উত্তরাঞ্চলের শস্যভান্ডার খ্যাত নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় চিকন চালের দাম আরও বেড়েছে। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি ৫ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা। এটা এ যাবৎ কালের সর্বোচ্চ দাম।
গত সপ্তাহে এই দাম ছিল সর্বোচ্চ ৬০ টাকা। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন মিল গেটে চালের দাম বাড়িয়ে দেয়ায় তারাও বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। আর মিল মালিকরা বলছেন অফ সিজনে ধানের সংকট দেখা দেয়ায় ও বাজারে চিকন চালের কদর বাড়ায় বেড়েছে দাম। কিন্তু অভিজ্ঞরা বলছেন অসাধূ ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাড়ানো হয়েছে দাম। এসব মজুদদারদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের তদারকির অভাবেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলার সদরের মেসার্স শিউলি অটো রাইস মিলের মালিক ও চালকল মালিক গ্রুপের সাবেক সভাপতি আলহাজ¦ মো: আব্দুল জব্বার জানান, এক সপ্তাহ আগে মিলগেটে চিকন জিরা শাইল চাল বিক্রি করেছেন কেজিপ্রতি ৫৪ টাকা, মিনিকেট ৫৬ টাকা ও কাটারিভোগ ৫৮ টাকায়। এখন সবগুলোই কেজিপ্রতি ৫ টাকা বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, কাটারিভোগ ধান থেকে তিন রকম চাল হয়। একদম সিদ্ধ না করা আতপ চাল, একসিদ্ধ করা নাজির শাইল চাল আর দুসিদ্ধ কাটারি চাল। ফলে এই ধানের চাহিদা অনেক বেশি। কিন্তু এই ধান বছরে মাত্র একবার ইরিবোরো মৌসুমে হয়।
বৈশাখ মাসের মাঝামাঝি এ ধান বাজারে আসে। সারাবছর সে ধান দিয়েই চাল তৈরি করে ব্যবসা করতে হয়। সেই হিসেবে এ
ধানের মৌসুম এখন শেষ দিকে। কৃষকের ঘরে কিম্বা ব্যবসায়ীদের কাছেও এই ধানের মজুদ নাই। তার উপর চিকন চালের কদর বাড়ায় প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে এই চালের দাম।
মহাদেবপুর কাঁচা বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা বাবুল দেওয়ান জানান, চিকন চাল তিনি মিলগেটে কিনেছেন প্রতিকেজি ৬২ টাকায়। খুচরা বিক্রি করছেন ৬৩ টাকা থেকে ৬৫ টাকায়।
অভিজ্ঞরা বলছেন, ধান কিনে নিজস্ব গোডাউনে মজুদ করে রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করায় বেড়েছে চালের দাম। উপজেলা সদর ও আশপাশের কমপক্ষে ৮জন মজুদদার হাজার হাজার মণ ধান মজুদ করে চালের বাজার অস্থির করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে কারো কারো চালকল চালু নেই। এরা শুধু ধান কিনে মজুদ করেন। উপজেলা সদরের ফাজিলপুর, নাটশাল, শিবগঞ্জমোড় ও দোহালীতে এসব মজুদদারদের বড় বড় গুদামে হাজার হাজার মণ ধান মজুদ রয়েছে।
উপজেলা চাউল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ অটোরাইস মিল ওনার্স এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব ওসমান গণি বলেন, ‘সাধারণ কৃষকের ঘরে এখন ধান নেই। তাই হাটে বাজারে চিকন ধান ওঠছেনা। কিন্তু বড় ব্যবসায়ীরা ধান কিনে মজুদ করেছেন। বাজার উর্ধমুখী থাকায় আরো লাভের আশায় তারা ধানগুলো এখন বাজারে ছাড়ছেন না।
এ কারণে চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘হাটে ধান না থাকরেও মজুদদাররা মিলারদের কাছে চড়া দামে ধান বিক্রি করছেন।’
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শওকত জামিল প্রধান বলেন, ‘স্থানীয় কতিপয় মিল মালিক এবং আড়ৎদার অতিরিক্ত মুনাফা আদায়ের লক্ষ্যে তাদের গুদামে হাজার হাজার মন ধান ও চাল মজুদ রেখে ভরা মৌসুমে বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি করছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অরুন চন্দ্র রায় বলেন, ‘দুমাসের মধ্যেই নতুন ধান বাজারে আসবে। তখন চালের দাম এমনিতেই কমে যাবে।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান মিলন জানান, গতবছর তিনি কয়েকটি মিলে ধান মজুদ রাখার দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করেন। চলতিবছর নওগাঁ জেলা প্রশাসক ইতিমধ্যেই বাজার নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং ও মজুদদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছেন। নির্দেশনা পেলে মহাদেবপুরেও বাজার মনিটরিং করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রæয়ারি নওগাঁ জেলা খাদ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে মজুদদারি বিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে মহাদেবপুর উপজেলার স্বরসতিপুর এলাকায় এসিআই ফুড লিমিটেডের গোডাউনে এক মাসের বেশি সময় কয়েক হাজার মণ চিকন চাল মজুদ করে রাখার দায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন। কিন্তু উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এ ধরনের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
বিএ/
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০