সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: বিশ্ব অটিজম দিবস পালন করা হলেও নেই কোন ব্যবস্থা। সিরাজগঞ্জের তাঁত শিল্প এলাকাগুলোতে দিন দিন বেড়ে চলছে অটিষ্টিক ও প্রতিবন্ধি শিশুর হার। কারণ হিসেবে জানা যায়, তাঁতের সুতার কাজে ব্যবহৃত বিষাক্ত বর্জ্য আর পানি এই এলাকার ভুগর্ভের নলকুপের পানির স্তরের সাথে মিশে খাবার পানি মারাত্বক ভাবে দূষিত হয়ে পড়েছে। এই মারাত্বক দুষিত পানি পান করার কারণেই মাতৃগর্ভ থেকেই অটিজম শিশুর জন্ম হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু এই সমস্যার সমাধানে জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা কোন ধরনের ব্যবস্থা নেন না বলেও অভিযোগ এলাকাবাসীর।
তাঁত ও বস্ত্রশিল্পের জন্য দেশের অন্যতম একটি জনপদের নাম সিরাজগঞ্জ জেলা। তাঁত শিল্পের জন্য ব্যবহৃত সুতা রং এর বর্জ্য মিশ্রিত বিষাক্ত পানি এলাকার জলাশয় গুলোতে ফেলে দেয়া হয়। দীর্ঘদিন যাবত এই বর্জ্য ফেলার কারনে জলাশয় ভর্তি হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে কারখানার মালিকেরা পাইপ দিয়ে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে ভুগর্ভস্থ পানির স্তরে মিশিয়ে দিচ্ছে। যে কারনে ভুগর্ভস্থ পানির স্তর মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়ছে। এসব এলাকার নলকুপ চাপলেই এখন দূষিত পানি উঠে আসছে। আর এরকম ভয়ানক রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত পানি প্রতিনিয়ত পান করছে এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ। যার ফলে গর্ভবতী মায়েরা অটিষ্টিক আর প্রতিবন্ধি শিশুর জন্ম দিচ্ছে।
এ অঞ্চলের বেশ কিছু নলকুপের পানি ঢাকায় ল্যাবরেটরিতে পরিক্ষা করেছে। একই সাথে সিরাজগঞ্জ জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরও রাজশাহী জোনাল ল্যাবরেটরিতে পরিক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় পানিতে মারাত্মক ডিজল অক্সিজেন, মেগানিস, ফসফেট, শিশা, মাত্রা অতিরিক্ত আয়রন ও আর্সেনিক পাওয়া গেছে। যা মানব শরীরের জন্য বিশাল হুমকি সরুপ বলে ককর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
সরজমিনে জেলার বেলকুচি উপজেলার গাড়ামাসি গ্রামের শহিদুল্লাহ খান ও তার স্ত্রী নাজমা বেগম জানান, তাদের বাড়ীর চার পাশে সুতা রং এর ডাইং ও প্রসেস মিল রয়েছে। এসব মিলের বর্জ্য যুক্ত রঙ্গিন পানি তার বাড়ীর চাপকলে উঠে আছে। এসব পানি দিয়ে নানা রকম গন্ধ থাকলেও বাধ্য হয়েইে পান করতে হয়। যে কারনে তার ৬ বছরের শিশু কন্যা এশা মনি এই অটিজমের শিকার হয়েছে বলে ধারনা করেছে এশা মনির চিকিৎসক। এ জন্য শহিদুল্লাহ খান ও নাজমা বেগম তারা পরবর্তী সন্তান নিতেও ভয় পাচ্ছে।
এ উপজেলার চালা গ্রামের সাইফুল ইসলাম ও তার স্ত্রী শাহানাজ বেগম জানায়, আজ থেকে সাত বছর আগে তাদের ঘরে একটি পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহন করে অটিজমের শিকার হয়। দেশের নামি দামি হাসপাতালের বড় বড় ডাক্তার দেখিয়েও কোন লাভ হয়নি। চিকিৎসক বলেছেন তার বাড়ীর নলকুপের পানি আর পান করা যাবেনা। বিষয়টি জানতে পেরে এ বাড়ীর পানি নিয়ে পরিক্ষা করে। পাওয়া যায় মারাত্মক ফসফেট, শিশা ও মাত্রা অতিরিক্ত আয়রন ও আরসেনিক ।
সিরাজগঞ্জ জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ তবিবুর রহমান তালুকদার, এসব তাঁত শিল্প এলাকার সুতা রং কারা, প্রসেস ও ডাইং মিলের বিষাক্ত বর্জ্য মিশ্রিত পানি সরাসরি নলকুপের পাইপ দিয়ে ভুগর্ভস্থ পানির স্তরে মিশিয়ে দিচ্ছে অসাধু মিল মালিকরা। যে কারনে এ অঞ্চলের নলকুপ গুলোর পানিতে মারাত্মক ডিজল অক্সিজেন, মেগানিস, ফসফেট, শিশা, মাত্রা অতিরিক্ত আয়রন ও আরসেনিক পাওয়া গেছে।
সিরাজগঞ্জ সরকারী শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এবং শিশু রোগ বিষেশজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ রেজাউল ইসলাম জানান, যদি কোন গর্ভবতী মা কিংবা শিশু ডিজল অক্সিজেন, মেগানিস, ফসফেট, শিশা, মাত্রা অতিরিক্ত আয়রন ও আরসেনিক যুক্ত পানি পান করে তা হলে ঐ গর্ভবতী মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় সন্তান অটিজমের শিকার হতে পারে আবার ছোট শিশুরাও যদি এ পানি পান করে তাহলে তাদেরও সম্ভাবনা আছে।
সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. হাবিবে মিল্লাত মুন্না জানান, ভূগর্ভস্থ্য পানির যথাযথ পরিক্ষার জন্য সরকারের উচ্চ মহলকে কাজ করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। সেই সাথে জেলার সদর হাসপাতালে অটিজম ও প্রতিবন্ধিদের জন্য আলাদা বিভাগ খোলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ওলিউজ্জামান জানান, এ অঞ্চলে বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা প্রদানের লক্ষে তামাই ও সমেশপুর গ্রামে দুটি পানি শোধাগার যন্ত্র বসিয়ে এই এলাকার মানুষের মাঝে বিশুদ্ধ পানি সর্বরাহ করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে আরো বাড়ানো হবে। আর প্রতিবন্ধী ও অটিজমের শিকার শিশুদের সরকারী ভাতা এবং সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।
বছর শেষে শুধু একবার করে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালনের মাধ্যমে খ্যান্ত না থেকে অটিজম ও প্রতিবন্ধি হওয়ার কারণ গুলো চিহ্নিত করে কতৃপক্ষ তা নির্মূলের ব্যবস্থা নেবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন ভূক্ত ভোগী পরিবার গুলো ও সচেতন মহল এলাকাবাসি।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০