দীর্ঘ ৪৪ বছর যাবৎ সংস্কার হয়নি রাজশাহীর বাগমারার কাচারী কোয়ালীপাড়া ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া পাউবোর (পানি উন্নয়ন বোর্ডের) ওয়াবদার বাঁধ। ফলে পীরগঞ্জ বাজার থেকে কালিকাপুর হয়ে মানসিংহপুর পর্যন্ত ওই বাঁধের ৪ কিলোমিটার এলাকার গ্রামগুলো নিশ্চিহ্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ কারণে বাঁধ সংলগ্ন এলাকার প্রায় অর্ধশত গ্রামের মানুষকে বর্ষা মওসুমে বন্যার আশঙ্কায় আতঙ্কে থাকতে হয়।
তাছাড়া ওই বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপকভাবে ভেঙে যাওয়ায় এলাকার মানুষকে এখন অত্যন্ত সরু বাঁধের ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। সরজমিনে এলাকায় গিয়ে জানা যায়, ফর্কিন্নী ও বারনই নদীর দুই পাড়ের গ্রামগুলোকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করার লক্ষ্যে বিগত ১৯৭৭ সালের দিকে নাটোর পাউবোর (পানি উন্নয়ন বোর্ডের) অধীনে নাটোরের নলডাঙ্গা থেকে বাগমারা উপজেলা সদর ভবানীগঞ্জ হয়ে নওগাঁর মান্দা উপজেলার জোতবাজার ত্রিমোহনী পর্যন্ত ওয়াবদা বাঁধ নির্মাণ করা হয়।
বাঁধটি নির্মাণের ফলে একদিকে যেমন ফর্কিন্নী ও বারনই নদীর দুই পাশের গ্রামগুলো বন্যার কবল থেকে রক্ষা পায়, তেমনি এলাকাবাসীর যোগাযোগেরও সুব্যবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ৪৪ বছর যাবৎ সংস্কার না হওয়ায় বাঁধটির কাচারী কোয়ালীপাড়া ইউনিয়নের পীরগঞ্জ বাজার থেকে কালিকাপুর হয়ে মানসিংহপুর পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার এলাকা ব্যাপকভাবে ভেঙে গিয়ে এখন প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। ফলে কাঁচারী কোয়ালীপাড়া
ইউনিয়নের কালিকাপুর, লাউবাড়িয়া, জাঙ্গালপাড়া, মানসিংহপুর, মোহনপুর, বাসুপাড়া ইউনিয়নের জোতিনগঞ্জ, বীরকয়া, নরদাশ ইউনিয়নের হালিখালি, বাঁধেরহাট, নানসোর ও সোনাডাঙ্গা ইউনিয়নের মীরপুর, জামালপুর ও কুমারপুরসহ বাঁধ সংলগ্ন এলাকার প্রায় অর্ধশত গ্রাম এখন হুমকির সম্মূখিন হয়ে পড়েছে। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পীরগঞ্জ বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, পীরগঞ্জ বাজার থেকে কালিকাপুর হয়ে মানসিংহপুর পর্যন্ত বাঁধটি সংস্কারের জন্য সম্প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগের সংস্কার ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পরপর দুইবার ৮ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়।
কিন্তু স্থানীয় এক ইউপি সদস্য বাঁধটি সংস্কারের জন্য মাটি না ফেলেই ওই বাঁধের দুই ধারে হালচাষ করে প্রকল্পের কাজ শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে মর্মে প্রকল্পের পুরো টাকাই আত্নসাৎ করেছেন। বীরকয়া বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফাতুল্যাহ প্রামানিক, কালিকাপুর গ্রামের বাসিন্দা শাহাদৎ হোসেন, ব্যবসায়ী বজলুর রশিদ, মৎস্যচাষি আয়ের আলী ও মামুনুর রশিদ বলেন, এ বাঁধ দিয়ে এক সময় নিয়মিত এ অঞ্চলের মানুষ উপজেলা সদর ভবানীগঞ্জ হয়ে রাজশাহী ও মান্দার প্রসাদপুর হয়ে নওগাঁ জেলা সদরের সঙ্গে মিশুক, সিএনজি ও মোটরসাইকেল যোগে চলাচল করতো।
কিন্তু সম্প্রতি বৃষ্টি ও বন্যার পানির চাপে পীরগঞ্জ বাজার থেকে কালিকাপুর হয়ে মানসিংহপুর পর্যন্ত বাঁধটি ব্যাপকভাবে ভেঙে যাওয়ায় এ বাঁধ দিয়ে বর্তমানে চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে মাত্র চার কিলোমিটার রাস্তার বিপরীতে প্রায় ১৫/২০ কিলোমিটার দূরত্বের পথ অতিক্রম করে এলাকার জনগণকে রাজশাহী ও নওগাঁ জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন সময়ের অপচয় হচ্ছে অন্যদিকে এলাকার লোকজন অর্থনৈতিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পীরগঞ্জ টেকনিক্যাল এ্যান্ড বিএম কলেজের ভারপ্রাপ্ত
অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ লিটন অভিযোগ করে বলেন, যে কোনো নির্বাচন আসলেই এমপি, চেয়ারম্যান ও মেম্বর প্রার্থীরা জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি দেন- নির্বাচিত হলে বাঁধটি সংস্কারসহ পাকাকরণ করে দেয়া হবে। কিন্তু নির্বাচন শেষ হবার পর নেতারা এসব প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে যান। ফলে তাদের প্রতিশ্রুতি শুধু জনসভার বক্তৃতায় শোভা পায়। কিন্তু একটিও বাস্তবায়ন হয় না। কাচারী কোয়ালীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আয়েন উদ্দিন বলেন, গত ইউপি নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত
হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৮-১০ বার এ বাঁধটি সংস্কার ও পাকাকরণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। তাছাড়া প্রতি বছর বন্যার সময় ফর্কিন্নী নদীর পানি প্রবাহের চাপে বাঁধটির দুই ধার ব্যাপকভাবে ভেঙে যায়। এ কারণে বাঁধের দুই ধারের ভাঙন রোধে প্রটেকশান নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ চেয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। বাগমারা উপজেলা চেয়ারম্যান অনিল কুমার সরকার বলেন, এ ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাজশাহীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
বিএ
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০