নায়িকা পরীমণি বোট ক্লাবের আগের রাতে গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবেও তুঘলকি কাণ্ড ঘটিয়েছেন। অভিযোগ পাওয়া গেছে, তিনি ওই ক্লাবে উশৃঙ্খল আচরণ করেছিলেন এবং সেখানে ভাঙচুর চালিয়েছিলেন। যে কারণে আজ বুধবার (১৬ জুন) সন্ধ্যায় ক্লাব কর্তৃপক্ষ সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানায়।
জানা গেছে, গুলশান-২ এলাকার অল কমিউনিটি ক্লাব কর্তৃপক্ষ গত সপ্তাহে গুলশান থানায় এ সংক্রান্তে অভিযোগ জানিয়েছিলো।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘গত ৭ জুন রাতে কমিউনিটি ক্লাবে ভাঙচুরের অভিযোগে তার (পরীমণির) বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ।’
পরীমণির বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ আনা হয়েছে? এমন প্রশ্নে ডিসি সুদীপ বলেন, ‘ক্লাব কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে যে, উনি (পরীমণি) আনঅথরাইজড ওখানে গেছেন। তারপর ক্লাব মেম্বারসদের যে জায়গা ছিল, ওখানে নাকি বসতে চেয়েছেন, তারপর নাকি ভাঙচুর করেছেন। এইগুলো আরকি।’
এদিকে গুলশান থানা পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছে ৭ জুন গভীর রাতে। তবে এ ঘটনায় আজ বুধবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত থানায় কেউ সাধারণ ডায়েরি (জিডি) বা মামলা করেননি। তবে পুলিশ নতুন করে ওই ঘটনা তদন্তে ক্লাব পরিদর্শনে যাবে।
এ ঘটনার সর্বশেষ তথ্য জানতে আজ সন্ধ্যায় গুলশান থানায় অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) ফোন করা হলে তিনি তা রিসিভ করেননি। অন্যদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে পরীমনির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়, পরে তার মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এর আগে, পরীমনি অভিযোগ করেছেন, রাজধানীর অদূরে সাভারের বিরুলিয়ায় ‘ঢাকা বোট ক্লাবে’ গত ৯ জুন রাতে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা ও হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। সেই ঘটনায় তিনি ওই ক্লাবের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন মাহমুদ, সেদিন তাকে নিয়ে যাওয়া অমিসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় এজহার দায়ের করেন গত সোমবার। এক পর্যায়ে সেদিন রাতেই রাজধানীর উত্তরায় অমি’র বাসা থেকে ৩ রক্ষিতাসহ গ্রেপ্তার হন নাসির ও অমি।
গ্রেপ্তার হওয়ার আগে পরীমণির বিষয়ে মুখ খুলেন আবাসন ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘ঢাকা বোট ক্লাব থেকে দামি ড্রিংকস (মদ) জোর করে নেয়ার চেষ্টা করেছিলো পরীমণি ও তার সহযোগীরা। তারা তো আমাদের ক্লাবের মেম্বার না। তাই আমি তাদের নিতে দেইনি। এ কারণে তাকে আমি বাধা দিয়েছি এবং বলেছি যে- এটা নেয়া যাবে না। নিতে হলে অবশ্যই তোমাদেরকে মেম্বার হতে হবে।’
ক্লাবের মেম্বার ছাড়া ওই মদ যে কারো কাছে বিক্রয়যোগ্য নয় উল্লেখ করে নাসির বলেন, ‘আমি তাকে (পরীমণিকে) বলেছি- এটা বিক্রয়যোগ্য না। তাছাড়া এতো রাতে আমাদের বার ক্লোজড্। তাই কোনোভাবেই সম্ভব না। তবে তার আগেই কোথা থেকে যেনো পরীমণি মদ পান করে এসেছিলো। ওই অবস্থাতেই আমাদের কাছে দামি মদ না পেয়ে সে উত্তেজিত হয়ে যায়, আমার উপর চড়াও হয় এবং বারের মধ্যেই একটার পর একটা কাঁচের গ্লাস ভাঙচুর করে। ওই সময়ে আমাকে সে গালিগালাজ করে। তখন আমাদের স্টাফরা তাকে থামানো চেষ্টা করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একপর্যায়ে পরীমণির সঙ্গে থাকা ছেলেটা আমাকে চড়-থাপ্পর দেয়। এরমধ্যে পরীমণি আমার দিকে গ্লাস ছুঁড়ে মারলে তা আমার ঘাড়ে এসে লাগে। এমন পরিস্থিতিতে আমি সিকিউরিটিদের নির্দেশ দেই- তাকে সরিয়ে নিতে। তখন সিকিউরিটিরা তাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। তখন পরীমণি অতিরিক্ত মদ্যপ অবস্থায় ছিলো, যে কারণে সে ঠিকমতো গাড়িতে উঠতে পারছিলো না। এ ঘটনার রেকর্ডও আমাদের সিসি
