নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনা ভাইরাস এর প্রাদুর্ভাব বাড়ার পর থেকেই রাজশাহী মহানগরীর বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোতে চেম্বারে রোগী দেখছেন না চিকিৎসকরা বলে অভিযোগ উঠেছে। চিকিৎসকরা প্রাইভেট ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে রোগী না দেখায় বিপাকে পড়েছেন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত চিকিৎসা সেবা প্রত্যাশী মানুষজন। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে আতঙ্কে চিকিৎসকরা প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে চিকিৎসকদের নিয়মিত প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার ব্যাপারে উৎসাহ দিচ্ছেন রাজশাহী সিভিল সার্জন ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক।
এ দুই প্রতিষ্ঠানের প্রধান চিকিৎসকদেরকে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে রোগীদের সেবা দেয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করছেন। তবে এখনো অধিকাংশ ডাক্তারকে চেম্বার করতে দেখা যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীসহ সারাদেশে করোনাভাইরাস এর প্রাদুর্ভাব কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। শুধু তাই নয় রাজশাহী থেকে দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়। একপর্যায়ে সারাদেশের ন্যায় নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসের দোকান ছাড়া অন্যান্য মার্কেট ও দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে আস্তে আস্তে প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে বসা বন্ধ করে দেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে চিকিৎসকরা রোগী দেখা বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে বিপাকে পড়েছেন চিকিৎসা প্রত্যাশী সাধারণ মানুষজন। তবে এ নিয়ে চিকিৎসা প্রত্যাশীদের অভিযোগ না থাকলেও রয়েছে নিজেদের চিকিৎসার জন্য মানবিক অনুরোধ। কারণ চিকিৎসা প্রত্যাশীরা আল্লাহ তাআলার পরে চিকিৎসকদের ওসিলায় সুস্থ হতে পারেন। এ সময় চিকিৎসকদের সেবার মনোভাব নিয়ে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা করার জন্য অনুরোধ করছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরীর চিকিৎসাপাড়া হিসাবে খ্যাত লক্ষ্মীপুর ও আশেপাশের এলাকায় প্রায় শতাধিক এর উপরে ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে। এই ক্লিনকি- ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও দেশের বিভিন্ন স্থানের নামকরা চিকিৎসকগণ নিয়মিত রোগী দেখেন। চিকিৎসা নেওয়ার জন্য রাজশাহী এ রংপুর বিভাগ ছাড়াও খুলনা বিভাগের বেশ কিছু জেলার মানুষজন চিকিৎসা নিতে আসেব। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানের রোগীদের পদচারণায় মুখরিত থাকে বেসরকারি ক্লিনিক হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো। বিশেষ করে দুপুরের পর থেকে ক্লিনিকগুলোতে রোগী দেখেন চিকিৎসকরা। কিন্ত ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে বেশ কিছুদিন ধরে এই এলাকার প্রায় ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক বন্ধ থাকছে দু'একটি খোলা থাকলেও সেগুলোতে এমন কোন ডাক্তার না বাসায় অবসর সময় কাটাচ্ছেন এসব ক্লিনিকে কর্মকর্তা-কর্মচারী।
