ঢাকাসোমবার , ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রাজশাহীতে ভুয়া দুদক কর্মকর্তা মিলনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৫

নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২২ ৯:৪৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

রাজশাহী মহানগরীতে দুদক সোর্স ও দুদকের অফিসার পরিচয়ে দুইজন ব্যক্তির কাছ থেকে ৮ লক্ষ টাকা প্রতারণার দায়ে নূরে ইসলাম মিলন (৪৫) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৫, এর সদস্যরা।

রোববার (২০ ফেব্রুয়ারী) দিবাগত রাত পৌনে ৯টার দিকে মহানগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন সাগরপাড়া বটতলা মোড় থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। মিলন দৈনিক উপচার পত্রিকার যুগ্ন সম্পাদক পরিচয় বহনকারী।  মহানগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন মিয়াপাড়া এলাকার মৃত ডাবলুর ছেলে।

এ বিষয়ে সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারী) বিকাল সোয়া ৪ টায় বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী মোঃ আব্দুল গাফ্ফার ওরফে হেলাল (৫৬) বোয়ালিয়া বিসিক শিল্প নগরী এলাকার মৃত আঃ ছাত্তার এর ছেলে।   বোয়ালিয়া থানার মামলা নম্বার- ৩৪, ধারা- ১৭০/৪০৬/৪২০ পেনাল কোড।

মামলার এজাহারের থেকে জানা যায় মামলার বাদী হেলাল এর সাথে জনৈক মোঃ রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির কাছে জমি বিষয়ে ১২ লক্ষ টাকা বায়না করে। কিন্তু ওই জমি হাবিবুর রহমান নামের এক ব্যক্তি জবরদখল করে রাখে। এনিয়ে বাদী হেলাল কোর্টে ঘোরাঘুরি করার সময় আসামী মিলনের সাথে পরিচয় হয়। সে নিজেকে দুদকের একজন ঘনিষ্ট সোর্স পরিচয় দিয়ে জমি উদ্ধার করে দিবে বলে বাদীর কাছে ১০ লক্ষ টাকা দাবী করে।

এরপর বাদী গত (৫ অক্টোবর ২০২০) তারিখ দুপুর ১২টায় আসামী মিলনকে আগ্রিম ৫লক্ষ টাকা প্রদান করে। পরবর্তীতে মিলন বাদীকে জানায় জমি উদ্ধার করতে সময় লাগবে দুদক অন্য কাজে ব্যাস্ত আছে। এই ভাবে আসামী নানা ধরনের তালবাহানা করতে থাকে।

অপর ভুক্তভুগি এ.কে.এম নজরুল ইসলাম (৬৬) তিনি বোয়ালিয়া থানাধীন সাগরপাড়া এলাকার মৃত মুসলিম উদ্দিন আহমেদের ছেলে। নজরুলের ছেলে এফ.এম সামছুল ইসলাম (৩৩) ব্যাংকে টাকা আত্মাসাতের অপবাদে জেল হাজতে রয়েছেন।

প্রতারক মিলন দুদকের মাধ্যমে চার্জসীট হালকা করে মামলা হতে রেহাই পাইয়ের দেওয়ার নাম করে গত (২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১) বিকাল ৩টায় মহানগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন দোসর মন্ডলের মোড়ে অবস্থিত প্রতারক দৈনিক উপচার পত্রিকা অফিসে ডেকে দুদকের কর্মকর্তাকে টাকা দিতে হবে বলে ৩ লক্ষ টাকা গ্রহণ করে। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীকে আজ না কাল, কাল না পরশু বলে ঘুরাতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার (২০ ফেব্রুয়ারী) রাতে ভুক্তভোগী নজরুল ইসলাম এবং অপর ভুক্তভোগী হেলাল প্রতারক মিলনের সাথে দোসর মন্ডলের মোড়ে যোগাযোগ করে।

