নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সাথে দু’জন এ্যাটেনডেন্ট (দর্শনার্থী) প্রবেশে দিতে হচ্ছে ফেরতযোগ্য ১০০ করে ২০০ টাকা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দর্শনার্থী নিয়ন্ত্রণের জন্য এমন নিয়ম করলেও হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তার স্বজনরা ক্ষোভ ও সমালোচনা কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের। রোগীর স্বজন ও সচেতন মানুষজন বলছেন, দর্শনার্থী কার্ড দিলেও সেটি বিনামূল্যে করা যেত। কিন্ত টাকা দিয়ে দর্শনার্থী কার্ড নেয়া-দেয়ার ঝামেলার মধ্যে রোগীদের ফেলা হয়েছে। আবার যার কাছে টাকা নেই বা সমস্যা তাহলে সেই রোগীর এ্যাটেনডেন্টরা কি প্রবেশ করবে না। এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে রোগীদের মধ্যে ক্ষোভ ও সমালোচনার ঝড় বইছে। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি এ পদ্ধতি করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিলনা তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মাসের ১০ তারিখ থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর সাথে দুই জন এ্যাটেনডেন্ট (দর্শনার্থী) প্রবেশের নিয়ম করা হয়। আর দুই জন দর্শনার্থীর জন্য ১০০ টাকা করে ২০০ টাকা জামানত বাবদ ফেরতযোগ্য টাকা নিয়ে দর্শনার্থী কার্ড দেয়ার নিয়ম করা হয়। রোগী ভর্তির সময় দেয়া টাকা রোগী ছুটি হলে দর্শনার্থী কার্ড ফেরত দিয়ে সেই টাকা ফেরত দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালের আনসার ক্যাম্পের সদস্যদের মাধ্যমে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে। টাকা দেয়া ছাড়া দর্শনার্থী কার্ড দেয়া হচ্ছে না। এ নিয়ম করার পর থেকেই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা পড়েছেন বিপাকে। কারণ অনেক সময় জরুরী রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। কিন্ত ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর আবার দর্শনার্থী কার্ড নেয়ার জন্য রোগী নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে স্বজনদের।
সরজমিনে গতকাল শনিবার দুপুর ১২টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে গিয়ে দেখা যায় রোগীর স্বজনরা হাসপাতালের জরুরী বিভাগে অবস্থিত টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট নিয়ে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করার পর দর্শনার্থী কার্ড নেয়ার জন্য রোগীর নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর দিয়ে টাকা জমা দিচ্ছেন। টাকা জমা দিলে সেখান থেকে একটি টোকেন দেয়া হচ্ছে রোগীর ছুটি টোকেন ফেরত দিয়ে জামানত বাবদ টাকা ফেরত নিতে হচ্ছে রোগীদের।
কেউ টাকা দিতে না চাইলে তাকে টোকেন ও দর্শনার্থী কার্ড দেয়া হচ্ছে না। বাধ্য হয়েই রোগীর স্বজনরা টাকা দিয়ে দর্শনার্থী কার্ড ও টোকেন নিচ্ছেন। জরুরী বিভাগের সামনে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার স্থানে সবসময় বিশৃঙ্খলা লেগে থাকছে। আবার এরমধ্যে দুই’একজন দেয়া টাকা টোকেন হারিয়ে ফেলার কারণে ফেরত পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করছেন। আর দর্শনার্থী ও টোকেন নিয়ে আসার পর মূল গেটে প্রবেশের সময় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। সেখানেও প্রায় সময় ভিড় লেগে থাকছে।
