নজরুল ইসলাম জুলু : রাজশাহী মহানগরীতে যেন ফুটপাত দখলের হিড়িক পড়েছে। প্রশস্ত সড়কের দুই পাশের টাইলস করা ফুটপাত দখল করে কেউ বসাচ্ছে দোকান, কেউ করছে ক্লাব ঘর আবার কোথাও কোথাও করা হচ্ছে রাজনৈতিক দলের কার্যালয়। কোথাও আবার আওয়ামী লীগ নেতাদের দখলে থাকা স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়ে নতুন করে দোকান, ক্লাব ঘর ও পার্টি অফিস বানানো হচ্ছে। অবৈধ এই সমস্ত স্থাপনাগুলোকে কেন্দ্র করে নগরীতে বিগত বেশ কয়েক বছর থেকেই চলছে রমরমা চাঁদাবাজি। ৫ই আগষ্ট রাজনৈতিক ক্ষমতার পালাবদলের পরও অব্যাহত রয়েছে ফুটপাত থেকে চাঁদা আদায়। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শুধুমাত্র হাতবদল ঘটেছে চাঁদাবাজদের। পুরোনো চাঁদাবাজদের জায়গায় যুক্ত হয়েছে নতুন চাঁদাবাজ। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের আগে নগরীর বিভিন্ন ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক ও ব্যবসানির্ভর বাণিজ্যিক এলাকার ফুটপাতের বিভিন্ন দোকান থেকে চাঁদা আদায় করত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। তবে এখন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রকাশ্যে না হলেও নীরবে চাঁদাবাজি অব্যাহত রয়েছে । ফুটপাতে অবৈধ দোকানপাটের জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এবং টাইলস দ্বারা সজ্জিত নগরীর প্রশস্ত ফুটপাত দিয়ে চলাচল করতে পারছে না নগরবাসী। পুরো নগরী জুড়েই চলছে ফুটপাত দখল করে দোকান দেওয়ার হিড়িক।
রাজশাহী নগরীর তালাইমারী মোড় থেকে কাজলা-বিনোদপুর কাটাখালী পর্যন্ত সোয়া চার কিলোমিটার সড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করা হচ্ছে ৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে। এই সড়কের দুই পাশে ১০ ফুট প্রশস্ত ফুটপাত করা হচ্ছে টাইলস বসিয়ে। কিন্তু সড়কের উন্নয়ন কাজ শেষ হওয়ার আগেই অধিকাংশ ফুটপাত ইতোমধ্যেই দখল হয়ে গেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেট থেকে বিনোদপুর বাজারের পূর্বপ্রান্ত পর্যন্ত ফুটপাত দখল করে কেউ বসিয়েছেন চায়ের দোকান, কেউবা সবজি বিক্রি করছেন। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে থেকে বিনোদপুর বাজার পর্যন্ত সড়কের দুই দিকের পুরো ফুটপাত দখল করে বিক্রি করা হচ্ছে বাঁশ।
সম্প্রতি নগরের বিনোদপুর এলাকায় দেখা যায় ফুটপাতের উপর বিএনপির কার্যালয় বসানো হয়েছে। ফুটপাতের ওপর নির্মিত ঐ কার্যালয়ে টাঙানো ব্যানারে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান এবং বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক রাসিক মেয়র মিজানুর রহমান মিনুর ছবি । ব্যানারে লেখা , ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি-অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন, ৩০ নম্বর ওয়ার্ড, রাজশাহী মহানগর’। কার্যালয়ের ভেতরে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কর্মসূচির ব্যানার টানিয়ে রাখা হয়েছে।
ফুটপাতের উপর কার্যালয় গড়ে তোলা প্রসঙ্গে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈসা জানান, ফুটপাতে কার্যালয় করার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। অনেক আগে বিনোদপুরে দলীয় একটি কার্যালয় ছিল। ওখানে অনেকেই দোকান বসিয়েছে। তার সঙ্গে কার্যালয় হয়তো বসিয়েছে। তিনি জানান ফুটপাতে কোনো কার্যালয় থাকবে না। তিনি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন।