এসময় মিলন দুদককে টাকা দিতে হবে বলে আবারও হেলালের কাছে ২ লক্ষ টাকা এবং নজরুলের কাছে ১ লক্ষ টাকা দাবী করে। ওই সময় ভুক্তভোগীরা বুঝতে পারে, তারা পুনরায় প্রতারণা হতে যাচ্ছে। এমন সন্দেহে তারা প্রতারক মিলনকে টাকা নিয়ে আসছি বলে কৌশলে সেখান থেকে বের হয়ে আসে। এমন সময় র‌্যাব-৫ এর ডিউটিরত একটি টহল দল দেখতে পান এবং ওই দলটির ইনচার্জ ডিএডি মোঃ ফরিদ উদ্দিনকে বিষয়টি বিস্তারিত জানান। তিনি বিস্তারিত শুনে ভুক্তভোগীদের সাথে নিয়ে দ্রুত পূর্বের স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রতারক মিলনকে গ্রেফতার করেন।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারক মিলন স্বীকার করে বলে, সে ও তারা সঙ্গীরা বিভিন্ন এলাকায় সাংবাদিক, দুদকের সোর্স ও দুদকের অফিসার পরিচয় দিয়ে কাজ করে দিবে বলে বিভিন্ন লোকের সাথে কৌশলে প্রতারনা করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে স্বীকার করে। বর্তমানে সে নজরুলের কাছ থেকে ৩ লক্ষ এবং হেলালের কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলেও স্বীকার করে মিলন।

এব্যাপারে বোয়ালিয়া মডেল থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মাজহারুল ইসলাম বলেন, দুদকের সোর্স ও দুদকের অফিসার ও  পরিচয়ে ৮ লাখ টাকা প্রতারনার দায়ে মোঃ নুরে ইসলাম মিলন নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৫, রাজশাহী মহানগরীর মোল্লা ক্যাম্পের একটি অভিযানিক দল। এব্যাপারে আসামী মিলনের বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া থানায় সংশ্লিষ্ঠ অপরাধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার বিকালে তাকে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

এদিকে, তিনি দৈনিক উপচার পত্রিকার যুগ্ন সম্পাদক প্রতারক, ভুয়া দুদক সোর্স ও  ভুয়া দুদকের অফিসার মিলনের গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়লে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেছেন স্থানীয়রা।

এ সকল কার্ডধারীরা প্রাইভেটকার দামি মোটরসাইকেল হারিয়ে মহানগরীসহ উপজেলা ও জেলাগুলেতো গিয়ে কখনো ভ্রাম্যমান ম্যাজিস্ট্রেট, কখনো পুলিশ, সার্জেন্ট, ডিবি ও দাপুটে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে করছে প্রতারণা। সেই সাথে মাদক কারবারীদের কাছে বিক্রি করছে।

সাধারন মানুষকে বোকা বানিয়ে হাতাচ্ছে লাখ, লাখ টাকা। এদের আশ্রয় প্রশ্রয় দাতা এবং নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানান মহানগরীর স্থানীয়রা ও সচেতনমহল।

উল্লেক্ষ্য ২০১৮ সালে রায়হান বাদী হয়ে চাপাইনবাবগঞ্জ কোর্টে চেকের মামলা করেন।  সেই মামলায় গত ইং ০৪/১০/২০২১ তারিখে এন,আই/এসিটি এর ১৩৮ ধারায় দোষি সাব্যস্ত করে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও চেক বর্নিত অর্থদন্ড প্রদান করেন বিজ্ঞ আদালত। সেই থেকে সে পলাতক ছিলো প্রতারক মো. নূরে-ইসলাম মিলন।  অবশেষে  র‌্যাব-৫ এরে একটি টিম তার ভাড়া করা বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে।

গত ৩১ জুলাই, ২০২১ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত ওয়ারেন্টভুক্ত এই আসামী নুরে ইসলাম মিলনকে আটক  করেছিল  র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব-৫। এ নিয়ে র‌্যাব হাতে তিনবার আটক হলো প্রতারক মিলন। বোয়লিয়া মডেল থানার সাবেক ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মনসহ আরএমপির বেশ কয়েকজন পুলিশ অফিসারের ছত্রছায়ায় অপকর্ম চালিয়ে আসছিল এই প্রতারক মিলন। (আটক মিলনের ফাইল ফটো)

বিএ

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।