লালপুর প্রতিনিধি: নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নাটোরের লালপুর উপজেলায় গড়ে উঠা ইট ভাটাগুলোর নির্গত ধোঁয়া ও উত্তাপে আমে ধরেছে ব্ল্যাক টিপ বা কালো আগা রোগ। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার আম। তাই অতি মুনাফা লোভিদের লিজ দেয়া বা নিজ ফসলি জমিতে ও বসতি এলাকায় গড়ে উঠা ইট ভাটা গুলো এখন আম, লিচুসহ বিভিন্ন ফল চাষিদের গলার কাঁটায় পরিনত হয়েছে। আর এ ক্ষতিতে আম চাষিদের এখন মাথায় হাত পড়েছে, বাগান মালিক ও আম ব্যবসায়ীরা পথে বসতে বসেছে।
উপায় অন্তর না পেয়ে এ অঞ্চলের মানুষের আয়ের অন্যতম ফসল আম রক্ষার্থে অবৈধ্য ইট ভাটা ও নতুন ইট ভাটা নির্মান বন্ধে মানববন্ধন, বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ প্রদানসহ নানা রকম তৎপরতা চালাচ্ছে আম চাষিরা। আর এতে নড়ে চড়ে বসেছে প্রসাশন। ইতি মধ্যেই উপজেলা কৃষি বিভাগ রোগাক্রান্ত আম আঞ্চলিক উদ্যানতত্ব গবেষনা কেন্দ্র বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনিস্টিটিউট চাপাইনবাবগঞ্জে পাঠিয়েছিলেন। সেখানকার মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ড. হামিম রেজা স্বাক্ষরিত রিপোর্ট উপজেলা কৃষি বিভাগের হতে এসে পৌচেছে। রিপোর্টে এ রোগকে ব্ল্যাক টিপ বা কালো আগা বলা হয়েছে । আর ওই রিপোর্টে এ রোগের জন্য ইট ভাটার কালো ধোয়াকে দায়ী করা হয়েছে। আম এ রোগে আক্রান্ত হলে প্রথমে তার নিচের অংশে ছোট কালো দাগ পড়ে। পরে তা কয়েক দিনের মধ্যেই কালো দাগ বড় হয়ে ওঠে এবং পচে নষ্ট হয়ে যায়। বিষয়টি সরেজমিনে তদন্তে যান লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম। এ সময় তার সাথে ছিলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুল ইসলাম খান। সেখানে তিনি বিভিন্ন আম বাগান ঘুরে দেখেন এবং আখ চাষিদের ক্ষতির বিষয়টি উলব্ধি করে সমস্যা নিরসনে তার পক্ষ থেকে সকল কিছু করার আশ্বাস দেন।
বিষম্ভরপুর গ্রামের আম চাষি এবং আম চাষিদের নেতা সোলাইমান হোসেন জানান, এই অঞ্চলের মোমিনপুর, মোহরকয়া, বিষম্ভরপুর, ঢুষপাড়া, অমৃতপাড়া,রহিমপুর,হবিতপুর,কৃষ্টরামপুর,সাইপাড়া,আকবরপুরসহ এর আশেপাশের গ্রামের কয়েক’শ একর জমিতে আম বাগান আছে। এই সব আম বাগানের আশেপাশে ফসলি জমিতে এবং বসতি এলাকায় ২৬টি ইট ভাটা রয়েছে চালু রয়েছে, আরো দুটি ইট ভাটা চালুর প্রক্রিয়ায় রয়েছে। ইট ভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়া ও তাপের কারনে তার সাত একর জমির আম বাগানের আমে কালো দাগ হয়ে পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মহরকয়া গ্রামের আম চাষি ইনামুল হক জানান, তার পাঁচ একর জমির আম বাগানের সমস্ত আম ব্ল্যাকটিপ রোগে আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অমৃতপাড়ার আম চাষি আহম্মদ আলী জানান, এলাকায় ইট ভাটার প্রয়োজন আছে কিন্তু সেটা হতে হবে সকল নিয়ম মেনে,কিন্তু সরকারী নিয়ম নীতি না মেনে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা এসব ইট ভাটা যেমন পরিবেশ দুষিত করছে তেমনি এ অঞ্চলের প্রধান আয়ের উৎস আম চাষিদের জন্য গলার কাটা হয়েছে। ইট ভাটার ধোয়া আম, লিচু, কাঁঠালসহ সকল ফল এবং ধান,গমসহ অন্যান্য ফসলের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলছে। একই গ্রামের হাজি মাজদার রহমান জানান, আমরা ইট ভাটার বিপক্ষে নই, কিন্তু সেটা হতে হবে নিয়ম মেনে, যাতে করে আমরা ক্ষতির মধ্যে না পড়ি। এই ইট ভাটার কারনে আমাদের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, এখন এ সমস্যা থেকে উত্তরণ না হলে আমরা আরো ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়বো, তাই আমরা ১৯ দফা দাবি সম্মলিত অভিযোগ বিভিন্ন দপ্তরে জমা দিয়েছি।
এব্যাপারে লালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুল ইসলাম খান ইট ভাটার বিরুপ প্রভাবের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, রোগাক্রান্ত আম পরীক্ষা করা হয়েছে, আম চাষিদের ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে এবং আম চাষিদের তালিকা ও মোট ক্ষয় ক্ষতির পরিমান নিরুপনের কাজ চলছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম জানান, আমের রোগের খবর পেয়ে সাথে সাথে কৃষি বিভাগকে বিষয়টি পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য বলা হয়েছে এবং সরেজমিনে ১৪ মে আম বাগান পরিদর্শন করেছি,কৃষি বিভাগ থেকে সঠিক আম চাষিদের তালিকা এবং ক্ষতির পরিমানের রিপোর্ট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০