ওমর ফারুক :
রাজশাহী মহানগর ও আশেপাশের উপজেলায় দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিতে মানুষের স্বাভাবিক জনজীবন চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে। আর কাজ না পেয়ে সমস্যার মধ্যে পড়েছেন দিনমজুররা। তবে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর থেকে রাজশাহীর উষ্ণ আবহাওয়া শীতল হয়ে যায়। এদিন বৃষ্টির সাথে হালকা বাতাসও বয়ে যায়। দিনভর বৃষ্টিতে ভোগান্তির মধ্যে পড়েন স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও অফিস-আদালতগামী মানুষ। বৃষ্টিতে ভিজেই অনেককে রিক্সা ও ভ্যান চালাতে দেখা যায়। তবে বৃষ্টিতে জনজীবন ব্যাহত হলেও আমনের ব্যাপক উপকার হয়েছে। উপযোগী সময়ে বৃষ্টি হওয়ার কারণে ক্ষতির কোন আশঙ্কা নেই। আমনের উপকার হলেও অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সরষে কিছুটা বিলম্বিত হবে বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বুধবার বেলা ১১টার পর থেকে সূর্যের তেমন দেখা মেলেনি। সূর্য না উঠায় গত বুধবার থেকেই গরম কমে যায়। বুধবার দিবাগত গভীর রাত থেকে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়। রাতে বৃহস্পতিবার দিনের তুলনায় বেশি ভারি বৃষ্টি হয়। বৃষ্টিতে রাজশাহী জেলার নয়টি উপজেলার কোন কোন এলাকায় আমন ধান পড়ে যায়। নীচু এলাকার ধান পড়লেও বেশির ভাগ এখনো পড়েনি। রাত থেকে শুরু করে সকাল, দুপুর, বিকেল ও সন্ধ্যা এবং রাতেও বৃষ্টি অব্যাহত থাকে। সকালে বৃষ্টির কারণে দিনমজুর, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও অফিস-আদালতগামী মানুষ বিপাকের মধ্যে পড়েন। দিনমজুররা বৃষ্টির কারণে কাজের সন্ধানে বাইরে বের হতে পারেন নি। কেউ কেউ বের হলেও বৃষ্টির কারণে কাজ পানি বা দাঁড়ানোর জায়গা
জোটেনি। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টিতে বের হয়ে রিক্সা ও অটোরিক্সার অভাবে সময়মত প্রতিষ্ঠানে পৌঁছাতে পারেননি। অফিস-আদালতগামী মানুষও একই সমস্যার মধ্যে পড়েন। নগরীর কোর্ট স্টেশন এলাকায় কাজের সন্ধানে বের হওয়া সাইফুল নামের একব্যক্তি বলেন, বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছেলেমেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কাজের জন্য বের হয়েছিলাম। কিন্ত বৃষ্টির কারণে কাজ পাইনি। আমার মত অনেক দিনমজুর কাজ না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। আবার অনেকে বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি। কাজ করতে না পারায় কিছুটা সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে। রবিউল নামের এক রিক্সা চালকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন,
আমাদের রোদ কি আর বৃষ্টি কি? তীব্র রোদের মধ্যেও রিক্সা চালিয়ে উপার্জন করতে হয় আর বৃষ্টির মধ্যেও। এসব ভাবলে পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দেওয়া যায় না। বসে থাকলে আর্থিক সমস্যার মধ্যে পড়বো তাই রিক্সা নিয়ে বের হয়েছি। ভিজে সমস্যা হবে এমন চিন্তা করিনি। সকালে স্কুল-কলেজের উদ্দেশ্যে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, আমরা বৃষ্টির কারণে ঠিক সময়ে বের হতে পারিনি। বের হয়েও রিক্সা পাইনি। এ জন্য স্কুল-কলেজে যেতে দেরি হয়েছে। দিনভর বৃষ্টি হওয়ার কারণে রাজশাহীর আবহাওয়া শীতল হয়ে গেছে। এই বৃষ্টির পর রাজশাহীতে শীতের আগমনি বার্তা দেখা দিয়েছে। এদিকে, রাত থেকে দিনভর থেমে থেমে টানা বৃষ্টির কারণে জেলার ৯টি উপজেলায় রোপন করা আমনের উপকার
হয়েছে। আমনের উপকার হলেও জেলার কোন উপজেলার আমন পড়ে গেছে। শীষ ফোটা অবস্থায় ধান গাছ পড়ে যাওয়ার কারণে ফলন ব্যাহত হবে বলেও শঙ্কা করছেন কৃষকরা। তবে সব এলাকার ধান পড়ে যায়নি। ধান ফোটা অবস্থায় টানা বৃষ্টি হওয়ায় এবার সরষে কিছু দেরিতে হবে। কারণ সরষে বপন করার মতো মাটির উপযোগিতা হতে সময় লাগবে। রাজশাহীর মুন্ডমালা এলাকার এক কৃষক বলেন, তার ধান গাছ পানির সময় বাতাসে বৃষ্টি হেলে গেছে। ধান পড়ে যাওয়ায় ফলন নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছি। এখন কি হবে তা বুঝতে পারছিনা। শুধু তিনিই নন অনেক এলাকার শীষ ফোটা ধান গাছ পড়ে গেছে। আবহাওয়া অফিসের দাবি বৃষ্টিতে আমনের কোন ক্ষতি হবে না। আমনের অনেক উপকার হবে। এই বৃষ্টির প্রয়োজন ছিল।
ভারি বৃষ্টি ও বাতাস তীব্র হলে ধানের সমস্যা হতো। চিন্তিত না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শামসুল হক বলেন, এ বৃষ্টিতে আমনের কোন ক্ষতি হবে না। অনেক উপকার হয়েছে। ভারি বৃষ্টি হলে ও বাতাস হলে সমস্যা হতো। বৃষ্টির কারণে সরষে কিছুটা বিলম্বিত হবে। যেসব ধান পড়ে গেছে সেসব ধানের ক্ষতি হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, একেবারে পড়ে না যাওয়ায় কোন ক্ষতি হবে না। শুধু হেলে পড়েছে। আমন চাষীদের চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ নেই। উল্লেখ্য, রাজশাহীর জেলার ৯টি উপজেলা ও দুটি থানায় চলতি মৌসুমে ৭৪ হাজার ৯৮১ হেক্টর জমিতে আমন রোপন করা হয়েছে। রাত পৌণে ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাজশাহীতে হালকা বৃষ্টি অব্যাহত ছিল।
এস/আর
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- k24ghonta@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০