খবর২৪ঘন্টা নিউজ ডেস্ক: করোনায় মৃতদের শেষ বিদায় জানাতে দেশব্যাপী চলছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের দাফন সেবা। এরই মধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে পাঁচ শতাধিক মরদেহ দাফন বা সৎকার করেছেন কোয়ান্টাম দাফন কার্যক্রম স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীরা।
গত ৭ এপ্রিল থেকে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা দেশের যেকোনো প্রান্তের জন্যে প্রস্তুত রয়েছেন কোয়ান্টামের প্রায় পাঁচ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক। করোনা আতঙ্কে পরিবারের সদস্যরা যখন লাশ দাফন কাজে কাছ থেকে অংশ নিতে চাইছেন না; তখনই এগিয়ে আসে কোয়ান্টামের স্বেচ্ছাসেবক দল। মূলত জাতির এই দুর্যোগে মানবিক মূল্যবোধ নিয়েই এগিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটির স্বেচ্ছাসেবক দল।
কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের একটি সূত্র জানায়, করোনার এই সময়ে সারাদেশকে ২১টি জোনে ভাগ করে চলছে আমাদের দাফন সেবা। রাজধানী ছাড়াও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, যশোর, বগুড়া, রংপুরসহ দেশের যেকোনো প্রান্তের জন্যে প্রস্তুত রয়েছে স্বেচ্ছাসেবক দল। এমনও হয়, ঢাকা থেকে সবকিছু সম্পন্ন করে দিলে নির্ধারিত জেলার স্বেচ্ছাসেবক দল বাকি কাজ সম্পন্ন করে থাকে। এভাবেই সারা দেশেই সুসংগঠিতভাবে সেবাদানে নিয়োজিত কোয়ান্টামের স্বেচ্ছাসেবক দল। সারাদেশে এ পর্যন্ত ৫১০ জন মরদেহ দাফন করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৩৫৭ জন, বাকি ১৫৩ জনকে অন্যান্য জেলায়।
গত ৭ এপ্রিল থেকে দাফন কার্যক্রম শুরু করি। ধর্মীয় বিধান মেনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষণ অনুযায়ী দাফন সম্পন্ন করে যাচ্ছে কোয়ন্টাম মুসলিম ছাড়াও সনাতন ধর্মালম্বীদের জন্যে ও রয়েছে দক্ষ দল। এছাড়া মহিলাদের দাফনে সহযোগিতা করছেন ২০ জনের একটি মহিলা দল। শুরু থেকেই ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বীর মুক্তিযোদ্ধা, সংসদ সদস্য, পুলিশ বাহিনী, আনসার সদস্য, সচিব, সাংবাদিক, ডাক্তার, ব্যাংকারসহ সাধারণ মানুষকে দাফন করেছে কোয়ান্টাম।
জানা যায়, একটি দাফন প্রক্রিয়ায় প্রায় ৩০ রকমের উপকরণ ব্যবহার করে কোয়ান্টাম। দাফন কাজে সুরক্ষার জন্যে ব্যবহার করা হয় অ্যালকোহলসহ কয়েক ধরনের জীবাণুনাশক। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন অনুযায়ী এ দাফন কার্যক্রম চলছে। কার্যক্রমের পুরো প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত পিপিই, মাস্ক, সেফটি গ্লাস, ফেসশিল্ড, সার্জিক্যাল হ্যান্ডগ্লাভস, হেভি গ্লাভস, নেককভার, মরদেহের কাফনের কাপড়, মরদেহ বহনের জন্যে বিশেষ বডি ব্যাগ সহ সুরক্ষার জন্যে কয়েক ধরনের জীবাণুনাশক- পুরোটাই কোয়ান্টামের স্ব-অর্থায়নে স্বেচ্ছাসেবায় পরিচালিত হচ্ছে।
কোয়ান্টামের স্বেচ্ছাসেবক দলের কেউ ব্যবসায়ী, কেউ চাকরিজীবী, কেউ অ্যাডভোকেট কেউবা শিক্ষার্থী। দিনে বা রাতে যেকোনো সময়ে ডাক পড়লেই তারা হাজির হয়ে যান হাসপাতাল বা মৃতের বাসা বাড়িতে। যথাযথ ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী মমতা নিয়ে আন্তরিকতার সাথে মৃতের আপনজন হয়ে শেষ বিদায় জানান স্বেচ্ছাসেবক দল।
স্বেচ্ছাসেবকদের সুরক্ষার ব্যাপারে বিশেষ নিরাপত্তা রক্ষায় সচেতন থাকে দলটি। একটি দাফন বা সৎকার শেষে নিরাপত্তার স্বার্থে কর্মীদের পরিধেয় পোশাকসহ অন্যান্য সরঞ্জাম কবরস্থানে বা শ্মশানে তাৎক্ষণিক পুড়িয়ে ফেলা হয়।
কোয়ান্টাম দাফন কার্যক্রমের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ছালেহ আহমেদ বলেন, কবরস্থ করার পর মৃতের জন্যে আন্তরিক প্রার্থনা করি আমরা। একজন মানুষ মারা গেলে পরিবারের মানুষ কাছে থাকবে না, আত্মীয়রা জানাজায় আসবে না এটা আমাদের দেশের সংস্কৃতি নয়। করোনার এই সময়ে স্বজনহীন সেই সব মৃতকে শেষ সম্মান জানানোর মানবিক দায়িত্ববোধ থেকেই দিন-রাতের যেকোনো সময়ে এ সেবায় নিয়োজিত আমরা। সকলের দোয়া, সহযোগিতা নিয়ে শেষ পর্যন্ত সেবা দিতে প্রস্তুত আমাদের স্বেচ্ছাসেবক দল।
খবর২৪ঘন্টা/নই
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০