ওমর ফারুক : উজানের ঢলে ভেসে আসা পানিতে ইতিমধ্যেই ফুলে ফেঁপে উঠেছে শিক্ষানগরী খ্যাত রাজশাহী শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রমত্তা পদ্মা নদী। বর্ষাকাল হওয়ায় পদ্মা নদীতে উত্তাল স্রোত বয়ে যাচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই জনজীবন স্বাভাবিক হওয়ায় বিনোদন পেতে নগরের মানুষ পদ্মা নদীতে নৌভ্রমণ করছেন। উজানের ঢলে আসা পানিতে ফুলে ফেঁপে উঠা ভরা পদ্মা নদীতে লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই নৌভ্রমণ করছেন ভ্রমণ পিপাসু মানুষজন। কিন্ত লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই নৌভ্রমণ করার কারণে যেকোন মুহূর্তে ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বড় ধরণের দুর্ঘটনা। মাত্র কয়েক মাস আগেই বিয়ে বাড়ির রাজশাহীর পদ্মায় বিয়ে বাড়ির নৌকাডুবিতে নববধূসহ ৮ জনের করুণ মৃত্যু হয়েছে। এরপরও লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই পদ্মা নদীতে চলছে বিনোদনের
নৌকা। তবে মাঝিদের দাবি, তারা নৌকায় লাইফ জ্যাকেট রেখেছেন কিন্তু যারা ভ্রমণ করছেন তারা গরমের কারণে লাইফ জ্যাকেট পরতে চাচ্ছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ৮ মার্চ দেশে ৩ জন প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হলে ১৭ মার্চ থেকে সারাদেশের ন্যায় শিক্ষানগরী রাজশাহীর সকল সরকারী ও বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। এর মাত্র কয়েকদিনের মাথায় রাজশাহী থেকে দূরপাল্লার বাস ও গণপরিবহন চলাচলও বন্ধ হয়েছে। ট্রেন ছাড়াও রাজশাহী থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। স্থবির হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকা রাজশাহী নগর। করোনা পরিস্থিতির সময় ঘরে বাইরে ছিল সুনশান নিরবতা। করোনা রোগী শনাক্তের হার বেড়ে চললেও সরকার জুন থেকে লকডাউন শিথিল করলে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই জনজীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করে রাজশাহীতে। আর বর্ষাকাল হওয়ায় রাজশাহীর পদ্মা নদীতেও পানি বাড়তে শুরু করে। এ
জন্য নগরবাসীর জন্য অন্যতম প্রধান বিনোদন কেন্দ্র পদ্মার পাড়েও মানুষের যাতায়াত বাড়তে শুরু করে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটু বিনোদনের জন্য আবারো পদ্মার ধারে যাওয়া শুরু করেছে। আর অনেকেই ভ্রমণ করছেন নৌকা। বিশেষ করে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিনোদনপ্রেমীদের ভিড় বেশি থাকে। পদ্মা নদীতে বেশি পানি থাকার কারণে মানুষ এখন নৌভ্রমণ করছেন। কিন্ত বেশির ভাগ মানুষই মানছেনা স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দূরত্ব। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হলেও কেউ সেই নির্দেশনা মানছেনা। যার কারণে করোনা
সংক্রমণ আরো বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। এতো গেল করোনার কথা কিন্ত পদ্মা নদীতে নৌভ্রমনে কেউ মানছেনা নির্দেশনা। বর্তমানে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে বিনোদনের জন্য ৬০টি নৌকা চলে। এসব নৌকাগুলো রাজশাগীর টি-বাঁধ, আইবাঁধ, পদ্মা গার্ডেন, ও মুক্তমঞ্চ সংলগ্ন নৌকা থেকে চালানো হয়। যারা রাজশাহী মহানগর লাগোয় পদ্মা নদীতে বিনোদনের নৌকা হিসেবে ব্যাবহার করে। রাজশাহী নৌ পুলিশ এসব নৌকার মাঝিকে যাত্রীদের বাধ্যতামূলক লাইফ জ্যাকেট পরিয়ে ভ্রমণের জন্য নির্দেশনা দিলেও সেটি বাস্তবায়ন হচ্ছেনা। পুলিশের দেয়া নির্দেশনা নৌকার মাঝিরা মানছেনা। তারা যাত্রীদের দোষ দিয়েই পার পেয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
প্রায় মাঝি অভিযোগ করছেন, নৌকার যাত্রীরা গরমের কারণে লাইফ জ্যাকেট পরছেনা। কিন্ত পুলিশের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া আছে যারা লাইফ জ্যাকেট পরবেনা তাদের নৌকায় উঠানো যাবেনা। কিন্ত মাঝিরা যাত্রীদের বাধ্য করছেনা বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনিক কোন কোন নৌকায় পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেটও থাকেনা। এ কারণেও যাত্রীদের বাধ্য করা হয়না বলে অভিযোগ রয়েছে।
পদ্মায় এখন বেশি পানি থাকার কারণে নৌকা ডুবেও যেতে পারে বা কোন যাত্রী পড়ে যেতেও পারে। লাইফ জ্যাকেট থাকলে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কিন্ত জ্যাকেট না থাকলে নৌকাডুবিতে বা নৌকা থেকে ছিটকে পড়লে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিনোদনের নৌকা ছাড়াও রাজশাহীতে মাছ ধরা প্রায় ৬০০টি নৌকা চলে। এসব নৌকার মাঝিরাও লাইফ জ্যাকেট পরেন না। তবে জেলা প্রশাসন অফিস থেকে লাইফ জ্যাকেট পরার ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া ছিল। লাইফ জ্যাকেট না পরার কারণে মাত্র কয়েক মাস
আগে বিয়ে বাড়ির নৌকাডুবিতে নববধূসহ ৮ জনের মৃত্যু হয়। তারপরও কেউ সচেতন হচ্ছেনা। ডিঙ্গি নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী তোলার কারণে নৌকাটি ডুবে গিয়েছিল।
নৌকা ভ্রমণ করতে আসা সাইফ নামের এক যুবক বলেন, নৌকায় উঠার পর মাঝিরা তেমনভাবে লাইফ জ্যাকেট পরার ব্যাপারে বলেনা। তারা যাত্রী পেলেও হলো। আপনি নিজে পরেননি কেন এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, পরা হয়নি। নৌকায় ভ্রমণ করা আরেক নারী বলেন, নৌকায় সবার জন্য লাইফ জ্যাকেট ছিলনা তাই পরা হয়নি। পরে নৌকা ভ্রমণ করলে পরবো। এক নৌকা চালকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট পরতে বলি। তারা গরমের কারণে পরতে চাইনা। আমাদের কি দোষ বলুন? আপনারা জোর করেন না এমন প্রশ্ন করলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
রাজশাহী নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মেহেদি মাসুদ বলেন, রাজশাহীর পদ্মায় বিনোদনের জন্য চলাচলকারী নৌকাগুলোকে লাইফ জ্যাকেট পরিয়ে নৌভ্রমণ করানোর জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। কোন যাত্রী লাইফ জ্যাকেট না পরতে চাইলে তাকে নৌকাই উঠাতে নিষেধ করা হয়েছে। যদি কেউ নির্দেশনা না মেনে নৌকা ভ্রমণ করায় বা কোন যাত্রী করে তাহলে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এমকে
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- k24ghonta@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০