নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী মহানগরীর উপশহর হাউজিং এষ্টেটের ১ নং সেক্টরের ৬২৭/১ নং প্লটে অবস্থিত উপশহর মহিলা ঈদগাহ মাঠ ব্যক্তির নামে বরাদ্ধ দিয়েছেন জাতীয় গৃহায়ন কতৃপক্ষ রাজশাহী ডিবিশনের কর্মকর্তারা। ইতিমধ্যে ঈদগাহ উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে চিঠি প্রদান করা হয় এবং ২১ নভেম্বরের মধ্যে তা উচ্ছেদের জন্য বলা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে তা দুই সপ্তার জন্য স্থগিত করা হয়। ঈদগাহ বরাদ্ধ দেয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা ঈদগাহর ওই প্লটটি বাদ দিয়ে হাউজিং এষ্টেটের ফাঁকা থাকা অন্য যে কোন প্লট বরাদ্ধের দাবি জানান।
সূত্রে জানা গেছে, উপশহর হাউজিং এষ্টেটেটের সেক্টর নং ১ এর ৬২৭/১ নম্বর প্লটি জাতীয় গৃহয়ান কর্তৃপক্ষ মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষা সৈনিক মোশারফ হোসেন আখুঞ্জিকে বরাদ্ধ দেন। এই সংক্রান্ত একটি চিঠিও তাকে দেয়া হয়। গত ২০১৪ সালের ৩০জুন স্মারক নং জাগক/রাডি/রাজশাহী/৬২৭/১/১১০০ মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষা সৈনিক মোশারফ হোসেন আখুঞ্জি বরাবর জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ রাজশাহী ডিবিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয় গত ৩০ মার্চ তারিখে কর্তৃপক্ষের ১২৫তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক রাজশাহী হাউজিং এষ্টেটের সেক্টর নং-০১, প্লট নং-৬২৭/১ নি¤েœ বর্ণিত শর্তানুসারে আপনার অনুকুলে ৯৯ বছরের জন্য লীজ প্রদানের নিমিত্তে বরাদ্দ দেয়া হলো। এ বরাদ্দপত্র সংশ্লিষ্ট প্লটের উপর আপনার কোন স্বত্ত্ব প্রদান করেনা। প্লটের আয়তন কমবেশি সাড়ে ৪কাঠা ও সাময়িক ভাবে প্রতি কাঠা জমির মূল্য সাত লক্ষ টাকা হিসেবে প্লটের মূল্য একত্রিশ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা। সুদাসলে পরিশোধ যোগ্য কিস্তির মোট টাকা ৩৫ লাখ ৭৫ হাজার ২শ ৫০টাকা। পরে প্রশাসনকে দেয়া আরেক চিঠিতে সেখান থেকে স্থাপনা উচ্ছেদ করে মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষা সৈনিক মোশারফ হোসেন আখুঞ্জিকে প্লট বুঝিয়ে দেয়ার জন্য বলা হয়। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ রাজশাহী ডিবিশনের কর্মকর্তারা সরেজমিনে না দেখেই প্লটটি বরাদ্ধ দেন বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। তারা বলেন ওই প্লটটি বাদ দিয়ে অন্য প্লট বরাদ্ধ দেয়া হোক। একমাত্র মহিলা ঈদগাহ রক্ষার জন্য গত ২৩ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারক লিপি দিয়েছে এলাকাবাসী।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর টুটুল, ১৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুস সোবহান, সংরক্ষিত জোন ৫ এর কাউন্সিলার সামসু নাহার, এলাকাবাসীসহ ৬৩জন স্বাক্ষরিত ওই স্মারক লিপিতে বলা হয় উপশহর ১ নম্বর সেক্টরের ৬২৭/১ নম্বর প্লটটি প্রায় দুই যুগ ধরে মহিলা ঈদগাহ মাঠ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। প্লটের মূল নকশায় সম্ভবত ছেলে মেয়েদের খেলাধূলার জন্মুক্ত ছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে হাত নকশায় প্লট আকারে বরাদ্দের জন্য নম্বর দেয়া হয়েছে। উপশহরের মহিলা ছাড়াও পাশ্ববর্তী এলাকা থেকে মহিলারা এসে পবিত্র ঈদের নামাজ আদায় করেন। এলাকাবাসীর অনুরোধে সিটি করপোরেশনের