নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে শীতকালীন আগাম সবজি চাষীদের মাথায় হাত পড়েছে। একারনে প্রায় দেড়'শ কোটি টাকার ওপরে লোকশান গুনতে হবে সবজি চাষীদের।
তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে সবজিক্ষেতে পানি জমার কারনে শীতকালীন সবজিগাছে পচন ধরেছে। এ ছাড়া শীতকালীন সবজির বীজতলাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বেকায়দায় পড়েছেন সবজিচাষিরা। বিশেষ করে জেলার মধ্যে পবা, মোহনপুর, দুর্গাপুর, পুঠিয়া উপজেলায় বেশী পরিমানে সবজি চাষ হয়। উপজেলা গুলোর নীচু ও সমতল ফসলী জমিতে জমে আছে হাঁটু পানি।
ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, সিম, কাঁচা মরিচ, বেগুন, কলা, পটল, করলা, ঢেড়শসহ ও শীতের আগাম সবজির ক্ষেতে পানি জমে যাওয়ায় প্রায় নষ্ট হতে বসেছে প্রায় ১হাজার হেক্টর জমির ফসল। হুমকিতে জেলার প্রায় অন্তত ৪ হাজার হেক্টর কৃষি জমির ফসল। এতে প্রায় শতকোটি টাকার ওপরে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষীরা।
পবা উপজেলার বড়গাছী এলাকার সবজি চাষি রানা বলেন, 'চারা রোপনের ৪৫ থেকে ৫০ দিনের মধ্যেই ফুল কাটা হয়। খরচ বাদে প্রতিবিঘায় দুই থেকে আড়াই লাখ এবং হেক্টর প্রতি প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার সবজি বিক্রি হয়।
রাজশাহী জেলার শীতকালীন আগাম সবজি গুলো আর ১৫ দিনের মধ্যে বাজারজাত করা যেতো। কিছু কিছু জমির সবজি বাজারজাত শুরু হয়ে গেছে, ঠিক সেময়েই টানা বৃষ্টির কারনে জেলায় প্রায় ১হাজার হেক্টর জমির সবজি পঁচে ও মরে নষ্ট হতে পারে বলে আশংকা চাষীদের। এতে প্রায় দেড়'শ কোটি টাকা লোকশানের মূখে পড়েছেন চাষীরা।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর উপপরিচালক অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছ, খরিপ-২ মৌসুমে এবার রাজশাহী জেলায় ৫ হাজার ৫২৬ হেক্টর জমিতে আগাম শীতকালীন আগাম সবজির চাষ হয়েছে।
বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত জনজীবনে কৃষক তাঁর কৃষি কাজ চালিয়ে গেলেও সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহের টানা বৃষ্টির কারনে প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়ে যাবে বলে বলছেন সবজিচাষীরা।
সবজি ক্ষেতের গাছের গোড়ায় বৃষ্টির পানি জমে থেকে ফসলের গাছ পঁচে ও মরে যাওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
দুর্গাপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের চুনিয়াপাড়া গ্রামের সবজিচাষী নয়ন আলী বলেন, আমি ২৭দিন পূর্বে দেড় বিঘা জমিতে ফুলকপির চারা রোপন করেছি। তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে সবজির জমিতে জমে যাওয়ায় সবজি গাছগুলো পঁচে মরে যাচ্ছে। এতে তিনি তার দেড় বিঘা জমিতে প্রায় ৪ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতির আশংকা করছেন।
মোহনপুর উপজেলার মৌগাছী কালিগাঁয়ের মরিচ চাষি ময়েজ উদ্দীন বলেন, মরিজের জমিতে পানি জমে আছে , মরিচের গাছগিলোতে পর্যাপ্ত মরিচ ধরে থাকলেও গাছের ক্ষতি হবে ভয়ে আমরা মরিচ তুলতে পারছি না। মরিচ গাছ ভেঙে আর পানি জমে পঁচে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছি।
পুঠিয়া উপজেলার দোমাদী গ্রামের সবজি চাষী শরীফুল ইসলাম জানান, তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে জমিতে পানি বেঁধে যাওয়ায় ঝিঙা, শিম, কচু, ঢেড়স, চিচিঙ্গা এধরনের ফসলের গাছে-লতায় পচন ধরার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। কিছু কিছু ফসল ইতোমধ্যেই নষ্ট হওয়া শুরু হয়েছে।
দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষিকর্মকর্তা মকলেছুর রহমান জানান, তিনদিনের টানাবৃষ্টিতে সবজি চাষীদের ব্যাপকমল ক্ষতি হয়েগেছে। এই বিরামহীন বৃষ্টি চলতে থাকলে সবজি, ধান ও অন্যান্য চাষাবাদে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এই মুহূর্তে জমি থেকে যত দ্রুত সম্ভব পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা জরুরি।
এবিষয়ে রাজশাহী কৃষিসম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে সালমা বলেন, এবছর রাজশাহী জেলাজুড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন আগাম সবজির আবাদ হয়েছে। তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে নীচু ও সমতল কিছু জমির সবজির ক্ষেতে পানি বেঁধে থাকায় ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে। তবে আর যদি বৃষ্টি না হয় এবং জমিতে বেঁধে থাকা পানি নিস্কাশন করা গেলে অনেকটাই ক্ষতির হাত থেকে বাঁচবেন চাষীরা।
বিএ.
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০