ক্যামেরায় সংরক্ষিত আছে। ঘটনার পরের দিনই আমাদের ক্লাবের নিয়ম অনুযায়ী এ বিষয়ে একটি জাজম্যান্ট রিপোর্ট জমা হয়। যেখানে ক্লাবের স্টাফরা ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে। মূলত আমার সাথে তার (পরীমণির) কিছুই হয়নি। ক্লাবের কর্মকর্তা হিসেবে আমি তার (পরীমণির) উশৃঙ্খল আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছি মাত্র। তাছাড়া এই ঘটনার আগে আমি তাকে চিনতাম না।’
উল্লেখ্য, গতকাল রোববার (১৩ জুন) সন্ধ্যায় পরীমণি তার ভেরিফাইড ফেইসবুক পেজের একটি পোস্টে উল্লেখ করেন, ‘আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাকে রেপ এবং হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’
পুলিশকে জানিয়ে পাত্তা পাননি উল্লেখ করে ওই পোস্টে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার দাবি করেন এই অভিনেত্রী। তার ওই পোস্ট দ্রুত সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।
এরপরই রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর বনানীর নিজ বাসায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার বিস্তারিত জানান ঢালিউড নায়িকা পরীমণি। তুলে ধরেন তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার বিবরণ।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি জানান, গত বুধবার (৯ জুন) রাতে পারিবারিক বন্ধু ‘অমি’ ও পরীর পোশাক ডিজাইনার ‘জিমির’ সঙ্গে বাইরে বের হয়েছিলেন। রাত আনুমানিক ১২টার দিকে অমি তাদের নিয়ে ঢাকা বোট ক্লাবে যান। সেখানে মদ্যপানরত কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে পরীর পরিচয় করিয়ে দেন অমি। পরে অমি সেখানে থাকা নাছির ইউ মাহমুদ নামে এক ব্যক্তির কাছে নিয়ে যায়। সে সময় নাছির ইউ মাহমুদ নিজেকে ঢাকা বোট ক্লাবের সভাপতি হিসেবে পরিচয় দেন। সেখানে নাছির ইউ মাহমুদ আমাকে মদ খেতে অফার করেন। আমি রাজি না হলে আমাকে জোর করে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে আমাকে চড় থাপ্পড় মারেন। তারপর নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টা করেন।
পরীমণিকে কোলে নিয়ে বের হন জিমি
চিত্রনায়িকা পরীমণিকে হত্যা ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিসহ ৫ জনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এরপরই ঢাকা বোট ক্লাবের সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করেছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ৯ জুন (বুধবার) দিনগত রাত ২টায়, পরীমণিকে অচেতন অবস্থায় কোলে করে নিয়ে বের হন জিমি ও একজন সিকিউরিটি গার্ড। পেছনে দৌড়াচ্ছিলেন তার বোন বনি। তাদের পেছনে স্বাভাবিকভাবে হেঁটে যাচ্ছিলেন অমি। সবাইকে ধমকের ইঙ্গিত দিতে দেখা গেছে অমিকে।
৯ জুন (বুধবার), রাত সাড়ে ১২টার কিছু সময় আগে সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়। ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে অমির কালো গাড়ি থেকে সামনের দরজা দিয়ে নামেন পরীমণি। এরপরই গাড়ি থেকে বের হন বোট ক্লাবের সদস্য অমি, পরীমণির কস্টিউম ডিজাইনার জিমি, তার বোন বনি।
ক্লাবের বাইরের ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, ক্লাবে ঢোকার সময় পরীমণি কালো টপস, জিন্সের প্যান্ট পরা ছিলেন। বনি লাল টপস, সঙ্গে জিন্সের প্যান্ট এবং জিমি কালো হাতাকাটা গেঞ্জি ও হাফ প্যান্ট পরা ছিলেন। অমির পরনে ছিল সাদা গেঞ্জি ও গ্যাবার্ডিনের প্যান্ট। শুধুমাত্র অমি ছাড়া বাকি সবাই মাস্ক পরে ক্লাবে প্রবেশ করেন।
রিসিপশনের ক্যামেরায় তাদের চারজনকে একসঙ্গে বারে ঢুকতে দেখা যায়। তখন রিসিপশন ডেস্কে ছিলেন দুইজন এবং ডেস্কের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন আরও একজন স্টাফ।
বনানী থানার বাইরের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, রাত ৩টা ৫২ মিনিটে বনানী থানায় যান পরীমণি। সেখানে ডিউটি অফিসারের রুমে গিয়ে ঘটনার বর্ণনা দেন পরীমণি। তবে ডিউটি অফিসার তার কথা বুঝতে না পেরে তাকে পুলিশের একটি গাড়িতে এভার কেয়ার হাসপাতালে পাঠানো হয়।
জেএন
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০