খবর২৪ঘণ্টা, ডেস্ক: সরকার ঘোষিত মজুরি বাস্তবায়নের দাবিতে সাভারে বিক্ষোভের সময় পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে একজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারি) সকাল থেকে কয়েকটি স্থানে পুলিশ ও শ্রমিকদের পৃথক ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনায় পুলিশসহ আরও প্রায় ২৫ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, মঙ্গলবার সাভারের কয়েকটি স্পটে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা। সকালে হেমায়েতপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় কয়েকজন আহত হন। পরে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে উড়াইল এলাকার আনলিমা গার্মেন্টসের সামনে বিক্ষোভের সময় পুলিশের গুলিতে আহত হন সুমন মিয়া (২২)। তিনি ওই গার্মেন্টসেরই একজন কর্মী। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সহকর্মীরা তাকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে সকালে পৃথক ঘটনায় দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলেও জানান তারা।
সাভার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপস্থিত পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আমজাদুল হক বলেন, ‘সুমন মিয়াকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পরই চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেছেন। তার বুক গুলি লেগেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।’
এদিকে সাভার থানার পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য নিহত সুমন মিয়ার লাশ রাজধানীর সোহওরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেছে বলেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে ঢাকা-১ আশুলিয়া শিল্প পুলিশের পরিচালক সানা সামিনুর রহমান বলেন, ‘বিকালের ঘটনায় একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে শুনেছি।’
এদিকে এনাম মেডিক্যালের অপারেশন থিয়েটার (ওটি) এর ইনচার্জ ড. নাসির উদ্দিন জানান, আঁখি বেগম ও রুবিনা বেগম নামে দুজন গুলিবিদ্ধ নারী হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
আঁখি বেগম জানান, তিনি গার্মেন্টস কর্মী নন। হেমায়েতপুরে নিজের দুই তলা বাসায় থেকে সংঘর্ষের ঘটনা দেখছিলেন। সেসময় ঘরের মধ্যে থাকা অবস্থাতেই বাইরে থেকে একটি গুলি তার পেটে গিয়ে লাগে বলে তিনি জানিয়েছেন।
রুবিনা বেগম বলেন, ‘আমি স্টান্ডার্ড গ্রুপের যমুনা গার্মেন্টসে কাজ করি। বিক্ষোভের পর গুলিবিদ্ধ হই।’
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সাভারের হেমায়েতপুর এলাকায় প্রথম সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জ, টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এনাম মেডিক্যালে ভর্তি দুই নারী এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ বলে হাসপাতালে অবস্থান করা শ্রমিকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিক্ষোভের ব্যাপারে কারখানার শ্রমিক ও পুলিশ সূত্র জানায়, সরকার ঘোষিত নতুন মজুরি কাঠামো পুরোপুরি বাস্তবায়নের জন্য শ্রমিকরা বেশ কয়েকবার মালিকপক্ষকে জানিয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষের কোনও সাড়া না পাওয়ায় গত দুদিন থেকেই আন্দোলনে নেমেছে শ্রমিকরা। মঙ্গলবার সকালে কাজে যোগ না দিয়ে কারখানার মূল ফটকের সামনে স্থানীয় হেমায়েতপুর-ট্যানারি সড়কে অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে কয়েকটি গার্মেন্টসের শ্রমিকরা। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরাতে ব্যর্থ হলে লাঠিচার্জ শুরু করে। এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশসহ কমপক্ষে ২৫ শ্রমিক আহত হয়েছেন।
এদিকে আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকায় প্রায় তিনটি কারখানার সামনে স্থানীয় সড়কে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ তাদেরও ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়।
এই প্রসঙ্গে ঢাকা-১ আশুলিয়া শিল্প পুলিশের পরিচালক সানা সামিনুর রহমান বলেন, ‘শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করলে তাদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকলে লাঠিচার্জ, টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।’ এছাড়াও যেকোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তবে শ্রমিকদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কয়েকটি গার্মেন্টসের কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, এটি ভুল বোঝাবুঝি। কোনও মহল শ্রমিকদের ভুল বুঝিয়েছে। তারা আরও জানান, বেতন হলেই শ্রমিকরা বুঝতে পারবেন যে সরকারের ঘোষিত মজুরি বাস্তবায়িত হয়েছে।
খবর ২৪ঘণ্টা/ জেএন
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০