খবর২৪ঘন্টা নিউজ ডেস্ক: করোনা ভাইরাস মহামারীর মধ্যে পাঁচ মাসে দেশে ভবঘুরে মানুষ বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ভবঘুরেদের জন্য গাজীপুরে নতুন আরেকটি আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করতে হচ্ছে সমাজসেবা অধিদপ্তরকে।
ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি (পুনর্বাসন) আইন অনুযায়ী, আশ্রয়হীন ব্যক্তিদের বিশেষ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ভবঘুরে ঘোষণা করে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে পাঠায় সমাজসেবা অধিদপ্তর।
সরকারি পাঁচটি আশ্রয়কেন্দ্রে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় নিরাশ্রিত মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন অধিদপ্তরের ভবঘুরে কার্যক্রমের উপপরিচালক বেগম সাঈদা আখতার।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, “স্বাভাবিক সময়ে হয়ত মার্চ থেকে জুলাই সময়টায় ভবঘুরের সংখ্যা বাড়ত ৫০ জনের মতো। কিন্তু এবার সেটা প্রায় তিন গুণ বেড়েছে, ১৫০ জনের মতো বেড়েছে।”
সাঈদা বলেন, “বিভিন্ন জায়গা থেকে, থানা থেকে আমরা রিপোর্ট পাই যে, এখন পথঘাটে ভবঘুরের সংখ্যা বেড়ে গেছে। আমাদের আশ্রয় সংখ্যা তো সীমিত, তার বাইরে আমরা রাখতে পারি না।”
পাঁচটি আশ্রয়কেন্দ্রর বাইরে মানিকগঞ্জের বেতিলায় শিশু আশ্রয় কেন্দ্র থাকলেও এর দুটি ভবন পরিত্যক্ত হওয়ায় ২০১৭ সাল থেকে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
ভবঘুরেদের সংখ্যা বাড়ায় গাজীপুরে নতুন আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাইদা আখতার।
তিনি বলেন, “আমাদের আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আসনসংখ্যা সীমিত। যেহেতু ভবঘুরেদের সংখ্যা বাড়ছে, তাই আসন সংখ্যা বাড়ানোর জন্য কোনাবাড়িতে টিনশেড করে ১৫০ থেকে ২০০ জনের থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
“ভবঘুরেদের মধ্যে মূলত ভিক্ষুকই বেশি। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে, আবার কেউ অনিচ্ছাকৃতভাবে ভবঘুরে হয়ে যাচ্ছে। অনেকের ছেলেমেয়েরা দেখছে না, একেবারেই নিরাশ্রয় যারা তারা ভবঘুরে হয়ে যাচ্ছে।”
ভবঘুরের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে অনেকে চাকরি হারানোর কারণে এটা বাড়তে পারে। অভাবে পড়েও বাড়তে পারে।
বেগম সাইদা জানান, ৩০ জনু পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ভবঘুরের সংখ্যা ছিল ৯২৮ জন, যাদের মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি।
সরকারি পাঁচটি আশ্রয় কেন্দ্রের মধ্যে ঢাকার মিরপুর আশ্রয় কেন্দ্রে (অভ্যর্থনা কেন্দ্র) নারী, পুরুষ ও বালক ভবঘুরেরা আশ্রয় পান। গাজীপুরের পুবাইল আশ্রয় কেন্দ্রে নারী এবং গাজীপুরের কাশিমপুর আশ্রয় কেন্দ্রে নারী ও মা-সহ শিশু ভবঘুরেরা থাকছেন।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল আশ্রয় কেন্দ্রে বালক এবং ময়মনসিংহের ত্রিশালের ধলা আশ্রয় কেন্দ্রে পুরুষ ও বালক ভবঘুরেরা ঠাঁই পান।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে চলতি মাসেই আবার দেশের বিভিন্ন স্থানে ভবঘুরে হয়ে যাওয়াদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হবে বলেও জানান সাঈদা।
ভবঘুরেদের পুনর্বাসনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের এখানে তারা যখন থাকবে, তখন যারা পড়াশুনা করতে চায় করবে। যারা প্রশিক্ষণ নিতে চায়, তাদের প্রশিক্ষণ দিই।
“আমরা সর্বোচ্চ দুই বছর রাখি। প্রতিবন্ধী না হলে তাকে আমরা স্বাবলম্বী করে দেই। কিন্তু প্রতিবন্ধীই বেশি, কারণ তাদের ওভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। তখন তারা এখানেই থাকে।”
তবে এবার বন্যা পরিস্থিতির কারণে এখনও কোনো ভবঘুরে আশ্রয় নেওয়ার খবর তারা পাননি বলেও জানান সমাজসেবা অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।
তবে ভবঘুরেদের স্বাস্থ্যবিধি মানাকে বেগ পাওয়ার কথা জানান ময়মনসিংহের ধলার সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক রেদওয়ান হোসেন।
তিনি বলেন, “সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা যে দূরত্ব মেনে আলাদা আলাদা থাকবে, সেটা তারা তেমন মানছে না।”
এই কেন্দ্রটিতে অন্যান্য সময়ের চেয়ে কিছুটা বেড়ে এখন ২৮২ জন ভবঘুরে রয়েছেন; যাদের অধিকাংশই ভিক্ষুক, মানসিক রোগী ও প্রতিবন্ধী।
পুরুষদের চেয়ে কেন্দ্রটিতে বালকদের সংখ্যা বেশি বলে জানান রেদওয়ান।
গাজীপুরের কাশিমপুর আশ্রয় কেন্দ্রে এখন ১৭৬ জন ও পুবাইল আশ্রয় কেন্দ্রে ২০০ জন ভবুঘরে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন গাজীপুর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক এস এম আনোয়ারুল করিম।
তিনি বলেন, “করোনা ভাইরাসের সময় নতুন সদস্য এসেছে। তাদের মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হয়েছে। ভিটামিন সি ট্যাবলেট খাওয়ানো হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে খাবারের তালিকায়ও পরিবর্তন আনা হয়েছে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।”
নারায়ণগঞ্জ জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সোলায়মান হোসেন জানিয়েছেন, জেলার গোদনাইল আশ্রয় কেন্দ্রে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা হচ্ছে।
“করোনা ভাইরাসের কারণে বাইরের কাউকে আশ্রয়কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয় না। ভেতর থেকেও বাইরে কেউ বের হয় না।”
খবর২৪ঘন্টা/নই
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০