রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় নতুন নতুন তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে। সংঘবদ্ধভাবে ছাত্রীটিকে ধর্ষণ করেছে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী মাহফুজুর রহমানের পরিকল্পনায় এমনটিই জানিয়েছে পুলিশ। ধর্ষণের সময় রাবি ছাত্রী বারবার আকুতি করলেও লম্পট বয়ফ্রেন্ড ও তার বন্ধুদের মন গলেনি। বরং তারা পুরো ঘটনাটি মোবাইলে ভিডিও করে রাখেন। পরে ওই ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে ওই ছাত্রীর পরিবারের কাছ থেকে টাকাও আদায় করা হয়েছে। এঘটনায় মতিহার থানায় মামলার পর অভিযুক্ত বয়ফ্রেন্ড ও তার ৪ বন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার ও রোববার দুই রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে মাহফুজুর রহমান সারদ, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। বয়ফ্রেন্ড মাহফুজকে ইতিমধ্যে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
মতিহার থানার ওসি এসএম মাসুদ পারভেজ জানিয়েছেন, মূল অভিযুক্ত মাহফুজুর রহমান সারদকে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। পুলিশ ইতোমধ্যেই উদ্ধার করেছে সেই ভিডিও। আরেক অভিযুক্ত পলাতক বিশাল সরকারকে খুঁজছে পুলিশ। ধর্ষণের শিকার ছাত্রীটির বাড়ি যশোরে বলে জানা গেছে। নগরীর একটি মেসে থেকে পড়ালেখা করেন। মামলা দায়েরের পর ছাত্রীটি ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে গেছেন।
মতিহার থানায় দাখিলকৃত ছাত্রীর এজাহারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, গত ২৪ জানুয়ারি অর্থনীতি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মাহফুজুর রহমান সারদ তার গার্লফ্রেন্ড একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ডেটিংয়ের নামে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কাজলার সাঁকারা এলাকার একটি ছাত্রাবাসে নিয়ে যায়। পরে পদ্মার তীর এলাকায় কিছুসময় ঘুরে রাত সাড়ে আটটার দিকে তারা আবার মেসে ফিরে যায়। সেখানে কথা বার্তার এক ফাঁকে মাহফুজ রুমে আটকে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন। ওই সময় পুর্ব পরিকল্পনামতো রুমে প্রবেশ করে মাহফুজের ৫ বন্ধু বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাফসান আহম্মেদ, প্লাবন সরকার, জয়, জীবন ও বিশাল তালুকদার। ছাত্রীটি আগন্তক যুবকদের কাউকে আগে দেখেননি। যুবকরা নিজেদের পুলিশের লোক পরিচয় দিয়ে মাহফুজ ও ছাত্রীটিকে থানায় নিয়ে যাওয়ার ভয় দেখায়। এক পর্যায়ে অস্ত্রের মুখে ছাত্রীটিকে মাহফুজের সঙ্গে কয়েকবার আপত্তিকর সম্পর্কে জড়াতে বাধ্য করে। সেইসব দৃশ্য তারা নিজ নিজ মোবাইল ফোনে ভিডিও রেকর্ড করেন। পরে বন্ধুরাও ওই ছাত্রীর সর্বনাশ করে।
ছাত্রীটির দেওয়া প্রাথমিক জবানবন্দীর বরাত দিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিহার থানার এসআই আব্দুর রহমান জানান, ওই রাতে আগন্তক ৫ যুবক ছাত্রীটিকে মাহফুজের সঙ্গে অন্তত তিনবার আপত্তিকর কাজ করতে বাধ্য করেছে। রাত আনুমানিক দুটার সময় মেয়েটির কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে তারা। কিন্তু এতে রাতে পরিবারের কাছে কোন টাকা চাইতে পারেনি মেয়েটি। শেষে তার বান্ধবী ও অন্য বন্ধুদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিজের বিকাশ নম্বরে নিয়ে তা যুবকদের একজনের নম্বরে ট্রান্সফার করে দেন। কারণ ওই সময় মোবাইল বিকাশের দোকান খোলা ছিল না। এক পর্যায়ে ওই রাতেই ছাত্রীটিকে মেস থেকে বের কওে দেওয়া হয়। পরের দিন তার কাছে আরও ৫০ হাজার টাকা দাবি করে তারা।
এদিকে গ্রেফতার হওয়া জয় ও জীবন রোববার বিকেলে রাজশাহী মহানগর হাকিমের আদালতে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে। এই জবানবন্দিতে তারা বলেছে, ঘটনার মুল পরিকল্পনাকারী মাহফুজ নিজেই। তারা পরস্পরের বন্ধু। আগের দিন মাহফুজ, প্লাবন সরকার, রাফসান আহম্মেদ, বিশাল তালুকদার, জয় ও জীবন মিলে মেসে বসে পরিকল্পনা করে যে তারা মেয়েটিকে বø্যাকমেইল করবে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আব্দুর রহমান বলেন, মাহফুজই হচ্ছে মূল হোতা। সে এমন ঘটনা আগেও করেছে অন্য মেয়েদের সঙ্গে। এই ধরণের ঘটনার কথা মাহফুজ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।
পুলিশ আরও জানায়, মূল অভিযুক্ত মাহফুজুর রহমানের বাড়ি ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় জয় ও প্লাবন সরকারের বাড়ি জয়পুরহাট, রাফসান আহম্মেদের বাড়ি রাজশাহী বহরমপুর মহল্লায় ও জীবনের বাড়ি রাজশাহীর কাজলায় ও বিশাল তালুকদারের বাড়ি নাটোর।
এস/আর
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০