বিশেষ প্রতিনিধি: ৫৪ বছর বয়স পার হয়ে গেলেও পুলিশের বিধি লঙ্ঘন করে দায়িত্ব পালন করছেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি শাহাদত হোসেন খান। অথচ নীতিমালা অনুযায়ী ৫৪ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার পর থানার ওসির দায়িত্বে থাকার সুযোগ নেই। অথচ চলতি বছরের গত সেপ্টেমবর মাসের ২১ তারিখে রাজপাড়া থানার ওসি ৫৫ বছরে পা দিয়েছেন। ৫৪ পার হয়ে তার বয়স ৫৫ বছর পার হয়ে কয়েক মাস হয়ে গেছে কিন্ত এখনো তিনি বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়াও এই বিতর্কিত ওসির বিরুদ্ধে পুলিশ সদস্য ও থানায় সেবা নিতে আসা মানুষের সাথে অসাদাচরণসহ
বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। ওসি শাহাদতের বিরুদ্ধে রাজশাহীর স্থানীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ও এক সাংবাদিক পুলিশ কমিশনার, পুলিশের আইজিপি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, সনদ অনুযায়ী ১৯৬৬ সালের ২১ সেপ্টেমবর ওসি শাহাদত হোসেন জন্মগ্রহণ করেন। সেই হিসেবেই তার বয়স ৫৪ পেরিয়ে ৫৫ বছর চলছে। বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়া ছাড়াও পুলিশের নীতিমালা অনুযায়ী একজন পরিদর্শক টানা ১০ বছর বিভিন্ন থানায় ওসিগিরি করার পর আর ওসির দায়িত্বে থাকার সুযোগ পাবেন। পুলিশ অধিদপ্তরের এমন বিধি রয়েছে। তারপরও অজ্ঞাত এখানো স্বপদে বহাল ওসি
শাহাদত। বয়স ৫৫ বছরে পড়ার পর তিনি থানার ওসির দায়িত্বে থাকতে নানামুখী তদবিরও করেছেন। এ বিষয় নিয়ে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
খেঁাঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, ২০১৫ সালে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশে যোগদান করেন ওসি শাহাদত। যোগদান করেই তিনি নগরীর অন্যতম প্রধান থানা বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসির দায়িত্ব পান। সেখানে প্রায় দুই বছর ওসির দায়িত্ব পালন করার পর অভিযোগ উঠলে তাকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে আরএমপি বদলি করে দেয়া হয়। আরএমপি থেকে বদলি হওয়ার পর মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে
আবার তিনি তদবির করে আরএমপিতে যোগদান করেই তিনি মতিহার থানার ওসি হিসেবে যোগদান করেন। মতিহার থানায় তিনি প্রায় দেড় বছরের অধিক সময় ওসির দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি মতিহার থানা থেকে রাজপাড়া থানায় ওসি হিসেবে যোগদান করেন। এ পর্যন্ত তিনি মতিহার থানার ওসির দায়িত্ব পালন করছেন। এরমধ্যেই তার ওসিগিরি করার বয়সসীমা পেরিয়ে যায়। ঘুরেফিরে তিনি আরএমপির গুরুত্বপূর্ণ তিন থানায় দায়িত্ব পালন করেন। প্রত্যেক থানা এলাকাবাসীর তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। সেবা প্রত্যাশীরা তার বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ বেশি
করে থাকেন। তার অধীনস্থ থানার পুলিশ সদস্যরাও তার দুর্ব্যবহারের হাত থেকে ছাড় পাননা বলেও একাধিক সদস্যদের পক্ষ থেকেও অভিযোগ রয়েছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে একাধিক সেবা প্রত্যাশী অভিযোগ করেন, বিপদে থানায় গেলে উল্টো ওসির কাছে হেনস্থা হতে হয়। সাথে খারাপ আচরণও করেন। যদিও পুলিশের আইজিপি ও উদ্ধর্তন কর্মকর্তারা থানায় সেবা নিতে আসা মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার কাঙ্খিত সেবা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়ে চলেছেন। কিন্ত এই ওসির ক্ষেত্রে একেবারে ভিন্ন চিত্র। ওসি শাহাদত সাংবাদিকদের কাছে তার বয়স ৫৪ পেরিয়ে ৫৫ তে পড়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। কিন্ত পুলিশের বিধির বিষয়ে তিনি জানেন না বলে জানান।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, ৫৪ বছর পার হলে থানার ওসির দায়িত্ব পালন করতে পারবেনা এমন নীতিমালা পুলিশের পক্ষ থেকে রয়েছে। কিন্ত এটা কোন আইন নয়। সংশ্লিষ্ট ইউনিট প্রধান চাইলে ওসির দায়িত্বে রাখতে পারবেন। নীতিমালা থাকলে মানা হচ্ছেনা এটা আইনের পরিপন্থি কিনা প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে নির্দেশনা রয়েছে। ইউনিট চাইলে তাকে যেকোন জায়গায় দায়িত্বে রাখতে পারেন। তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রত্যেকটি অভিযোগ তদন্ত করা হয়। সত্যতা পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে, আরএমপির এই বিতর্কিত ওসির বিরুদ্ধে সম্প্রতি মাসুদ আলী পুলক নামের একব্যক্তি পুলিশের আইজিপি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। সেসব অভিযোগে তিনি ওসির, নানা অনিয়ম ও মিথ্যা এজাহার নিয়ে মানুষকে হয়রানি করার অভিযোগও করেছেন।
এর আগে চলতি বছরের ৯ মে রাজশাহীর স্থানীয় দৈনিক গণধ্বনি প্রতিদিনের সম্পাদক ইয়াকুব শিকদার ওসি শাহাদতের বিরুদ্ধে আরএমপি পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এছাড়াও তিনি চলতি বছরের ৩ জুন পুলিশ অধিদপ্তরের শৃঙ্খলা শেষে ওসি শাহাদতের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। সেই অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন অভিযোগের বাদী ইয়াকুব শিকদার।
এম/আর
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০