রাজশাহীর পুঠিয়া সদরের পরিচিত মুখ। নাট্যকর্মী। কিন্তু এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সে কোথায় থাকে তা জানত না এলাকার মানুষ এমনকি প্রতিবেশীরা।
তার পরিবারের লোকজন কখনো কারো কাছে গল্পও করেনি কোথায় থাকে সে। তার নিকট আত্মীয়রা জানত এক শিল্পপতির মাধ্যমে সে লণ্ডন গেছে ব্যারিস্টারী পড়তে। বৃহস্পতিবার তার মৃত্যুর খবর ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এলাকার মানুষ কেবল তখনই জানতে পারে সে বিদেশে। ফেরদৌসী খাতুন। ডাক নাম রিয়া(৩৩)।
পুঠিয়া পৌর সদরে হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া এই রিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় পাস না করতেই নাম লেখায় নাট্য জগতে।
পুঠিয়ার একটি নাট্যগোষ্ঠীর মাধ্যমে পথ চলা শুরু তার। দেখতে অপূর্ব সুন্দরী রিয়ার হাসিতে যেন মুক্তা ঝরে। বাতাসের মত হেলে দুলে চলাফেরা করত সে। নাটক, নাচ আর গান নিয়ে চলতো তার জীবন। এনজিও ব্র্যাকের প্রচার নাটকও করতে সে। এক পর্যায়ে উশৃংখল জীবন যাপন শুরু করে সে। কিন্তু রিয়ার বাবা সার্কাস পার্টির তবলাবাদক আবু বকর ও বড় ভাই কসাই কুরবান আলী বাধ সাধেন তার কাজে। এ নিয়ে তাদের পরিবারে অশান্তির সৃষ্টি হয়।
কিন্তু কে শোনে কার কথা। কোনো বাধা মানেনা সে। ২০০৪ সালে পুঠিয়ার ইনসানিয়া একাডেমি থেকে এসএসসি পাসের পর স্থানীয় এক নাট্যকর্মীর মাধ্যমে পাড়ি জমান ঢাকায়। সে সময় সেই নাট্যকর্মীর সাথে তার বিয়ের গুন্ঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। কিন্তু এমনটা হয়নি তাদের মধ্যে। পরিচয় ঘটে এক শিল্পপতির সাথে। এবার আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন দেখতে শুরু করে সে। পরে ঢাকার একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে সে। চার বছর আগে স্টুডেন্ট ভিসায় পাড়ি জমায় বিলুপ্ত সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীন হওয়া দেশ আজারবাইজানে।
ভর্তি হয় বাকু বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। পড়ালেখার পাশাপাশি সেখানকার গান্ঞ্জা শহরে হোটেল কর্মীর কাজ নেয় রিয়া। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকালে ভাই আরমান আলীর কাছে ফোন আসে। এতে রিয়া গান্ঞ্জা শহরের কোনো এক স্থানে রিয়া খুন হয়েছে জানতে পারে রিয়ার পরিবার। ওইদিন সকাল দশটার দিকে কিছু দুর্বৃত্ত তাকে পিটিয়ে হাত পা ভেঙে ও মাথায় আঘাত করে তাকে হত্যা করে। কিন্তু তার ঘনিষ্ঠরা এতদিন জানত সে এক শিল্পপতির মাধ্যমে লণ্ডন গেছে ব্যারিস্টার হতে।
সুন্দরী, আকর্ষণীয় রিয়ার বয়স ৩৩ হলেও এখনো সে অবিবাহিত। তিন ভাইয়ের একমাত্র বোন সে। এলাকার মানুষ জানত বিয়ে করে ঘর সংসার করছে সে। অনেক দিন হলো দেখা নাই তার। রিয়ার এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুতে দুমড়ে মুচড়ে পড়েছে তার পরিবার। শেষ পর্যন্ত তার লাশ ফেরত চায় তার পরিবার। কিন্তু আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারনে তাদের আশা পূরণ হবে কিনা এমনটাই জানান নিহত রিয়ার বাবা আবু বকর।
তিনি আরও জানান, শুনেছি আজারবাইজানে বাংলাদেশের কনস্যুলেট নেই। আমার এক ছেলে ফরমান আলী ঢাকায় একটি টেক্সটাইল মিলে কাজ করে। সে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করছে ইরান কনস্যুলেটের মাধ্যমে রিয়ার লাশ দেশে আনতে। রিয়ার মা শয্যাশায়ী। আমরা রিয়াকে এক নজর দেখে সুষ্ঠুভাবে দাফন করতে চাই। তবে কবে নাগাদ রিয়ার লাশ পাব তা অনিশ্চিত।
এদিকে পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোহরাওয়ার্দী হোসেন জানান, বিষয়টি শুনেছি। তবে তাদের পরিবার থেকে এখনো কেউ যোগাযোগ করেনি। আবার প্রশাসনিক ভাবেও কোনো কাগজপত্র আমাদের হাতে আসেনি।
বিএ/
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০