এইদিকে নগরীর ব্যস্ততম এলাকা ভদ্রা মোড়েও ফুটপাত দখলের প্রতিযোগিতা চলছে। এই এলাকায় ১০ ফুট প্রশস্ত ফুটপাত দখল করে বসানো হয়েছে অনেক ফলের দোকান। এছাড়াও নগরীর লক্ষ্মীপুর, সিঅ্যান্ডবি, ভদ্রা, তালাইমারী, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এলাকার দুইপাশের ফুটপাত ও সড়ক, ঘোষপাড়া, রেলগেট, নিউমার্কেট, অলকার মোড়, রাণীবাজার, উপশহর নিউ মার্কেট, রেল স্টেশন, পুরাতন ঢাকা বাসটার্মিনাল, সেরিকালচার কারখানার বাউন্ডারি-সংলগ্ন ফুটপাত, মণিচত্বর, মাস্টারপাড়া, সাহেববাজার, গণকপাড়া, কুমারপাড়া, সোনাদীঘির মোড়, রাজশাহী কলেজের সামনে, সাগরপাড়া বটতলার মোড়, এমনকি খোদ নগর ভবনের সামনের ফুটপাত অবৈধ ভাবে দখল করে বসানো হয়েছে হরেকরকমের দোকানপাট ।
শুধু দখল নয়, রীতিমতো অস্থায়ী স্থাপনা গড়ে এই এলাকাগুলোতে ব্যবসা চলছে। এছাড়াও ফুটপাত ও সড়ক দখল করে গাড়ি পার্কিং বাড়তি দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। কোনো ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই এসব দোকানপাট ও যানবাহন ফুটপাত দখল করে রাখছে।
শুধু দোকানপাট নয় ফুটপাত গুলোতে কোথাও বালুর স্তূপ, কোথাও ইটের খামাল, কোথাও পাথরের স্তূপ, আবার কোথাও রাস্তা বা ফুটপাতের ওপরই রাখা হচ্ছে গৃহনির্মাণ সামগ্রী । এর ফলে নগরবাসীর জীবনে যোগ হয়েছে বাড়তি ভোগান্তি।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজশাহী মহানগরীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট সাহেব বাজার ও গণকপাড়া এলাকায় বর্তমানে চলাচল করা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। সাহেব বাজার ও গণপাড়া এলাকায় ফুটপাত তো দূরে থাক রাস্তা দিয়েও হাঁটতে পারছে না পথচারীরা। এই এলাকার ফুটপাত এমনকি রাস্তায় প্রতিদিন অবৈধভাবে ভাজাপোড়া ও বিভিন্ন খাবার এবং ফলের পসরা সাজিয়ে
বসে শ 'খানেক দোকান। এই ছাড়াও বর্তমানে শীতের গরম কাপড় বিক্রেতারা রাস্তা দখল করেই দোকান সাজিয়ে বসছে। ফলে এই এলাকার ফুটপাত ও রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন বয়সের লাখো মানুষ চলাচল করতে গিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে এবং সৃষ্ট হচ্ছে তীব্র যানজটের।
অভিযোগ আছে, ফুটপাতে অবৈধ দোকানপাট গড়ে তোলার জন্য প্রতিদিন ২০-১০০ টাকা পর্যন্ত মাসিক চাঁদা তুলছে চাঁদাবাজরা। চাঁদার লোভে প্রভাব খাটিয়ে যত্রতত্রে বসানো হয়েছে দোকানপাট। ফুটপাতের এই সমস্ত অবৈধ দোকানপাটগুলো কেন্দ্র করেই চাঁদাবাজ চক্র গুলো বরাবরই বেশ সক্রিয়। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা না থাকলেও এখনো হাতবদল করে চাঁদাবাজি অব্যাহত আছে।
মূলত চাঁদাবাজদের জন্যই সড়ক দখল করে গড়ে ওঠা ফুটপাতের অবৈধ দোকানপাট স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করা সম্ভব হয় না । বছরের পর বছর ধরে ইঁদুর-বিড়াল খেলা চলে উচ্ছেদের নামে। মাঝেমধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে অবৈধ দোকানপাট গুলো অপসারণ করা হলেও কিছুদিন না যেতেই আবার পুরোনো চিত্র ফুটে উঠে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতর বলছে, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে পুলিশ বাহিনী। দেড় মাস ধরে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চলছে। এছাড়া এ বিষয়ে কোনও তথ্য থাকলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানানোর অনুরোধ করেছে পুলিশ সদর দফতর।
এইদিকে, অবৈধ স্থাপনা, দোকানপাট উচ্ছেদে রাজশাহী মহানগর পুলিশকে এখনো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায় নি। তবে, সম্প্রতি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে
রাজশাহী মহানগরীতে সকল প্রকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা শুরু করেছে রাসিকের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০