এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠার লড়াইয়ে বাঁচামরার ম্যাচে লঙ্কানদের যেভাবে চেপে ধরেছিল বাংলাদেশ। তাতে মনেই হচ্ছিল এই যাত্রায় জিইয়ে থাকবে বাংলাদেশের এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ের স্বপ্ন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি।
স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ২১ রানে হেরে ধূলিসাৎ হয়ে গেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের এশিয়ার বিশ্বকাপ মিশন।
শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) কলম্বোর আর. প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৫৭ রান তুলে শ্রীলঙ্কা। জবাবে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৪৮ দশমিক ১ ওভারে ২৩৬ রানেই গুঁটিয়ে যায় টাইগাররা। ফলে ২১ রানের পরাজয়ে শেষ হয়ে গেল সাকিব বাহিনীর এশিয়া কাপ জয়ের স্বপ্ন।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দারুণ শুরু পায় বাংলাদেশ। একপ্রান্ত নাঈম শেখ নড়বড়ে হলেও বেশ সাবলীল শুরুটা করেছিলেন মিরাজ। দারুণ সব শটে রানের চাকা সচল রাখেন মিরাজ। উদ্বোধনী জুটিতে রান আসে ৫৫। তবে মিরাজকে ফিরিয়ে টাইগার শিবিরের প্রথম ধাক্কাটা দেন শানাকা। ২৮ রানে সাজঘরে ফিরেন মিরাজ।
অন্যদিকে একের পর এক ডট বল খেলছিলেন নাঈম। শেষ পর্যন্ত শানাকার হাতে সমাপ্তি ঘটে নাঈমের পিঁপড়াগতির ইনিংসের। ৪৬ বলে ফিরেন ২১ রানে।
এরপর ইনিংসের ১১ থেকে ২০ ওভারের মধ্যে চার উইকেট হারিয়ে বেশ চাপেই পড়ে সাকিব আল হাসানের দল। শেষ ৩০ ওভারে জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার দাঁড়ায় ১৭৪ রান। এ সময়ে ১৫ রানে লিটন এবং ৩ রানে আউট হন সাকিব।
মাত্র ৮৩ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারানো টাইগার শিবিরকে উদ্ধার করার অভিযানে নামেন মুশফিকুর রহিম এবং তাওহিদ হৃদয়। ভালোই প্রতিরোধ গড়ছিল এই জুটি। সময় নিয়ে সাবলীল গতিতেই ব্যাট করছিল এই জুটি। কিন্তু দলীয় ১৫৫ রানের মাথায় ভাঙে জুটি।
৪৮ বলে ২৯ রানে থাকা মুশফিককে ফেরান দাসুন শানাকা। মুশফিক ফিরলেও নিজের ফিফটি হাঁকিয়ে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন হৃদয়। মাঝে ব্যক্তিগত মাত্র ৫ রানে সাজঘরে ফিরেন শামীম হোসেন পাটোয়ারী। একপ্রান্ত আগলে রেখে লড়াই চালাচ্ছিলেন হৃদয়। তার ইনিংসে ভর করেই আবারও স্বপ্ন বুনছিল বাংলাদেশ। তবে শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি।
শেষ দিকে টাইগার সমর্থকদের হতাশ করে ফিরেছেন এই ব্যাটারও। মাহিশ ঠিকশানার বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে আউট হন হৃদয়। সাজঘরে ফেরার আগে ৯৭ বলে ৮২ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেন তিনি।
তবে শেষ দিকে কিছুটা লড়াই করেন টেলএন্ডাররা। যদিও নাসুমের ১৫ ও হাসানের ১০ রান লঙ্কানদের জয়ের পথে কোনো বাধা হতে পারেনি। ২৩৬ রানে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২১ রানের ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ।
লঙ্কানদের হয়ে দাসুন শানাকা, মাহিশ ঠেকশানা এবং মাথিশা পাথিরানা তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন। এ ছাড়া এক উইকেট নিয়েছেন দুনিথ ভেলালাগে।
এর আগে, টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছিলেন শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার। তবে নিয়মিত বিরতিতে বেশ উইকেট তুলে ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিল টাইগার পেসাররা। কিন্তু কুশল মেন্ডিস ও সাদেরা সামারাবিক্রমার ব্যাটিং নৈপুণ্যে চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ পায় এশিয়া কাপের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা।