মর্জিনা নামের এক রোগীর এ্যাটেনডেন্ট অভিযোগ করে বলেন, এ নিয়ম করে রোগীদের ঝামেলার মধ্যে ফেলে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ভর্তি কার্যক্রমের পর আবার টোকেন নেয়া ও দেয়া এগুলো ঝামেলা। রোগী ভর্তির সময় ও দর্শনার্থী কার্ড দেয়া যেতো কিন্ত টাকা দিলে দর্শনার্থী কার্ড সিস্টেমটি রোগীদের ঝামেলা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। রোগী নিয়ে এসে আমরা স্বজনরা মানুষিকভাবে খারাপ থাকি। তারপরও এমন বাড়তি ঝামেলা চাপিয়ে দেয়া ঠিক হয়নি। বিষয়টির সমালোচনা করে ওই রোগীর স্বজন আরো বলেন, আমরা রোগী নিয়ে সুষ্ঠ ও ঝামেলা মুক্ত থাকতে চাই। টাকা জমা দেয়া ছাড়াও রোগীর এ্যাটেনডেন্ট নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের ভাবা উচিত।
শাহিদা নামের আরেক রোগীর স্বজন অভিযোগ করে বলেন, আমার রোগীর অনেক বেশি সমস্যা ছিল। জরুরীভাবে ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন থাকলেও এত বেশি সিস্টেমের কারণে পারিনি। যদি দর্শনার্থী কার্ড নেয়ার মতো টাকা না থাকে তাহলে কি আমরা রোগী নিয়ে ভেতরে যেতে পারবো না? সরকারী হাসপাতালে এমন সিস্টেম করা ঠিক হয়নি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, এ সিস্টেম নিয়ে কর্তৃপক্ষের আরো ভাবা উচিত ছিল।
মারুফ নামের এক রোগীর স্বজন অভিযোগ করে বলেন, বিনামূল্যের গেট পাশ সিস্টেম উঠিয়ে টাকা দিয়ে দর্শনার্থী কার্ড প্রদানের সিস্টেমটি রোগী বান্ধব নয় বলে আমি মনে করি। এটি রোগীদের ঝামেলা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। পুনরায় বিষয়টি নিয়ে বিবেচনা করা উচিত কর্তৃপক্ষের।
জুবায়ের নামের আরেক রোগীর স্বজন অভিযোগ করে বলেন, গেট পাশ সিস্টেমটি ভালো ছিল। ওই সিস্টেমে বাইরে থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা অপব্যবহার করতো না। এই সিস্টেম করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর ঝামেলা বাহ্যিকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। দালালতো ঠিকই হাসপাতালের মধ্যে অবাধে প্রবেশ করে দালালি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। রোগীদের ঝামেলা না হয় বা রোগী বান্ধব কল্যাণকর কিছু ভাবা উচিত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
রুবায়েত নামের আরেক রোগীর স্বজনের সাথে কথা হলেও তিনি ক্ষোভ ও অভিযোগের সুরে বলেন, এখনতো আর সাধারণ মানুষের কল্যাণ হয় এমন কিছু করা হয়না। যার যেমন ইচ্ছে তেমন কিছু হচ্ছে। আমিও এ সিস্টেমের কারণে রোগী নিয়ে হয়রানির মধ্যে পড়েছি দুই দফায়। দর্শনার্থী কার্ড নেয়ার জন্য ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করেছি তারপর ভেতরে প্রবেশ করতে পেরেছি।
এদিকে, দর্শনার্থী প্রবেশে ফেরতযোগ্য টাকা সিস্টেম চালু করার পর থেকে হাসপাতালের জরুরী বিভাগ থেকে শুরু করে মেইন গেইট পর্যন্ত ব্যাপক ভিড় থাকছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রহমান এর সাথে যোগাযোগ করার জন্য তার সরকারি মোবাইলে কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেন নি।
রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, রোগীর সাথে দুইজন দর্শনার্থী প্রবেশ করতে পারবে দর্শনার্থী কার্ড ১০০ টাকা করে মোট ২০০ টাকা ফেরতযোগ্য দিয়ে। টোকেন দেখালে ছুটির সময় সেই টাকা ফেরত দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া রোগীর স্বজনদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। টাকা ছাড়া দর্শনার্থী কার্ড দেয়া যায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না না টাকা ছাড়া দর্শনার্থী কার্ড দেয়ার সুযোগ নেই।
আর/এস
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- k24ghonta@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০