বিশেষ প্রতিনিধি :
রাজশাহী মহানগর ও আশেপাশের উপজেলাগুলোতে সরকারী নির্দেশনা মেনে আলুর দাম কমানো হয়নি। এ কারণে ক্রেতারা সরকার কর্তৃক বেঁধে দেয়া ৩০ টাকা কেজিতে আলু কিনতে পারেননি। শুধু রাজশাহী মহানগরীর বাজারগুলোতেই নয় নগরের বাইরে উপজেলার বাজারগুলোতেও আলু অন্যান্য দিনের মতো ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। অনেক ক্রেতাই অভিযোগ করেছেন, সরকার কর্তৃক বেঁধে দেয়া ৩০ টাকা কেজির
কথা স্মরণ করিয়ে দিলে তারা বলেন, তাহলে আলু সরকারের কাছ থেকে কিনেন। ১ টাকা কমেও আলু বিক্রি করা যাবে না। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বাজার ও পাড়া-মহল্লার অস্থায়ী দোকানে ৫০ টাকা কেজিতেই আলু বিক্রি হয়। এ নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ সরকারী নির্দেশনা মানা হয়নি। তারপরও তারা বাজারে সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আলু বিক্রি করেন। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারি করা হয়েছে। দাম না কমালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্ত ডিসি অফিসের এমন নির্দেশনা ব্যবসায়ীরা মানেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত প্রায় এক মাস ধরে আলুর দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। ব আগে ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও হঠাৎ করে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি শুরু হয়। আলুর দাম অস্বাভাবিক হওয়ায় বিপাকে পড়েন নি¤œ আয়ের মানুষ। বিষয়টি সরকারেরও নজরে আসে।
অস্থির বাজার নিয়ন্ত্রণে আলুর দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। তবে এখনও খুচরা বাজারে মানা হচ্ছে না সরকারের (কৃষি বিপণন অধিদফতর) কর্তৃক নির্ধারিত আলুর দাম। সরকার আলুর দাম হিমাগারে ২৩, পাইকারিতে ২৫ এবং খুচরা কেজিতে ৩০ টাকা কেজি নির্ধারণ করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর বাজারগুলোতে লাল আলু ৫০ টাকা এবং সাদা আলু ৪৫ টাকা দরে কেজিতে বিক্রি হতে দেখা যায়। নগরীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে এ তথ্য জানা গেছে। শুধু নগর নয় এর বাইরের উপজেলার বাজারগুলোতেও বেশি দামে আলু বিক্রি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
সরকারি তথ্য মতে, আলু উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম অঞ্চল রংপুর। পাইকারী ব্যবসায়ীদের দাবি, হিমাগারগুলোই কৃত্রিমভাবে সংকট সৃষ্টি করছে। কৃষি আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না সরকার। গত মৌসুমে রংপুর অঞ্চলে আলুর উৎপাদন ছিলো ৩৮ লাখ মেট্রিক টন। আর এই অঞ্চলের আনুমানিক
চাহিদা প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন। সেই হিসেবে উদ্বৃত্ত আছে ২৮ লাখ মেট্রিক টন আলু। কৃষি বিপণন অধিদফতর সূত্রে জানাযায়, বাংলাদেশে গত আলুর মৌসুমে প্রায় এক দশমিক নয় কোটি মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। দেশে মোট আলুর চাহিদা প্রায় ৭৭ দশমিক নয় লাখ মেট্রিক টন। এতে দেখা যায় যে, গত বছর উৎপাদিত মোট আলু থেকে প্রায় ৩১ দশমিক ৯১ লাখ মেট্রিক টন আলু উদ্বৃত্ত থাকে। কিছু পরিমাণ আলু রপ্তানি হলেও ঘাটতির আশঙ্কা নেই। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর আরও জানা যায়, মাঠ পর্যায়ে কেজিপ্রতি আলুর উৎপাদন খরচ ৮ টাকা ৩২ পয়সা। হিমাগার পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায় ২৩ টাকা। পাইকারী ও আড়তদার পর্যায়ে ২৫ টাকা আর ভোক্তা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৩০ টাকার বেশি দামে আলু বিক্রি অযৌক্তিক। রংপুর বিভাগে হিমাগারের সংখ্যা ৯০টি। যেখানে মজুদ রয়েছে সাড়ে ৯ লাখ মেট্রিক টন আলু। কয়েক দফা বন্যায় সবজির ক্ষতিকে পুঁজি করে হিমাগারগুলো থেকেই আলু বিক্রি হচ্ছে বস্তা প্রতি ৩৬শ টাকা। যা কেজিতে দাঁড়ায় ৪২ টাকা। পাইকারদের দাবি হিমাগারগুলোই কৃত্রিমভাবে সংকট সৃষ্টি করছে। নগরীর
পাইকাররা বলছেন, আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে বাজারে নয়, হিমাগারে অভিযান চালানো উচিৎ। এদিকে আলুসহ নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন ক্রেতারা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর রাজশাহীর উপ-পরিচালক অপূর্ব অধিকারী বলেন, সরকারের এমন নির্দেশনার পর ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে সরকার কর্তৃক বেঁধে দেয়া দামে আলু বিক্রির কথা জানানো হয়েছে। যদি কোন ব্যবসায়ী না মানে তাহলে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. শরিফুল হক বলেন, সরকারী নির্দেশনা পাওয়ার পর বাজার নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করছে। ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে সরকার কর্তৃক বেঁধে দেয়া দামে আলু বিক্রির জন্য বলা হয়েছে। প্রথম দিন বলা হয়েছে। পরে আর বলা হবে না কেউ যদি বেশি দাম নেয়ার চেষ্টা করে তাহলে আইনগত ব্যবস্তা নেয়া হবে।
এস/আর
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০