অর্থায়নে ঈদগাহ মাঠের সীমানা প্রাচীর, গেট এবং মেহেরাব নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতি ঈদে মহিলারা যাতে এখানে নামাজ পড়তে পারে সেজন্য রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ডেকারেশন বাবদ অর্থ বরাদ্দ দেন। শুধু সিটি করপোরেশন নয় সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, সংসদ সদস্য আখতার জাহানসহ অনেকে অর্থায়ন সহ সার্বিক সহযোগীতা করেন। এমতাবস্থায় প্রায় দুই বছর আগে হঠাৎ করে একদিন মুক্তিযোদ্ধা এবং ভাষা সৈনিক মোশারফ হোসেন আখুঞ্জি পুলিশসহ উক্ত প্লটটি দখল নেবার জন্য উপস্থিত হন এবং তিনি এলাকাবাসীকে বলেন মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষা সৈনিক হিসেবে তিনি প্লটটি বরাদ্দ পেয়েছেন। শহরের কোটিপতি, সাহেব বাজারে অবস্থিত ১নং গদি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক ও টাঙ্গাইল শাড়ি ঘর দোকানের মালিক মুক্তিযোদ্ধা এবং ভাষা সৈনিক মোশারফ হোসেন আখুঞ্জি এ ঈদগাহ মাঠের সাড়ে ৪কাঠা জমি নির্বাহী প্রকৌশলী, রাজশাহী ডিবিশন, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ সপুরা রাজশাহী কর্তৃক বরাদ্দ পাওয়ায় এলাকাবাসী চরম হতাশ ও মমাহত হয়েছে।
স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, উক্ত বিষয়ের প্রেক্ষিতে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আশ্বস্ত করেন মহিলা ঈদগাহ মাঠ বহাল রেখে হাউজিং এস্টেটের অন্য কোন ফাঁকা মাঠ তাঁর নামে বরাদ্দ দেয়া হবে। এ ব্যাপারে তিনি ঢাকায় গিয়ে চেয়ারম্যান জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের আলোচনা করেন। সেসময় চেয়ারম্যান আশ্বাস দেন এবং তাৎক্ষনিকভাবে তিনি নির্বাহী প্রকৌশলী রাজশাহী হাউজিং এস্টেটকে ঈদগাহ মাঠ বহাল রেখে অন্যত্র মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষা সৈনিককে প্লট বরাদ্দের নিমিত্তে প্রস্তাব প্রেরনের জন্য টেলিফোনের মাধ্যমে নির্দেশনা প্রদান করেন। কিন্তু তারপরও সাম্প্রতি চেয়ারম্যান জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, গৃহায়নভবন, সেগুন বাগিচা, ঢাকা এবং নির্বাহী প্রকৌশলী রাজশাহী ডিবিশন, রাজশাহী গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ সপুরা কার্যলয় হতে ইসুকৃত চিঠির মাধ্যমে জানা যায়, উক্ত প্লটটির অবৈধ দখলদার এবং স্থাপনা ২১ নভেম্বরের মধ্যে উচ্ছেদের জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসক ও পুলিশ প্রশাসনকে চিঠি দেয়া হয়। যা অনিবার্য কারন বশত মাত্র দুই সপ্তার জন্য স্থগিত করা হয়। স্মারকলিপিতে প্রধানমন্ত্রীর এলাকাবাসী দাবি জানিয়ে বলেন হাউজিং এস্টেটের আরও কয়েকটি প্লট ফাঁকা আছে। বর্তমান প্লট ৬২৭/১ বরাদ্দ বাতিল করে তাঁর নামে অন্যকোন প্লট বরাদ্দের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হোক।
এ ব্যাপারে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ রাজশাহী ডিবিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী পরিমল কুমার কুরির সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য তার ০১৭২৬৫০১৫৯২ মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেন নি। ফলে তার কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
খবর২৪ঘণ্টা/এমকে
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- k24ghonta@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০