বিশেষ প্রতিবেদক : দূর থেকে দেখলে মনে হবে ত্রাণ বা সাহায্য নেয়ার জন্য মানুষের এ লম্বা লাইন। কিন্তু দূর থেকে দেখা ধারণা একেবারেই সত্য নয়। কারণ লম্বা লাইন টি সাহায্য নেওয়ার জন্য নয়। লম্বা লাইনের মানুষগুলো দাঁড়িয়ে আছে রাজশাহী মহানগরীর বাটার মোড়ের ঐতিহ্যবাহী জিলাপি কেনার জন্য। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে লকডাউনেও ভয় বাদ দিয়ে প্রিয় স্বাদের জিলাপি কেনার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন ক্রেতারা। যদিও ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর এ পরিস্থিতির মধ্যে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে জিলাপি কেনাকে অযুক্তিক হিসেবে দেখছেন। আবার অনেকেই ক্রেতাদের নির্বুদ্ধিতাকেউ দায়ী করছেন। কারণ করোনা পরিস্থিতির মধ্যে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে জিলাপি কেনাটা যুক্তিসঙ্গত মনে করছেন না তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সারা দেশের ন্যায় রাজশাহীতেও করোনার প্রাদুর্ভাব কমাতে চলতি বছরের ১৭ ই মার্চ থেকে রাজশাহী মহানগরীর সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট মার্কেট শপিংমল বন্ধ করে দেয়া হয়। সেই সাথে রাজশাহী থেকে দূরপাল্লার বাস গণপরিবহন ও ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাজশাহীতে প্রথম করো না রোগী শনাক্ত হওয়ার পর চলতি মাসের ১৪ এপ্রিল রাজশাহী জেলাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন ঘোষণা করে দেয়া হয়। লকডাউন এর কারণে রাজশাহী মহানগরীতে ফার্মেসী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকান ছাড়া সবকিছু বন্ধ রয়েছে। আর এর মধ্যেই আসে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন ও আত্মশুদ্ধির পবিত্র মাস পবিত্র মাহে রমজান। লকডাউন থাকার কারণে এ বছর রাজশাহী মহানগরীতে সকল ধরনের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট বন্ধ ছিল। হোটেল রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকায় এবছর ইফতার সামগ্রী কিনতে পারেননি রাজশাহীবাসী। যে যার মত সাধ্য অনুযায়ী নিজ বাড়িতেই তৈরি করছেন ইফতার সামগ্রী।
লকডাউন এর কারণে নগরের অন্যান্য দোকান হোটেল ও রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকলেও গত শনিবার পহেলা রমজান থেকে রাজশাহী মহানগরীর ঐতিহ্যবাহী বাটার মোড়ের জিলাপি ভাজা শুরু করে দোকানের মালিক। এর খবর জানার পর ক্রেতারা দীর্ঘ ৬৬ বছর ধরে সাধ ও গুনেমানে অটুট থাকা বাটার মোড়ের জিলাপি কিনতে ভিড় জমাতে শুরু করে। বিকেল থেকেই ক্রেতারা জিলাপি কেনার জন্য লাইন ধরতে শুরু করে। লাইন ধরে তারা একে একে জিলাপি কিনে নিজ বাড়িতে ফেরেন।
করোনার মধ্যেও জিলাপি কেনার জন্য এমন লাইন সাড়া ফেলেছে নগরবাসীর মধ্যে। কারণ এর আগে রাজশাহীবাসী জিলাপি শুধু নয় অন্যান্য খাবার কেনার জন্য এমন লম্বা লাইন দেখেননি। এটি যেন নগরবাসীর কাছে প্রথম জিলাপির জন্য দেখা বড় লম্বা লাইন। তাও আবার করোনা পরিস্থিতির মধ্যে। এই ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় আলোচনা সমালোচনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহারকারী এটিকে তাদের নির্বুদ্ধিতা হিসেবে দেখলেও কেউ কেউ প্রিয় জিলাপির প্রশংসা করে কমেন্টস করেন।
এদিকে, লোকসানের কারণে সকল হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকায় গত ৩ রমজান পর্যন্ত নগরজুড়ে কোন ইফতার সামগ্রী বিক্রি হয়নি। তবে গতকাল মঙ্গলবার থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত নগরীর হোটেল রেস্টুরেন্ট গুলো ইফতার সামগ্রী বিক্রি করতে পারবে বলে জানিয়েছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ। দোকানের পাশে বা ফুটপাতে কোন ইফতার সামগ্রীর দোকান বসানো যাবে না বলেও জানিয়েছে পুলিশ। কেউ যদি দোকান বসায় তাহলে তাকে তুলে দেয়া হবে। পুলিশের অনুমতির পর থেকেই মঙ্গলবার সকাল থেকে আবারও নতুনভাবে হোটেল রেষ্টুরেন্টগুলো ইফতার সামগ্রী বিক্রির জন্য ইফতার সামগ্রী তৈরি করা শুরু করে।
আরো জানা যায়, ১৯৫২ সালে রাজশাহী নগরীতে ‘রানীবাজার রেস্টুরেন্ট’ নামের একটি দোকানের পথচলা শুরু হয় ব্যবসায়ী তমিজ উদ্দিনের হাত ধরে। তখন মিষ্টির পাশাপাশি জিলাপি বিক্রি করতেন তিনি। ১৯৭৪ সালে তমিজ উদ্দিনের ছেলে শোয়েব উদ্দিন মিষ্টি বাদ দিয়ে শুধু জিলাপি দিয়ে রেস্টুরেন্ট চালু করেন।
সময়ের পরিবর্তনে রানীবাজার রেস্টুুরেন্টের নাম হারিয়ে যায়। যা পরে স্থানের নাম অনুসারে বাটার মোড়ের জিলাপি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। কালের বিবর্তনে ছয় যুগ পার হওয়া বাটার মোড়ের জিলাপির বর্তমানে হাল ধরেছেন তমিজ উদ্দিনের চার নাতি।
শুধু পবিত্র মাহে রমজানের রোজার দিনে লকডাউনের মধ্যেই নয় রাজশাহীর বাটার মোড়ের এর জিলাপির সুনাম রয়েছে মহানগর পেরিয়ে জেলা এবং আশেপাশের জেলাতেও। শিক্ষানগরী রাজশাহীতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পড়াশোনা করতে আসা ছাত্রছাত্রী এবং দর্শনার্থীরা জিলাপি খেতে আসেন এই বাটার মোড়ে। তাইতো এই জিলাপির সুনাম রয়েছে গোটা নগরজুড়ে। আরে জন্য এজন্যই ক্রেতারা করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও দোকানের সামনে লম্বা লাইন ধরে জিলাপি কেনেন ।
এমকে
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- k24ghonta@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০