নিজস্ব প্রতিবেদক :
গৃহাস্থলিক নানা কাজে রঙ ব্যবহৃত হয়। এছাড়া শিশুদের খেলনা ও বিভিন্ন ধরনের পেইন্টিংয়ে বিভিন্ন রঙ ব্যবহৃত হয়। রঙয়ের কার্যক্ষমতা বাড়াতে এতে ব্যবহার করা হয় সীসা। কিন্তু অনেক কোম্পানি রঙে অতিমাত্রায় সীসা ব্যবহার করে থাকে। যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। মাত্রাতিরিক্ত সীসার কারণে বিভিন্ন রোগব্যাধি এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাই রঙে সীসার ব্যবহার ৯০ পিপিএম মধ্যে নিয়ে আসতে সরকারি পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি। বৃহস্পতিবার সকালে উন্নয়ন সংস্থা ‘এ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডি’র প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘মানব স্বাস্থ্যের ওপর সীসাজনিত বিষের বিরূপ প্রভাব’ শীর্ষক
পরামর্শক সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক সীসামুক্ত সপ্তাহ (২০-২৬ অক্টোবর) ২০১৯ উদযাপন উপলক্ষ্যে এ পরামর্শক সভার আয়োজন করা হয়।
‘এ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডি’র আয়োজনে এবং ‘আইপেন’ এর সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন এসিডি’র নির্বাহী পরিচালক সালীমা সারোয়ার। এসময় প্রধান অতিথি ছিলেন- ‘বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন-বিএসটিআই’ এর রাজশাহীর উপ-পরিচালক মো. খাইরুল ইসলাম। এসিডি’র মিডিয়া ম্যানেজার আমজাদ হোসেন শিমুলের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন- রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফ.এ.এম আঞ্জুমান আরা বেগম এবং জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইকবাল হাসান। পরামর্শক সভায় ‘মানব স্বাস্থ্যের ওপর সীসাজনিত বিষক্রিয়ার প্রভাব’ বিষয়ে মূল উপস্থাপনা পেশ করেন এসিডি’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. আলী হোসেন।
পরামর্শ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ‘বিএসটিআই’র রাজশাহীর উপ-পরিচালক মো. খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘সীসা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর একটি পদার্থ। আমরা বেশ
কিছু পণ্যের সীসা নির্ধারণ করে থাকি। তবে রঙে সীসা নির্ধারণের বিষয়টি এখনো ‘বিএসটিআই’র লাইসেন্সের মধ্যে আসেনি। রঙে সীসার ব্যবহার সহনীয় মাত্রায় রাখতে দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন সংগঠন সরকারকে চাপ প্রয়োগ করছে। তারই ধারবাহিকতায় পেইন্ট বা বিভিন্ন ধরনের রঙ বিএসটিআই এর লাইসেন্সের আওতায় আনার জন্য ২০১৮ সালে রেগুলেশনে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু এটা কার্যকর হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের পেইন্টিং, ঘরবাড়ি কালার করা, শিশুদের বিভিন্ন খেলনাসহ দৈনন্দিন অনেক আসবাব ও জিনিসপত্রে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের রঙ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এগুলোতে সীসার পরিমাণ সহনীয় মাত্রায় রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কোনো ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত নেই। সচেতনতার পাশাপাশি রঙে কী পরিমাণ সীসা ব্যবহার করলে সহনীয় পর্যায়ে থাকবে তার একটি সুরাহা হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইকবাল হাসান বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার ২২ শহরের মধ্যে ভারতের দিল্লি ও বাংলাদেশের ঢাকায় বাতাসে সীসার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। এই দুইটি শহর সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। কিন্তু রঙে তো সীসার পরিমাণ নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। তাই রঙে সীসার পরিমাণ নির্ধারণে কার্যকর ব্যবস্থা দ্রæত গ্রহণ করা উচিত।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফ.এ.এম আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, ‘পরিবেশের তিনটি মাধ্যম- তথা বাতাস, পানি ও মাটির মধ্যে সীসা আছে। আমরা বিভিন্নভাবে বাতাস, পানি ও মাটিকে দূষিত করে এই সীসার পরিমাণ
বাড়িয়ে দিচ্ছি। ফলে আমরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে সীসায় আক্রান্ত হচ্ছি।’
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এসিডি’র নির্বাহী পরিচালক সালীমা সারোয়ার বলেন, ‘সীসা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আমরা দৈননদিন জীবনে বিভিন্নভাবে রংযুক্ত সামগ্রির সংস্পর্শে আসি। কিন্তু আমরা জানি না এগুলোতে কী ধরনের রঙের ব্যবহার করা হয়েছে বা কী পরিমাণে বিসাক্ত সীসা ব্যবহার করা হয়েছে। এই সীসাযুক্ত রং ব্যবহার করার ফলে বড়দের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। পাশাপাশি কোমলমতি শিশুরা আরো বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। আমরা বিভিন্ন কাজে রঙ এর ব্যবহার করে থাকি। তার মধ্যে সীসার মাত্রা থাকা উচিত ৯০ পিপিএম।
কিন্তু বাস্তবে তা থাকে না।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত সীসাযুক্ত রঙের প্রস্তুত, আমদানী, বিক্রি এবং ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট কোনো আইন বা নীতিমালা নেই। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন প্রনয়ণ ও বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।’সীসার প্রভাবে পেটের ব্যাথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, আক্রমণাত্মকতা, উদ্বেগ, পেশী ব্যাথা, দুর্বলতা, ওজন হ্রাস, শেখার অক্ষমতা, খিঁচুনি এমনকি দীর্ঘস্থায়ী সীসাজনিত বিষক্রিয়ায় মৃত্যুও ঘটে। তাই এ বিষয়ে সরকারসহ সকলকে সজাগ থাকতে হবে। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, শিক্ষক, সাংবাদিক, ছাত্র, ইয়ূথ লিডার, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
আর/এস
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০