নওগাঁর মহাদেবপুরে মামলা দায়েরের দীর্ঘ ৯০ বছর পর আদালতযোগে দখল পাওয়া জমির ধান রাতের আঁধারে কেটে নিয়ে যাবার অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযুক্ত প্রতিপক্ষ বলছেন মামলা চলাকালিন সময়ে ওয়ারিশদের কাছ থেকে তিনি জমি কিনেছেন।
উপজেলার চাঁন্দাশ ইউনিয়নের চাকলা গ্রামের মৃত আছর আলীর ছেলে রফিজ উদ্দিন, তফিজ উদ্দিন, মফিজ উদ্দিন অভিযোগ করেন যে, তাদের দাদি মৃত খতিমন বেওয়া তাদের ২২ বিঘা জমি বাবদ প্রায় ৯০ বছর আগে ওই গ্রামের জবেদ আলী মন্ডলসহ ১২৯ জন বিবাদীর বিরুদ্ধে রাজশাহীর মুনসেফি আদালতে একটি বাটোয়ারা মামলা দায়ের করেন।
পরবর্তীতে মামলাটি নওগাঁ মহকুমার নওগাঁ মুনসেফি আদালতে বদলী হয়। মামলা নং ৯৭/১৯৬৭ বাটোয়ারা। মামলার কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, ১৯৬৯ সালের ২৪ মে নওগাঁ সদর সিনিয়র মুনসেফি আদালতের বিজ্ঞ বিচারক আব্দুল্লাহ ওই মামলায় ১, ২ ও ৪ নং বিবাদীদের বিরুদ্ধে দোতরফা সূত্রে ও অন্যান্য বিবাদীদের বিরুদ্ধে একতরফা সূত্রে রায় ও ডিক্রির আদেশ দেন। বিবাদীরা এই রায় ও ডিক্রি রদ রহিদ চেয়ে একটি ছানী মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ২০৬/১৯৬৯ ছানী। মামলাটি ১৯৭০ সালের ৩১ আগষ্ট দোতরফা সূত্রে নামঞ্জুর হয়।
এই আদেশের বিরুদ্ধে নওগাঁ জেলা জজ আদালতে একটি মিস আপিল মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং ৩৮/১৯৭২ মিস। ১৯৭৩ সালের ১২ এপ্রিল এটিও নামঞ্জুর হয়। এরপর এই আদেশের বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্টে একটি সিভিল রিভিশন মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং ৩৯৪১/১৯৯৬ সি: রি:। এই মামলার ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বরের আদেশের আলোকে নি¤œ আদালতের ৯৭/১৯৬৭ নং মামলাটি পূণরায় চালু হয়। কিন্তু কোন পক্ষই কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় বিজ্ঞ বিচারক ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেয়া আদেশে পূর্বের রায় ও ডিক্রি বহাল রাখেন।
এরপর বাদী পক্ষ ডিক্রি দেওয়া জমি আদালতযোগে দখল গ্রহণের জন্য একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৪/২০২১ বাটোয়ারা জারী। এই মামলার প্রেক্ষিতে গত ২১ ফেব্রæয়ারী নওগাঁ জেলা জজ আদালতের নাজির মাইনুল হক, প্রসেস সার্ভার তাজিম উদ্দিন ও সার্ভে কমিশনার এ্যাডভোকেট এস এম সারোয়ার হোসেন সরেজমিনে মাপজোখ করে, জমির সীমানা চিহ্নিত করে, লাল পতাকা উড়িয়ে ও ঢেড়া পিটিয়ে ঘটা করে জমির দখল বাদীদেরকে বুঝিয়ে দেন। দীর্ঘ ৯০ বছর মামলা চালানোর পর জমি বুঝে পান তারা।
বাদী রফিজ উদ্দিন ও তার ভাইয়েরা অভিযোগ করেন যে, তাদের দাদির ৩ ছেলের মধ্যে আছর উদ্দিন ও মুনছের আলীর ওয়ারিশরা জারী মামলায় ছাহামের আবেদন করলে আদালতযোগে তাদের অংশের ১৭ বিঘা জমি বুঝে দেওয়া হয়। এরমধ্যে লক্ষীপুর মৌজায় আড়াই বিঘা জমি পান তারা। এবছর সে জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছিলেন। আর দিন দশেক পরই সে ধান কাটা হতো।
কিন্তু বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) দিবাগত গভীর রাতে সে জমি থেকে তাদের লাগানো ধান প্রতিপক্ষরা কেটে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে সকালে তারা খোঁজাখুঁজি করে চাঁন্দাশ ইউপির সাবেক মেম্বার ছইমুদ্দিনের বাড়ির খলিয়ানে কাটা ধান দেখতে পেয়ে সেগুলো নিয়ে আসেন।
জানতে চাইলে সাবেক মেম্বার ছইমুদ্দিন ওই জমির ধান কাটার কথা স্বীকার করে জানান, তিনি তাদের অন্য ওয়ারিশ আব্বাস আলীর ছেলে আজিমুদ্দিনের কাছ থেকে মামলা চলাকালিন সময়ে ১৯৯৬ সালে ওই জমি কিনেছেন। কিন্তু বাদী রফিজ উদ্দিন জানান, আজিমুদ্দিন পক্ষ আদালতে ছাহাম না চাওয়ায় তাদের জমি বুঝে দেননি। বরং আদালত যে জমি বাদীদেরকে বুঝে দিয়েছে অন্যায়ভাবে সে জমির ধান রাতের আধারে কেটে চুরি করেছেন।
বিএ/
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- k24ghonta@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০