বোলিংয়ে এসে প্রথম ওভারেই পাথুম নিশাঙ্কাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন পেসার তাসকিন আহমেদ। তবে আম্পায়ারের সেই সিদ্ধান্ত রিভিউ নিয়ে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান ডানহাতি এই ব্যাটার।
এরপর আগ্রাসী মেজাজে বাংলাদেশের বোলারদের ওপর ব্যাট চালাচ্ছিলেন লঙ্কান ওপেনাররা। তবে ষষ্ঠ ওভারে এসে বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেক-থ্রু এনে দেন হাসান মাহমুদ। ডানহাতি এই পেসারের বলে উইকেটের পিছনে মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন দিমুথ করুনারত্নে। বিদায়ের আগে ১৭ বলে ১৮ রান করেন তিনি।
জীবন পেয়েও শেষ পর্যন্ত হাফ সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে ফিরেন নিশাঙ্কা। শরিফুলের স্লোয়ারে তার পায়ে বল আঘাত হানলে আম্পায়ার আউটের সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু পল উইলসনের দেওয়া এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত নিয়েও ইনিংস বাঁচাতে পারেননি তিনি। ৭৪ রানের জুটি অবশেষে ভাঙেন শরিফুল। নিশাঙ্কা থেমেছেন ৬০ বলে ৪০ রান করে।
আক্ষেপ নিয়ে নিশাঙ্কা ফিরলেও ফিফটির মাইলফলক ছুঁয়েছেন কুশল মেন্ডিস। তবে এরপর আর বেশি দূর এগোতে পারেননি। শরিফুলের খাটো লেন্থের বলে আপার কাট করতে গিয়ে থার্ডম্যানে ধরা পড়েন। এর আগে, তার ব্যাট থেকে এসেছে ৭৩ বলে ৫০ রান। দুই সেট ব্যাটারকে সাজঘরে ফিরিয়ে বাংলাদেশকেও ম্যাচে ফেরান শরিফুল।
চারিথ আসালঙ্কা উইকেটে আসার পরই শরিফুলকে সরিয়ে তাসকিনকে আক্রমণে আনেন সাকিব। অধিনায়কের সেই পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন করলেন ডানহাতি এই পেসার। তাসকিনের স্লোয়ারে তুলে মারতে চেয়েছিলেন আসালঙ্কা। কিন্তু ২৩ বলে ১০ রান করে আসালাঙ্কা থেমেছেন।
আসালাঙ্কা দ্রুত ফেরার পর ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার কাঁধে অনেক দায়িত্ব ছিল। তবে তিনিও সামাবিক্রমাকে সঙ্গ দিতে পারেননি। ৩৭তম ওভারের প্রথম বলটি অফ স্ট্যাম্পের বাইরে গুড লেন্থে করেছিলেন হাসান। সেখানে কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন এই মিডল-অর্ডার ব্যাটার। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৬ বলে ৬ রান।
এরপর দাসুন শানাকাকে সঙ্গে নিয়ে ভালোই লড়াই করেছেন সামাবিক্রমা। ষষ্ঠ উইকেটে তাদের জুটিতে বড় সংগ্রহের দিকেই এগোচ্ছিল শ্রীলঙ্কা। ২৪ রান করা শানাকাকে বোল্ড করে ৬০ রানের সেই জুটি ভাঙেন হাসান। তাতে আরও একবার ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় টাইগাররা। বাংলাদেশের সঙ্গে আগের ম্যাচেও হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন সামাবিক্রমা। এবার আরও একবার বাংলাদেশকে পেয়ে জ্বলে ওঠলেন তিনি। দারুণ কিছু শট খেলে হাফ সেঞ্চুরি ছুঁতে খরচ করেছেন মাত্র ৪৫ বল। সেঞ্চুরিটাও পেতে পারতেন। তার কপালে ছিল না বলেই হয়নি! ইনিংসের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে তিনি নামের পাশে যোগ করেছেন ৭২ বলে ৯৩ রান।
বাংলাদেশের হয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন পেসাররা। হাসান মাহমুদ ও তাসকিন আহমেদ তিনটি করে উইকেট পেয়েছেন। আরেক পেসার শরিফুল ইসলাম নেন দুটি উইকেট। এ ছাড়া সাকিব-নাসুম উইকেট শূন্য থাকলেও মিতব্যয়ী বোলিং করেছেন।
বিএ/
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- k24ghonta@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০