শস্যভান্ডার খ্যাত নওগাঁর মহাদেবপুরে কৃষি জমিতে গড়ে ওঠা অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ করে কৃষকরা তিন ফসলি জমি রক্ষার দাবি জানালেও আইনের তোয়াক্কা না করেই বিগত বছরের ন্যায় এবারও ইট তৈরি শুরু করেছে ভাটা মালিকরা। এসব ভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের অনুমোদন নেই। উৎপাদন শুরুর আগেই অবৈধ ভাটা উচ্ছেদ করে প্রায় ৩০০ বিঘা ফসলি জমি রক্ষায় কৃষকদের দাবির প্রেক্ষিতে গত অক্টোবর মাসে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হলে জেলাজুড়ে বিষয়টি টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সংশ্লিষ্টরা দৃশ্যমান কোনই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। তাদের রহস্যজনক নীরব ভূমিকা নিয়ে সচেতন মহলে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লাইসেন্স ছাড়াই উপজেলা সদর, নাটশাল, খাজুর, লক্ষণপুর, বাগডোব, হাট চকগৌরীসহ বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমি ও আবাসিক এলাকায় গড়ে ওঠেছে প্রায় ২০টি ইটভাটা। ইট তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি। এসব ভাটার কারণে শুধু পরিবেশের বির্পযয় ও ফসল উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে তাই নয়, ধুলাবালুতে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন স্থানীয়রা। আবার কয়েকটি ভাটায় প্রকাশ্যে কাঠ পোড়ানো হয়। ইট ও মাটি পরিবহনের কাজে কাজে প্রায় ২০০টি অবৈধ ট্রাক্টর ব্যবহার করছেন ভাটা মালিকরা। ট্রাক্টরের বিশাল চাকার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক ও মহাসড়ক।
সরেজমিনে উপজেলা সদরের শিবগঞ্জ মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স সংলগ্ন মডেল স্কুলের পাশে প্রায় ১৫ বিঘা কৃষি জমিতে গড়ে উঠেছে একটি ইটভাটা। সেখানে স্তূপ করে মাটি রাখা হয়েছে। ২৫-৩০ জন শ্রমিক মাটি প্রক্রিয়া করে ইট তৈরি করছেন। কেউ চাতালে (খলা) কাঁচা ইট রোদে শুকাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ভাটার চুল্লি পরিষ্কার করছেন। শ্রমিকরা জানালেন, কয়েক দিনের মধ্যে ইট পোড়ানো শুরু হবে। ওই ইটভাটার মালিক হুমায়ন কবির জানান, মালিক সমিতির মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে ভাটা পরিচালনা করছেন।
সবুজ শ্যামল গাছগাছালি এবং শস্যভূমিতে সমৃদ্ধ উপজেলার খোর্দকালনা এলাকায় গিয়ে একই চিত্র দেখা যায়। সেখানে গড়ে উঠেছে এবিএস ব্রিকস নামক ইটভাটা। শ্রমিকরা জানান, ওই ভাটার মালিক উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও খাজুর ইউপি চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন। তার ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ইটভাটা রয়েছে বলে জানা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ ইটভাটা পরিচালনা করছেন এবং ভাটা মালিক সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
এবিএস ব্রিকস’র মালিক খাজুর ইউপি চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিনের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। কোনো ইউপি চেয়ারম্যান ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ ইটভাটা চালাতে পারেন কি-না প্রশ্নের উত্তরে নওগাঁর স্থানীয় সরকার উপপরিচালক উত্তম কুমার রায় বলেন, আইনে এ ধরণের কোনোই সুযোগ নেই। এছাড়া খাজুর এলাকার আরও ৪-৫টি ভাটায় গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র।
উপজেলার খাজুর গ্রামের তারেক হোসেন, আমিনুল ইসলাম ও খোর্দকালনা গ্রামের সমিতুল, আজিজুল ইসলামসহ ১০-১২ জন কৃষক জানান, একসময় তাঁদের এলাকায় সারা বছরই চাষাবাদ হতো। কাউকে অর্থের বিনিময়ে আবার কাউকে ভয় দেখিয়ে জমি ইজারা নিয়ে বা কিনে ইটভাটা স্থাপন করেছেন প্রভাবশালীরা। ভাটার ধোঁয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি গাছে ফল আসছে না। তারা অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ করে ফসল ও কৃষি জমি রক্ষায় দ্রæত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় জানান, ফসলি জমিতে ভাটা স্থাপন ও জমির উপরিভাগের মাটি কাটার ক্ষেত্রে সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে এটি বন্ধে তাদের হাতে কোনোই ক্ষমতা নেই।
সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে অবৈধ ভাটা পরিচালনার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মকবুল হোসেন। তিনি জানান, মহাদেবপুরের কোনো ইটভাটারই পরিবেশের ছাড়পত্র নেই। তাদের বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয় থেকে জেলা প্রশাসককে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পত্র দিয়েছেন। ইউএনও মিজানুর রহমান মিলন জানান, অভিযোগ পেয়েছেন; দ্রæত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। নওগাঁ জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিবেশ কমিটির সভাপতি হারুন-অর-রশিদ জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
জেএন
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০