত্রী প্রাণ বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে বরিশাল ও ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট দুই ঘণ্টা চেষ্টা করে সকাল সাতটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এঘটনায় নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
লঞ্চের বেঁচে যাওয়া যাত্রী বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার সনিয়া বেগম আগুন দেখে তার ১১ মাসের শিশুপুত্র জুবায়েরকে নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেন। সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হলেও তার মা রেখা বেগম ( ৪০) ও ছেলে জুনায়েদ (৫) এখনও নিখোঁজ রয়েছে।
লঞ্চের বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা জানান, ‘রাতে ঢাকা থেকে বরগুনা ফিরছিলাম। লঞ্চটি ঝালকাঠি এলাকায় পৌঁছালে ইঞ্জিনরুমে আগুন লেগে যায়। এরপর সে আগুন পুরো লঞ্চে ছড়িয়ে পড়ে। অসংখ্য মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়। প্রাণে বাঁচতে নদীতে ঝাঁপ দেন অনেক যাত্রী।’
এ ঘটনায় আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ২৮ জনের দেহ ও সুগন্ধা নদী থেকে আটজনসহ মোট ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৫ জনের মরদেহ শনাক্ত হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, দাফন-কাফনের জন্য নিহত প্রত্যেক পরিবারকে প্রাথমিকভাবে ২৫ হাজার টাকা করে দিবে জেলা প্রশাসন। উদ্ধার করা মরদেহগুলো ঝালকাঠি সিটি মিনিপার্কে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত করে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, একটি লঞ্চে আগুন লেগে পুরো লঞ্চ ভস্মিভূত হবার পিছনে কোন রহস্য থাকতে পারে। নয়তো এমন ঘটনা আগে বাংলাদেশে ঘটেনি। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে একজন যুগ্মসচিবকে প্রধান করে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিহত প্রত্যেক পরিবারকে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে ১ লাখ ৫০ টাকা করে প্রদান করা হবে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে সে অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসময় ডিআইজি মো. আক্তারুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সরদার মো. শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনিরসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিএ/
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০