বিশেষ প্রতিবেদক :
রাজশাহী মহানগরীর বেসরকারী ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও কনসালন্টেসন সেন্টারগুলোতে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে চিকিৎসক ফি। চিকিৎসকরা কিছুদিন পর পর নিজেদের ইচ্ছামত চিকিৎসক ফি বাড়িয়ে দিচ্ছেন। আর এতে করে গরীব রোগীরা চিকিৎসা সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কারণ সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০০ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসকরা ভিজিট ফি নিচ্ছেন।
শুধু তাই নয় চিকিৎসকদের নির্ধারিত সময়ের পরে আসলে একই রোগীকে ডবল ফি দিতে হয়। যতবার ডাক্তারের সাথে রোগীরা দেখা করবে তত বারই ফি দিতে হবে। ফি না দিলে চিকিৎসকের সাক্ষাৎ পাননা রোগীরা। ফলে এক রোগীকে ৩/৪ বার ফি দিতে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরীতে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় শতাধিকের উপরে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক এবং কনসালন্টেসন সেন্টার রয়েছে। প্রায় ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসক রোগী দেখেন। এসব চিকিৎসকদের চেম্বারে দুর-দুরান্ত থেকে রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন।
রাজশাহীর সিনিয়র কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সাক্ষাত ফি ৮০০ টাকা, তারপরের অবস্থানের চিকিৎসকদের প্রথম ফি ৭০০ টাকা, তারপরের অবস্থানের চিকিৎসকদের ৬০০ টাকা, তারপরের অবস্থানের চিকিৎসকদের ৫০০ টাকা এবং ৪০০ টাকা পর্যন্ত ফি রয়েছে।
নির্ধারিত চিকিৎসক ফি দিয়েই যে রোগী চিকিৎসা পাবেন তা নয়। চিকিৎসকের কাছে গেলেই তারা প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় মিলে টেস্ট দিয়ে দেন। যে টেস্টগুলোতে করাতে রোগীর আরো ২/৩ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। চিকিৎসকের ভিজিট ফি ও টেস্ট করানোর ভয়ে গরীর রোগীরা ডাক্তার পর্যন্ত আসতেই পারেন না। টাকা জোড়াগ করে কোন দরিদ্র রোগী এলেও প্রথমবারের পর আর দ্বিতীয়বার আসার মত সামর্থ্য থাকে না।
এদিকে, প্রথমে রোগী চিকিৎসা নিয়ে যাওয়ার পনের দিন অথবা এক মাসের মধ্যে আসলে ডাক্তারের সাক্ষাতে ফি দিতে হয়না। কিন্ত চিকিৎসকের বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত সময়ের পর আসলেই আবার ফি দিতে হয়। গরীব রোগীদের ডাক্তারি ফি জোগাড় করতেই নাকানি চুবানি খেতে হয়।
চিকিৎসক নিজের ইচ্ছামত ফি বাড়িয়ে চললেও সরকারের পক্ষ থেকে কোন নজরদারি বা দেখভাল করা হয় না। যার কারণে ইচ্ছামত চিকিৎসকরা ফি বাড়িয়েই চলেছেন। কর্তৃপক্ষও কোন ভূমিকা পালন করেনা। যার কারণে চিকিৎসকরা কিছুদিন পর পর ফি বাড়াচ্ছেন।
গত কয়েক বছর আগেও চিকিৎসকের ফি কম ছিল। কিন্ত হঠাৎ করেই চিকিৎসকরা তাদের ফি বাড়িয়ে দ্বি-গুণ করে ফেলেছেন।
