বগুড়া প্রতিনিধিঃ মাদক ব্যবসা ও জুয়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধের জের ধরে বগুড়ায় পৃথক দুটি ঘটনায় চার যুবককে গলাকেটে ও এক যুবককে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সোমবার সকালে উপজেলার বাদলাদীঘি গ্রামের ডাবইর এলাকার একটি বিলের ধানক্ষেত থেকে ৪ যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
একই দিন শহরের ফুলবাড়ি দক্ষিণপাড়ায় এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয়রা।
নিহতদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।এক দিনে পাঁচ যুবককে হত্যার ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।নিহত পাঁচজনের মধ্যে চারজনের নাম পরিচয় জানাতে পেরেছে পুলিশ।
নিহতরা হলেন— শিবগঞ্জের আটমূল ইউনিয়নের কাঠগারা গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে রঙমিস্ত্রী জাকারিয়া (৩২), কাঠগারার চকপাড়ার আসির উদ্দিনের ছেলে পানের দোকানদার শাহাবুল ইসলাম শাবলু (৩০) ও জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলার পুনট (পাঁচপাইকা) চেয়ারম্যানপাড়া গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে হেলাল (৩২)।
তাদের প্রত্যেকের গলাকাটা ছিল। হাত পিছমোড়া করে বাঁধা। পরনে গেঞ্জি, শার্ট ও প্যান্ট।এছাড়া একজনের একটি পা কাটা ছিল।
গণপিটুনিতে নিহত যুবকের নাম রুবেল হোসেন (৩২)। তিনি ফুলবাড়ি দক্ষিণ পাড়ার সঞ্জু মিয়ার ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, সোমবার সকাল ৮টার দিকে আটমূল ইউনিয়নের গাঙ্গনাই নদীর পশ্চিমে ডাবুইর এলাকার বাদলাদীঘি গ্রামের বিলের একটি ধানক্ষেতে চারজনের গলাকাটা লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে বিলের পাড়ে নিয়ে আসে।
একসাথে চারটি হত্যাকাণ্ড নিয়ে এলাকার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তারা ভয়ে কেউ কিছু বলছে না।
তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, আটমূল ইউনিয়নের মাঝামাঝি স্থানে ভায়েরপুকুর বাজার। এই বাজারে দীর্ঘদিন জুয়া ও মাদক ব্যবসা চলে আসছিল। জুয়া ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এলাকায় নানা ধরনের গ্রুপিং চলছিল।
মাস খানেক আগে এসবের জের ধরে সেলিম নামের একজনকে অস্ত্রসহ পুলিশ গ্রেফতার করে। সেলিমকে গ্রেফতারের পেছনে তার প্রতিপক্ষ লোকজনের হাত রয়েছে দাবি তার গ্রুপের লোকজন প্রতিদিন সন্ধ্যায় ভায়েরপুকুর বাজারে মহড়া দিচ্ছিলেন।
সম্প্রতি সেলিম জামিনে বেরিয়ে আসার পর এলাকায় তার লোকজন তৎপর হয়ে ওঠে। রোববার সন্ধ্যার পরও সেলিমের লোকজন মোটরসাইকেলযোগে ভায়েরপুকুর বাজারে মহড়া দেয়।
নিহত শাহাবুলের বাবা আছির উদ্দিন জানান, তার ছেলের ভায়েরপুকুর বাজারে পান সিগারেটের দোকান ছিল। রাত ৯টা পর্যন্ত সে দোকানে ছিল। রাতে তাকে (বাবা) দোকানে বসিয়ে ঢাকায় যাবে বলে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
শিবগঞ্জ থানার পরিদর্শক (আপারেশন) জাহিদ হোসেন মন্ডল জানান, নিহত প্রত্যেকের কাছেই গাজা, ইয়াবা ও হেরোইনের পুরিয়া পাওয়া গেছে।
আটমূল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর হোসেন জানান, নিহতরা সবাই তার ইউনিয়নের বাসিন্দা বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
খবর পেয়ে জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঁঞা, শিবগঞ্জ ও সোনাতলা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মশিউর রহমান মন্ডল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
তারা জানান, হাত-পা বেঁধে গলা কেটে ওই চার যুবককে হত্যা করা হয়েছে।
এদিকে বগুড়া সদর থানার ফুলবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক আমবার হোসেন জানান, নিহত মোহাম্মদ রুবেলের নামে ৩টি চাঁদাবাজি মামলা রয়েছে।
তিনি জানান, রুবেল ওই এলাকায় বাড়ি নির্মাণকারীদের কাছ থেকে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি করে আসছিল। স্থানীয় লোকজন তার চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে ছিল।
নিহত রুবেলের মা ঝর্ণা বেগম জানান, পুলিশকে মাদক ব্যবসায়ীদের তথ্য দেয়ার কারণে এলাকার মাদক ব্যবসায়ীরা তার ছেলের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। একারণে বেশ কিছুদিন তার ছেলে বাড়িতে থাকতো না।
তিনি জানান, সোমবার দুপুরে রুবেল জাতীয় পরিচয়পত্র নেয়ার জন্য বাড়িতে আসে। সন্ত্রাসীরা এ খবর জানতে পেরে বাড়িতে প্রবেশ করে তার ছেলেকে ধরে নিয়ে গিয়ে আবুলের দোকানের সামনে মারপিটে হত্যা করে।
এ ব্যাপারে বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, নিহত রুবেল সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারী ছিল। স্থানীয় জনগণ তাকে পেয়ে গণপিটুনী দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছার আগেই রুবেল মারা যায়। তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০