নিজস্ব প্রতিবেদক : ইতিমধ্যেই রাজশাহী মহানগরীতে প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ বিস্তার লাভ করেছে। রাজশাহী বিভাগের মধ্যে প্রতিদিন শনাক্ত রোগীর হারে রাজশাহী মহানগর শীর্ষে রয়েছে। জেলায় করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ধরা পড়া চার মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো সচেতন হয়নি মানুষ। মাস্ক ছাড়াই ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়াচ্ছে মানুষ। যেন করোনাই এখন আর নেই এমন মনোভাব মানুষের মধ্যে। কিন্ত তুলনায় বেশ কয়েকগুণ বেশি হয়েছে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা। শনাক্তের সারিও লম্বা হচ্ছে। কিন্ত মানুষের
মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছে না। ঘুরছে ইচ্ছেমত। আর এতে করেই সেই মানুষ ও তার পরিবার আরো বেশি সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সরকারী-বেসরকারী সংস্থার পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা চালানো হলেও বেশির ভাগ মানুষ এতে কর্ণপাত করছেনা। বর্তমানে কাঁচা বাজারসহ বিভিন্ন মার্কেটে মানুষজন স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দূরত্ব না মেনেই চলাচল করছে। এতে আরো করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রথম করোনা ভাইরাস রোগী শনাক্ত হওয়ার পর দূরপাল্লার যানবাহন, গণপরিবহন, ট্রেন চলাচর ও বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। এর কিছুদিনের মধ্যেই অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বের হওয়া মানুষকে ঘরে ফেরাতে ও বাড়ির বাইরে বের হওয়া থেকে মানুষ নিরুৎসাহিত করতে দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় সেনাবাহিনী নামানো হয়। সেনাবাহিনীর পাশপাশি মাঠে র্যাব, পুলিশ ও জেলা প্রশাসন দায়িত্ব পালন করে। তখন থেকে মানুষকে মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য উদ্ভুদ্ধ করা হয়। আর যারা ঘরের বাইরে বিনা প্রয়োজনে বের হতো তাদের লঘু শাস্তিও দেয়া হতো। এরমধ্যেই চলতি বছরের ১২ এপ্রিল রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলায় প্রথম নারায়ণগঞ্জ ফেরত করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর রাজশাহী জেলাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউনঘোষণা করে দেয়া হয়। তারপর জেলায় রোগী বাড়তে থাকলেও মহানগরীতে ১ মাস তিন দিন পর ১৫ মে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। পরে রোগী শনাক্ত হলে
নগরীতে করোনা শনাক্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বিশেষ করে সরকার লকডাউন শিথিল করে যানবাহন চলাচল, ব্যবসা বাণিজ্য খুলে দেয়। এরপর থেকে আরো বেশি করোনা শনাক্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। প্রায় শনাক্তের সংখ্যায় নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। তখন শারীরিক দূরত্ব মেনে কাঁচা বাজার চললেও এখন আর সেই নিয়মের বালাই নেই। এরমধ্যেই স্বাভাবিক হয়েছে রাজশাহী মহানগরীর মানুষের দৈনন্দিন জীবন।
সকাল থেকেই রাত পর্যন্ত খোলা থাকছে দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কিন্ত বেশির ভাগ স্থানেই স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দূরত্ব মেনে চলতে দেখা যায়নি। কাঁচা বাজার ও ব্যাংকগুলো এবং কুরিয়ার সার্ভিস ও মার্কেটগুলোতেও একই অবস্থা। কেউ মাস্ক পরলেও ঝুলিয়ে রাখছে। এ কারণে তার মাস্ক পরে কোন লাভ হচ্ছেনা। আবার অনেক মানুষ মাস্ক পরছেনা। এ নিয়ে যেন তাদের কোন ভ্রæক্ষেপই নেই। করোনা বলতে নগরে কিছু নেই এমন অবস্থা তাদের।
শুধু তাই নয় ভাজাপোড়ার দোকানও চলছে দেদারছে। মানুষজন রাস্তার উপরও দাঁড়িয়ে
দাঁড়িয়ে সে সব খাবার খাচ্ছে। ক্রেতা-বিক্রেতা কারো মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি। এদিকে, নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টেও একই অবস্থা দেখা গেছে। এখানে জনাকীর্ণ এলাকা হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি আরো বেশি উপেক্ষিত এই এলাকায়। এ এলাকার কাঁচা বাজার, মার্কেট ও দোকানপাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধির কোন তোয়াক্কা দেখা যায়নি।
নগরীর কোর্ট স্টেশন কাঁচা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতা কারো মুখেই মাস্ক নেই। বিশেষ করে বিক্রেতারা মাস্ক পরেই না। দুই/একজন পরলেও বেশির ভাগ পরেনা। ক্রেতা-বিক্রেতাকে খুব কাছাকাছি থেকে লেনদেন করতে দেখা যায়। কেউ এর তোয়াক্কা করছে না। এ ছাড়াও অটোরিক্সাগুলোতে গাদাগাদি করে বসছে মানুষ। সেখানেও স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দূরত্ব উপেক্ষিত হচ্ছে। আবার যাত্রী ও চালকদের মুখে মাস্কও দেখা যায়না।
তবে স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে নগর ও জেলাজুড়ে পরিচালিত হচ্ছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন জরিমানা করা হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দূরত্ব মেনে চলার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হচ্ছে।
এমকে
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০