শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি: শেরপুর উপজেলার ইটালী মধ্যপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী ফরিদুল ইসলাম (৪৮) হত্যার ঘটনায় জড়িত ৫ জন আসামীকে ১২ জানুয়ারী মঙ্গলবার দিবাগত রাতে গ্রেফতার করেছে শেরপুর থানা পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধ এবং টাকা পয়সা লেনদেনের দেনা-পাওনাকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকান্ডটি সংঘটিত করেছে আসামীরা।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন ভবানীপুর ইউনিয়নের হলদিবাড়ী আটাপাড়া গ্রামের মৃত মান্নান মন্ডলের ছেলে মোঃ ওমর ফারুক (৩৫), ইটালী মধ্যপাড়া গ্রামের দুলাল হোসেনের ছেলে মোঃ ফারুক আহম্মেদ (৩০), মৃত রসুল প্রাং এর ছেলে আঃ রাজ্জাক (৫৮), মৃত কেরামত আলীর ছেলে মোঃ জিয়াউর রহমান জিয়া (৪০) ও তার স্ত্রী মোছাঃ শাপলা খাতুন (৩৫)।
গত ৫ জানুয়ারী সন্ধ্যা ৭টার সময় নিজ বাড়ীতে নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডের শিকার হন ইটালী মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত কেরামত আলীর পুত্র রড ও সিমেন্ট ব্যবসায়ী ফরিদুল ইসলাম (৪৮)। ফরিদুল ইসলাম ব্যবসার পাশাপাশি একজন কৃষকও। সে স্থানীয় ছোনকা বাজারের একজন সিমেন্ট ব্যবসায়ী। মায়ের জমি-জমা নিয়ে ফরিদুলের অন্যান্য ভাইদের সাথে দ্ব›দ্ব ছিল। ফরিদুল কৌশলে তার মায়ের এবং বোনদের নিকট থেকে বসতবাড়ীর এবং ছোনকা বাজারের পাশে মূল্যবান জায়গা রেজিস্ট্রি করে নেন।
ফলে ভাইদের সাথে তার চরম শত্রুতা শুরু হয়। অন্যদিকে ফরিদুল তার সৎ শ্যালক ওমর ফারুকের নিকট থেকে ৩ লক্ষ টাকার জমি বন্ধক নিয়েছিল। এ টাকা ফেরৎ দেওয়া নিয়ে তার সাথে শত্রুতা শুরু হয়। ফলে ভিকটিমের ভাই এবং সৎ শ্যালক মিলে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। গত ঈদ-উল আযহার পর ফরিদুল তার একমাত্র পুত্র ইয়ানুর রহমান শাওন (১০) কে পড়াশোনার জন্য ঢাকার সাভারে তার মেয়ের বাড়ীতে রাখেন। তিনি স্ত্রীসহ নিজবাড়ীতে বসবাস করতেন। তার স্ত্রী গত ২৮ ডিসেম্বর তার
ননদকে ডাক্তার দেখানোর জন্য ঢাকায় যান এবং মেয়ের বাড়ীতে উঠেন। বাড়ীতে কেউ না থাকার সুবাদে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উপযুক্ত সময় হিসেবে বেছে নেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৫ জানুয়ারী সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ফারুক আহম্মেদ ধারালো চাকুসহ তার চাচীর বাড়ীর ভিতরে অবস্থিত ল্যাট্রিনের উপর দিয়ে ভিকটিমের বাসায় প্রবেশ করে অন্ধকার স্থানে ওৎ পেতে থাকে। ফরিদুল সারাদিন মাঠে কৃষি জমিতে সেচের কাজ করে সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরলে বাড়ীর ভিতরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ফারুক আহম্মেদ তাকে ধারালো চাকু দিয়ে স্বজোরে মাথার পিছনে দুইটি আঘাত করে। অন্যদিকে হত্যার সাথে জড়িত অন্যরা দরজা দিয়ে প্রবেশ করে ভিকটিম ফরিদুলকে ধরে ফেলে এবং বটি ও চাকু দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
প্রথম দিকে এ হত্যার কোন ক্লু-ই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। বগুড়ার পুলিশ সুপার মোঃ আলী আশরাফ ভুঞা বিপিএম বারের দিক-নির্দেশনায় শেরপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ গাজিউর রহমান এর নেতৃত্বে শেরপুর থানার ওসি, মোঃ শহিদুল ইসলাম, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোঃ আবুল কালাম আজাদ ও মামলার তদন্তকারী এসআই মোঃ সাচ্চু বিশ্বাসের বিজ্ঞান ভিত্তিক ও বুদ্ধিদীপ্ত পুলিশি তদন্তে ১ সপ্তাহের ব্যবধানে ফরিদুল হত্যার মূল রহস্য উন্মোচন করেন শেরপুর থানা পুলিশ।
শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শহিদুল ইসলাম জানান, হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন ওমর ফারুককে গোয়েন্দা
নজরদারীতে রেখে ১২ জানুয়ারী সকালে মানিকগঞ্জ থেকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে হত্যাকান্ডের সাথে তাদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ওইদিন দিবাগত রাতে উল্লিখিত আসামীদের তাদের নিজ নিজ বাড়ী থেকে গ্রেফতার করা হয়। আসামীরা প্রত্যেকে ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। ২ জন আসামীকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের জন্য এবং বাঁকি ০৩ জন আসামীকে ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদনসহ বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
জেএন
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০