খবর২৪ঘণ্টা.কম, ডেস্ক: মাহে রমজানের সিয়াম সাধনার আজ ১০ম দিন। পবিত্র রমজান মাসের রহমতের দশদিন শেষ হয়ে গেল। কাল থেকে শুরু হবে মাগফিরাতের দিনগুলো। মহান আল্লাহর রহমতের ছায়ায় কতই না সুন্দরভাবে অতিবাহিত হচ্ছে মাহে রমজান।
ইতিপূর্বে আমরা মাহে রমজানের ফরজ, রমজানে কাযা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেছি। আর আজ রোজার এগার প্রকারের কাযা সম্পর্কে আলোকপাত করবো। যে এগারো প্রকার কাজের কারণে রোজার কাযা পূরণ করতে হবে। রোজার কাযা হচ্ছে এমন ওজর-অপারগতা যার কারণে তাৎক্ষনিক রোজা ভাঙার অনুমতি রয়েছে।
আর তা পরবর্তী রমজানের আগে (কাযা) পূরণ করে দিতে হবে। তাছাড়া রমজানের রোজা রেখে আমরা এমন কাজ করে ফেলি যাতে রোজা পালন হয় না, বরং এর কাযা রাখা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। মনে রাখতে হবে, রোজার কাযা আদায়ের পদ্ধতি হচ্ছে প্রতিটি রোজার পরিবর্তে রমজানের পর কাযার নিয়্যতে একটি করে রোজা রাখা।
আজকে ১১ প্রকারের রোজার কাযা সম্পর্কে আলোচনা করছি। ইচ্ছা-অনিচ্ছায় এ সব কাজ করলে রোজা ভেঙে যাবে তথা রোজা হবে না। আর তখন অবশ্যই রোজার কাযা দিতে হবে।
১। রোজাদার সেহরির সময় শেষ হয়নি মনে করে পানাহার করেছে এবং স্ত্রী সহবাস করেছে। পরে জানতে পারলো, তখন সেহরির সময় শেষ হয়ে গিয়েছিল। এমতাবস্থায় তার রোজা হবে না। অবশ্যই তাকে এই রোজার কাযা দিতে হবে। অর্থাৎ এই রোজার পরিবর্তে আরেকটি রোজা রাখতে হবে। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৮০ পৃষ্ঠা)
২। রোজাদার অযু করা অবস্থায় নাকে পানি দিলেন আর তা কোনো কারণে মগজ পর্যন্ত উঠে গেলো কিংবা কণ্ঠনালী দিয়ে নিচে নেমে গেলো এবং তিনি যে রোজাদার এ বিষয়টি স্মরণ ছিলো, তাহলে ওই ব্যক্তির রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং তাকে রোজার পরিবর্তে কাযা দিতে হবে। তার জন্য কাযা ওয়াজিব। আর যদি রোজাদার হবার কথা স্মরণ না থাকে তাহলে রোজা ভাঙ্গবে না। (ফতোয়া আলমগীরী, ১ম খন্ড, ২০২ পৃষ্ঠা)
৩। রোজা রাখা অবস্থায় রোজাদারকে রোজা ভাঙতে কঠোরভাবে বাধ্য করা হলে। যেমন কেউ রোজাদারকে হত্যা, কিংবা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে ফেলার হুমকি দিয়ে বললো -রোজা ভেঙ্গে ফেল। রোজাদারও নিশ্চিতভাবে মনে করলো সে (হুমকিদাতা) যা বলেছে তা সত্যি সত্যি করবে। এ অবস্থায় রোজা ভাঙ্গার অনুমতি রয়েছে। রোজা ভাঙ্গলে তাকে রোজার কাযা দিতে হবে। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৪০২ পৃষ্ঠা)
৪। ভুল করে পানাহার করলো, কিংবা স্ত্রী সহবাস করলো, অথবা এমন ভাবে দৃষ্টিপাত করলো যে তার বীর্যপাত হয়েছে কিংবা স্বপ্নদোষ হয়েছে অথবা বমি হয়েছে, এসব অবস্থায় তার মনে হলো তার রোজা ভেঙ্গে গেছে। আর রোজা ভেঙ্গে গেছে এটা মনে করে স্বেচ্ছায় পানাহার করলো, তাহলে তার রোজা সত্যি সত্যি ভেঙ্গে যাবে এবং তাকে রোজার কাযা দিতে হবে। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩৭৫ পৃষ্ঠা)
৫। রোজা অবস্থায় নাকে ঔষধ দিলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। এর কাযা পূরণ করা অপরিহার্য। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩৭৬ পৃষ্ঠা)
৬। পাথর, কঙ্কর মাটি যা সাধারণ খাওয়া হয় না, এমন মাটি কিংবা তুলা, ঘাস, কাগজ ইত্যাদি (যেগুলো মানুষ ঘৃণা করে) খেয়ে ফেললে রোজা ভেঙ্গে যাবে। এর কাযা দিতে হবে। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩৭৭ পৃষ্ঠা)
৭। বৃষ্টির পানি কিংবা শিলাবৃষ্টি নিজে নিজেই কণ্ঠনালীর ভেতরে প্রবেশ করলো, এতে রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং রোজার কাযা দিতে হবে। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩৭৮ পৃষ্ঠা)
৮। খুব বেশি ঘাম কিংবা চোখের পানি বের হলে আর তা গিলে ফেললে রোজা ভেঙ্গে যাবে। রোজার কাযা পূরণ করতে হবে। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩৭৮ পৃষ্ঠা)
৯। রাত বাকি আছে মনে করে সেহরি খেতে থাকলো, পরে জানা গেল যে আসলে সেহরির সময় শেষ হয়ে গেছে তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং রোজার কাযা দিতে হবে। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৮০ পৃষ্ঠা)
১০। সূর্য ডুবে গেছে মনে করে পানাহার করে নিলো, পরে জানতে পারলো সূর্য ডুবেনি, তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং এর কাযা দিতে হবে। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৮০ পৃষ্ঠা)
১১। সূর্য অস্ত যাওয়ার আগেই সাইরেনের আওয়াজ কিংবা আযানের শব্দ শুনে কেউ ইফতার করে ফেললো কিন্তু পরে জানতে পারলো যে ইফতারের সময় বাকি ছিল তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা দিতে হবে। এতে রোজাদারের দোষ থাকুক না থাকুক তবুও রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা করতে হবে। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৮০ পৃষ্ঠা)
মাহে রমজানের ফরজের পাশাপাশি এর কাযা সম্পর্কে ভালভাবেই জেনে নিই এবং সে অনুযায়ী আমল করি। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে ভালভাবে বোঝার ও আমল করার তওফিক দিন।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- k24ghonta@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০