নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে রোগী ও লাশবাহী গাড়ীর দালাল অবাধে প্রবেশ করে রোগী ধরে নিয়ে পরীক্ষা করাতে বাইরের বেসরকারী ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাচ্ছে। আর লাশবাহী গাড়ীর দালালরা রোগী মারা যাওয়ার সাথে তাদের নিজের গাড়ীতে যাওয়ার জন্য স্বজনদের সাথে জোরাজুরি করে। এ নিয়ে বাইরে থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অথচ গেট পাস ছাড়া রোগীর স্বজন ও দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারে না। আর সেই গেট দিয়েই অবাধে প্রবেশ করে বেসরকারী ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মার্কেটিং অফিসার পরিচয়দানকারী দালালরা। তারা গেট দিয়ে সহজেই প্রবেশ করে
রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলোতে। দালালরা রোগী ভাগিয়ে নিয়ে গেলেও লাশবাহী গাড়ীর চিহ্নিত দালালরা হাসপাতালে প্রবেশ করতে কখনোই বাধার মধ্যে পড়েন না। অবাধেই তারা নিজেদের ইচ্ছামত প্রবেশ করে। কখনোই তারা হাসপাতালে প্রবেশ করতে বাধার সম্মুখীন হয়না বলে অভিযোগ রয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এখানে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলার রোগীরা চিকিৎসা করাতে আসেন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগই বাইরের হওয়ায় তারা স্থানীয় রোগী ও লাশবাহী গাড়ী এবং বিভিন্ন বেসরকারী ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক
সেন্টারের দালালের খপ্পড়ে পড়েন। বাইরের হওয়ার কারণে তেমন জোরালো প্রতিবাদও করতে পারেন না। দালালরা অবাধেই হাসপাতালে প্রবেশ করে তাদের কম টাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেয়ার নাম করে নিয়ে যায়। আর বড় ধরণের অপারেশন হলে বাইরের বেসরকারী ক্লিনিকের দালালরা নিজেদের মার্কেটিং অফিসার পরিচয় হাসপাতালের ওয়ার্ডে প্রবেশ করে। ওয়ার্ডে যাওয়ার পর তারা নিজেদের প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বাইরে নিয়ে চলে যায়। কম টাকার অপারেশনও বেশি টাকা দিয়ে করাতে বাধ্য করে। আর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা হলে সেটিতে তারা কৌশলে দ্বিগুণ অর্থ হাতিয়ে নেয়। দিনের পর দিন এমন অবস্থা চলে আসলেও রোগী ও তার স্বজনরা এর প্রতিকার পায়না। রোগীর দালালরা কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করালেও রোগীরা বেশি জিম্মি হয়ে পড়েন রোগী ও লাশবাহী দালালের কাছে। টাকা বেশি দিয়ে যেতে
হচ্ছে জেনেও তারা কিছু করতে পারেন না। কারণ হাসপাতাল রোগী ও লাশবাহী গাড়ী সিÐিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন। রোগীদের নিজস্ব যানবাহন থাকলেও তা নিয়ে যেতে পারেন না। দূরত্ব যেমনই হোক দুই থেকে তিনগুণ ভাড়া দিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়। অথচ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সেখানে পুলিশ বক্স ও আনসার ক্যাম্প রয়েছে। পুলিশ বক্সের একজন সদস্য জরুরী বিভাগে সবসময় ডিউটি পালন করেন ও আনসার সদস্যরাও পর্যায়ক্রমে ডিউটি পালন করেন। তারপরও রোগী ও লাশবাহীর খপ্পড়ে পড়া রোড়ী স্বজনরা কোন উপকার পায়না বলেই অভিযোগ রয়েছে।
সরজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, জরুরী বিভাগ দিয়ে হাসপাতালের ওয়ার্ডে প্রবেশের জন্য মূল গেট পার হতে হয়। সেখানে গেট পাস দেখিয়ে রোগীর স্বজন ও দর্শনার্থীদের ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। সেখানে আনসার সদস্য ছাড়াও গেটম্যান রয়েছে। যারা রোগীর স্বজনদের পাস দেখার পরেই ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়। কিন্ত একেবারেই ভিন্ন চিত্র দালাল ও বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মার্কেটিং অফিসার পরিচয়দানকারী ব্যক্তিদের জন্য। তারা
অবাধেই প্রবেশ করছে হাসপাতালের মধ্যে। গেটেও গেটম্যানরা তাদের আটকায়না। বিনা বাধায় এসব দালালরা হাসপাতালে প্রবেশ করে ওয়ার্ডে গিয়ে রোগী ধরে নিয়ে যায় নিজেদের পছন্দের ওষুদের দোকান ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। আর রোগী ও লাশবাহী গাড়ীর দালালরা কোন রোগী মরে যাওয়া মাত্রই খবর পায়। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন ওয়ার্ডে তাদের সোর্স রয়েছে। যার কারণে রোগী মৃত্যুর সাথে সাথেই দালালরা খবর পায়।
জুম্মন নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে আমার রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে আছি। দুর্ঘটনায় পা ভেঙ্গে যাওয়ার
কারণে চিকিৎসা চলছে। কোর্ট পরা ভদ্রলোক গোছের কিছু মানুষ ওয়ার্ডে এসে কম খরচে অপারেশন করে দেয়ার কথা বলে। তাদের কথা কান দেয়না। তারা বার বার আসে।
জুই নামের এক কলেজ ছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, আমার খালাকে নিয়ে কয়েকদিন ধরেই হাসপাতালে আছি। রোগীর ওয়ার্ডে আসা মাত্রই দালালরাও সাথে সাথে এসে চিকিৎসক টেস্ট লিখে দেয়া মাত্রই দালাল সেটি নিয়ে বলেন, চলেন কম টাকায় পরীক্ষা করে দিব। সেই দালাল আরো বলে, কম টাকা দিয়ে ওষুধও কিনে দেয়া হবে। অথচ পাশেই আনসার সদস্য ডিউটিরত ছিলেন।
রাজিব নামের এক রোগীর স্বজন অভিযোগ করে বলেন, আমার চাচাকে নিয়ে আমরা বাড়ি থেকে গাড়ী ভাড়া করে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্ত যাওয়ার সময় নিজেদের পছন্দের গাড়ীতে যেতে চাইলেও পারিনি। দালালরা তাদের নিজস্ব গাড়ীতে যেতে বাধ্য করে। এটা কি মগের মুল্লুক। এটা নিয়ে রাজশাহীর সর্বস্তরের প্রশাসনের প্রতি এই বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
জলি নামের এক নারী অভিযোগ করে বলেন, আমার বাবার মৃত্যুর পর তারা কম রাস্তাতেও বেশি ভাড়া দাবি করে। অন্য গাড়ীতে যেতে চাইলেও একই ভাড়া দাবি করা হয়। পরে বেশি টাকা নিয়েও লক্কর-ঝক্কড় একটি গাড়ী দেয়া হয়। রাস্তা গিয়ে সেটি প্রায় ঘণ্টাখানে বন্ধ ছিল। সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। প্রশাসনের প্রতি আহবান জানাই স্থায়ী একটা সমাধান করা জরুরী। যাতে কেউ হয়রানি না হয়।
এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আর/এস
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- k24ghonta@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০