শেরপুর (বগুড়া)প্রতিনিধি:বেলাল হোসেন। বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের সিমলা সাতবাড়িয়া গ্রামে তার বাড়ি। বয়স ৬৫ বছর। এ বয়সেও সংসারের ঘানি টানতে টানতে অনেকটা কাহিল হয়ে পড়েছেন তিনি। কিন্তু এ বয়সেও স্ত্রী বা পরিবারের প্রতি ভালবাসা এবং দায়িত্ব পালন-ই যেন তার একমাত্র ব্রত। যদিও পরিবারের প্রতি তার এমন ভালবাসা এবং দায়িত্ববোধ দেখানোই এখন তার গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পরিবারের ভরণপোষণ মেটাতে এ বয়সেও নিজ এলাকা ছেড়ে মানিকগঞ্জ জেলায় গিয়ে দিনমজুরের কাজ করে বেলাল। করোনাকালীন সময়ে কাজ কমে যাওয়ায় অনেকটা অলস সময় কাটছিল তার। মনস্থির করলেন এই লকডাউন সময়ে একটু পরিবারের সাথে সময় কাটানোর। যেই কথা সেই কাজ।
গত ১৫ জুন মানিকগঞ্জ থেকে রওনা দেন বেলাল। কিন্তু বাড়িতে এসেই তার জ্বর শুরু হয়। জ্বরের কারণে স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন গতকাল থেকে তাকে এড়িয়ে চলছে। করোনা হয়েছে সন্দেহে করে (১৭ জুন) বুধবার বিকেল ৫ টার দিকে বেলালকে ঘর থেকে বের করে দেয় তার স্ত্রী। স্ত্রীর এমন আচরণে ব্যথিত বেলাল আশ্রয় নেয় পাশের বাড়ির আঙিনায়। সেখানেও বিধিবাম। আশপাশের লোকজন তাকে তাদের বাড়ির ত্রি-সীমানায় না যেতে কড়া ভাষায় নিষেধ করে দিয়েছে। শরীরে হাল্কা জ্বর থাকা সত্তে¡ও কোন স্থানে আশ্রয় না পেয়ে অবিরাম বৃষ্টিতে ভিজতে হচ্ছে তাকে।
অতঃপর স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন ঘটনাটি শেরপুর থানায় অবহিত করেন। শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবীর সাথে সাথে ঘটনাটি শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী সেখকে জানান। এমন অমানবিক ঘটনার কথা শুনে এক মুহুর্ত থেমে থাকেননি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। সাথে সাথে থানা থেকে অফিসার ফোর্স প্রেরণ করতে বলেন তিনি। ফোন করেন শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও। মুষলধারে চলা বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঘটনাস্থলে হাজির হন শেরপুর থানা পুলিশ। উপস্থিত হয়ে দেখতে পান, জ্বরে আক্রান্ত বেলাল হোসেন বৃষ্টিতে ভিজছে।
বৃষ্টিতে ভেজার কারণ জানতে চাইলে বেলাল হোসেন জানায়, শরীরে জ্বর থাকায় স্ত্রী তাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। অপরদিকে পার্শ্ববর্তী বাড়ির সেডে গেলে তারাও তাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। অনেকটা উপায়হীন হয়েই বৃষ্টিতে ভিজতে হচ্ছে তাকে। শেরপুর থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে শেরপুর হাসপাতালে নিয়ে আসে। বর্তমানে বেলাল শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্ত ডা. মো. আব্দুল কাদের বলেন, উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বেলালকে তার এলাকা থেকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তার চিকিৎসা চলছে। করোনা ভাইরাসের স্যাম্পল নেয়া হয়েছে। রিপোর্ট আসলে বোঝা যাবে যে সে করোনা পজিটিভ কিনা।
এ প্রসঙ্গে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াকত আলী শেখ বলেন, ব্যাপারটি সত্যিই অমানবিক। ঘটনাটি শোনার সাথে সাথে শেরপুর থানা পুলিশের সহযোগিতায় ভিকটিমকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এএইচআর
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০