বাড়তি চিকিৎসক ফি শুধু নয় রোগীরা সিরিয়াল নেয়ার পর নিজেদের সিরিয়াল অনুযায়ী চিকিৎসক দেখাতে পারেননা। এর কারণ হচ্ছে চিকিৎসকদের এ্যাটেন্টডেন্টরা বাড়তি ১০০/২০০ টাকা নিয়ে অন্যদের ডাক্তার দেখানোর সুযোগ করে দেয়। এটা রাজশাহীর প্রায় প্রতিটি চেম্বারের দৃশ্য।
রাজশাহীর পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগী অভিযোগ করে বলেন, আমরা খুব গরীব মানুষ। অনেক কষ্ট করে টাকা জোগাড় করে ডাক্তার দেখাতে এসেছি। ডাক্তার রোগীকে একটু দেখেই অনেক টেস্ট দিয়ে দিয়েছে। যে টেস্ট করাতে কয়েক হাজার টাকা লাগবে। যা দেওয়া আমাদের জন্য অসম্ভব। এ জন্যই ডাক্তার দেখানোর মত সাহস করাই যায় না আমাদের মত গরীব পরিবার থেকে।
বিশেষ করে রাজশাহীর পপুলার ক্লিনিক, সিডিএম, সেবা ক্লিনিক, ব্রীজ হাসপাতাল, মেট্রোপলিটন হাসপাতাল, ইসলামী হাসপাতাল, কিওর নার্সিং হোমসহ বিভিন্ন বেসরকারী ক্লিনিকে চিকিৎসকদের বাড়তি ফি দিয়ে রোগীকে ডাক্তার দেখাতে হয়।
পপুলার ডায়াগনস্টিকে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগী অভিযোগ করে জানান, আগের দিন তিনি রোগী দেখানোর জন্য সিরিয়াল নিয়েছিলেন। কিন্ত তার পরের সিরিয়ালের লোকজন ডাক্তারের এ্যাটেন্টডেন্সকে টাকা দিয়ে তার সামনে দিয়েই রোগী দেখিয়ে দিচ্ছেন। এখানে টাকা দিলেই রোগী আগে দেখানো যায় বলে তিনি আরো অভিযোগ করেন। শুধু পপুলার নয় নগরীর অন্যান্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতেও একই চিত্র। তবে কর্তৃপক্ষের মনিটরিং না থাকার কারণে এ ধরণের ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সচেতন মহলের দাবি, সরকারীভাবে চিকিৎসকদের ফি এর বিষয়ে কোন নির্দেশনা না থাকায় চিকিৎসকরা ইচ্ছামত ফি বাড়িয়ে দিচ্ছেন। আর যেটা সরকারী ডাক্তারি ফি নির্ধারণের প্রক্রিয়া চলছে সেটাও দ্রুত বাস্তবায়ন করা দরকার। চিকিৎসকদের বাড়তি ফি নিয়ন্ত্রণে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
চিকিৎসক ফি বাড়ানোর বিষয়ে এক সিনিয়র চিকিৎসকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, দেশে সবকিছুরই মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই অনুযায়ী ডাক্তারি ফি বাড়ানো হয় না। এটা বেশি বাড়ানো হয়নি। চিকিৎসা নিতে হলেতো ফি দিতেই হবে।
এ বিষয়ে রাজশাহীর সিভিল সার্জন সঞ্জিত কুমার সাহার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাতীয় নীতিমালা না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসকদের ভিজিট ফি নিয়ে ধরা কঠিন হয়ে যাবে। দ্রুত জাতীয় নীতিমালা হওয়া দরকার। তা ছাড়া কোন চিকিৎসক কি পরিমাণ ফি নেন আমরা জানি না। চিকিৎসকের ফি বিষয়ে যে নীতিমালা হওয়ার কথা ছিল তা প্রক্রিয়ধীন রয়েছে। সেটা হলে মনিটরিং করা সহজ হবে। নীতিমালা ছাড়া চিকিৎসক ভিজিট বিষয়ে দেখভাল করতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটা তো পারি। কিন্তু তারা কম বা বেশি ফি নিচ্ছেন তা সুনির্দিষ্ট কাগজ না থাকলে আমাদের উল্টো প্রশ্ন করবে। সেজন্য মনিটরিং করা যায় না।
খবর২৪ঘণ্টা/এমকে
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০