খবর২৪ঘন্টা ডেস্ক: সদ্য ডিগ্রি পাশ করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তাইজুল ইসলাম। অনেক চাকরিতে চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু কিছুতেই ভাগ্য তার পক্ষে কাজ করছিল না। ফলে বেকার সমস্যার সমাধানও হচ্ছিল না তার। অবশেষে খোঁজ পান সোনার হরিণের। টাকা দিলেই সরকারি ব্যাংকে ভালো পদে চাকরি মিলবে।
এজন্য দিতে হবে মোটা অংকের টাকা। টাকার বিনিময়ে ব্যাংকে চাকরি দেওয়ার স্বপ্ন দেখান তারই জেলার বড় ভাই কাওসার আলম লিটন (৪৫) নামের এক ব্যক্তি। তাইজুলের চাকরি হয়ে গেছে তার প্রমাণ স্বরূপ লিটন তাকে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকের লোগো ও অন্যান্য আর্টিকেল যুক্ত ওয়েবসাইটের ঠিকানা দেখান। ওয়েবের পাতায় চূড়ান্ত নিয়োগ তালিকায় থাকা নিজের নাম দেখে খুশিতে আপ্লুত হয়ে যান তাইজুল।
কিন্তু তাইজুলের পরের গল্পটা শুধুই প্রতারণার। যেদিন তিনি চাকরিতে যোগদান করবেন তা যাচাইয়ের জন্য আগের দিন ঢাকায় আসেন। মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ব্যাংকের কোনো পদেই তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বিষয়টি শুনেই তাঁর মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।
ওই দিনই তাইজুল ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবগত করেন। বিষয়টি জানার পর ব্যাংকটির প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মেজর (অব.) মোজাম্মেল হক গত ১০ আগস্ট প্রতারক কাওসার আলম লিটনের নামে মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
ব্যাংকের মামলার পরই সেই লিটনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। লিটন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত এম এ মালেকের ছেলে। বর্তমানে উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাসায় থাকেন।
মামলার পর নড়েচড়ে বসেন সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তারা। তারা ব্যাংকটির আইটি বিশেষজ্ঞ দিয়ে অনুসন্ধান করে ব্যাংকের নামে ভ‚য়া ওয়েবসাইট তৈরির কারিগর ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদুল হক মিঠুনের সন্ধান পান। এরপর একই ব্যাংকের এজিএম গত ২৮ আগস্ট মিঠুনের নামে মতিঝিল থানায় একটি মামলা করেন।
এই মামলাটির তদন্ত ভার পায় সিআইডি। সিআইডি তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পরই বেরিয়ে আসে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। মামলার সূত্র ধরেই ২০ নভেম্বর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার এলাকা থেকে মাহমুদুল হক মিঠুনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলেন, মিঠুন পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার। পড়ালেখা করেছেন রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপর তিনি এফএনবিডি নামের একটি প্রতিষ্ঠানে কিছুদিন চাকরির পর চলে যান কাওরানবাজারের জনতা টাওয়ারের ন্যানোটেক সলিউশন অ্যান্ড কনসালটেশন নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানে।
মিঠুন ন্যানোটেকে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে যোগদানের পর ২০১৭ সালের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত চাকরি করেছেন। চাকরির সময় তিনি প্রতারক চক্রের সঙ্গে চুক্তি মোতাবেক তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সরকারি ব্যাংক ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নামে ভূয়া ওয়েবসাইট তৈরির কাজ করেন। সম্প্রতি মিঠুনের সর্বশেষ কর্মস্থল ন্যানোটেকে ব্যবহৃত তার কম্পিউটার থেকে এসব প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার নামে ভূয়া ওয়েবসাইট বানানোর বিভিন্ন ডকুমেন্ট ও হার্ডডিস্ক সংগ্রহ করেছে সিআইডি।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, মিঠুন প্রতি ওয়েবসাইট বানানো বাবদ পেতেন মাত্র ১০ হাজার টাকা। এর মধ্যে যার মাধ্যমে তিনি কাজটি পেতেন তাঁকে দিতে হতো দুই হাজার টাকা। প্রতি সাইট তৈরির জন্য তিনি মাত্র দুই থেকে তিন ঘন্টা সময় নিতেন। আর এসব কাজ অফিস ও বাসায় বসেই করতেন।
সিআইডির মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এএসআই কামাল হোসেন বলেন, লিটন গ্রাহক সংগ্রহের পর তাকে চাকরি দেওয়ার প্রমাণ স্বরূপ ওয়েবের ঠিকানায় ঢুকে ওই ব্যক্তির নিজের নাম দেখতে বলতেন। পরে চাকরি চূড়ান্ত হয়েছে জানিয়েছে লোক বুঝে টাকা হাতিয়ে নিতেন।
ওয়েবসাইটগুলো এমন নিখুঁতভাবে তৈরি করা হয়েছিল তা দেখে সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা কঠিন। কারণ সরকারি তিন ব্যাংক সোনালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংকের সাইটে থাকা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ব্যক্তিদের নাম ও তাদের ছবিও হুবহু করে ভূয়া ওয়েবসাইটে দেওয়া হতো। এটা দেখে যে কেউ সহজে বুঝতে পারতেন যে এটা আসলে প্রকৃত ওয়েবসাইট।
সিআইডির একজন অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামে ভূয়া ওয়েবসাইট খুলে চক্রটি চাকরি দেওয়ার প্রতারণা করে আসছিল। এর সঙ্গে কারা জড়িত তা খুঁজে বের করার জন্য আমরা কাজ করছি।
খবর ২৪ ঘণ্টা.কম/জন
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০