তবে চিকিৎসা প্রত্যাশী মানুষজন বলছেন করোনা ভাইরাস এর যেসব লক্ষণ রয়েছে এসব ছাড়াও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ। শুধু জ্বর সর্দি কাশি নিয়েই হাসপাতলে লোকজন আসেন না অন্যান্য রোগেও মানুষজন চিকিৎসা নিতে আসেন। এসব রোগীদের চিকিৎসা পাওয়া অত্যন্ত জরুরী না হলে আরও বিপাকে পড়বে সাধারণ মানুষ। চিকিৎসকরা নিজেদের নিরাপত্তা ঠিক রেখে মানুষের চিকিৎসা করা প্রয়োজন। এ সময় চিকিৎকদের ভূমিকা থাকলে মানুষ চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। দু এক জায়গায় রোগী দেখার কথা বলা হলেও সেসব জায়গায় মোবাইল ফোনে চিকিৎসকদের সাথে পরামর্শ করে ঔষধ লেখা বা টেস্ট করানো হচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক কয়েক দফায় চিকিৎসা না পেয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। এছাড়াও মঙ্গলবার দুপুরে নজরুল ইসলাম নামের এক চিকিৎসা প্রত্যাশী মানুষ খবর ২৪ ঘন্টা কে জানান, রাত থেকে তার বুকে ব্যথা ছিল। সেই ব্যথায় হঠাৎ আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি তাই তাই বেসরকারি ক্লিনিক হাসপাতাল গুলোর চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হয়।
কিন্তু আমি ৫ থেকে ৬ টি ক্লিনিকে গিয়েও নিজের চিকিৎসা করাতে পারেনি। কখন বসবে এমন বিষয়ে সেখানে কর্তব্যরত কর্মচারীদের কাছ থেকে জানতে চাইলে তারা এ তথ্য জানাতে পারেনি। তারা বলছেন এখন চিকিৎসকরা রোগী দেখছেন না দু-একজন দেখলেও সময়ের ঠিক নেই। তিনি আরো বলেন, করোনা ছাড়াও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে মানু। তাই চিকিৎসকরা দয়াকরে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা দেয়া শুরু করুন। মানুষ আপনাদের এই সেবা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে।
মঙ্গলবার দুপুরে সৌরভ নামের এক লোক জানান, তিনি বেশ কয়েকদিন ধরে চিকিৎসার জন্য ঘুরছেন কিন্তু তিনি ডাক্তার দেখাতে পারছেন না। ক্লিনিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলছেন চিকিৎসকরা এখন রোগী দেখছেন না। অন্য জায়গায় চেষ্টা করুন। শুধু ওই ব্যক্তি নন রাব্বুল নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমার আম্মা অসুস্থ ছিল তাকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য কয়েকদিন করেছে কিন্তু পায়নি। এসময় লক্ষ্মীপুরে অবস্থিত বড় বড় বেসরকারি হাসপাতালগুলো তো একই অবস্থা। তাই আমি ডাক্তারদের চিকিৎসা দেওয়ার ব্যাপারে অনুরোধ জানাচ্ছি। বেসরকারি ক্লিনিক গুলোতে চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে একমাত্র এখন সরকারি হাসপাতালে রোগীদের ভরসা। রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা সাইফুল ফেরদৌস বলেন, রামেক হাসপাতাল ২৪ ঘন্টা খোলা আছে। যে কোন রোগের চিকিৎসা নিতে পারবেন কোন সমস্যা নেই।
কোন রোগীকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়নি। রাজশাহী সিভিল সার্জন ডাক্তার এনামুল হক বলেন, চিকিৎসকরা যাতে নিজেদের নিরাপত্তা ঠিক রেখে রোগী দেখেন সে বিষয়টি নিয়ে তাদের অনুরোধ করা হবে। এ বিষয় নিয়ে সদর আসনের সাংসদ সহ অন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে আলোচনা করা হয়েছে। ডাক্তারদের সংগঠন কে রোগী দেখার ব্যাপারে অনুরোধ জানানো হবে যাতে চিকিৎসকরা নিজেদের সুরক্ষা ঠিক রেখে রোগীদের সেবা দেন।
রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক গোপেন্দ্রনাথ আচার্য বলেন, চিকিৎসকরা যাতে রোগী দেখেন এ বিষয় নিয়ে তাদের সাথে কথা বলা হবে। তবে অনেক চিকিৎসক জানিয়েছেন তারা রোগী দেখছেন আরো চিকিৎসকদের উদ্ভুদ্ধ করা হবে রোগী দেখার ব্যাপারে। রাজশাহী জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বলেন, এই সময় চিকিৎসকদেরকে নিজেদের নিরাপত্তা ঠিক রেখে রোগী দেখার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি যাতে কেউ কষ্ট না পায়।
এমকে
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০