জীবন যুদ্ধ বড়ই বৈচিত্রময়! সন্তানকে শিক্ষিত ও সুখী করতে মা-বাবা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেন। কিন্তু নওগাঁর মহাদেবপুরে জীবন-জীবিকার তাগিদে অতিদরিদ্ররা ছোট্ট শিশুদের ইটভাটার ঝুঁকিপূর্ণ কাজে লাগাচ্ছেন। শ্রম আইন, কারখানা আইন ও শিশু আইনে শিশুদের শ্রমে নিয়োগ নিষিদ্ধ হলেও পেটের তাগিদে তাদের যেন কিছুই করার নেই; জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেও মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছে শিশুরা।
আইনের তোয়াক্কা না করেই শিশুদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন তিন ফসলি কৃষি জমিতে গড়ে ওঠা অবৈধ ইটভাটা মালিকরা। এসব ভাটার পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের অনুমোদন নেই বলে জানিয়েছেন নওগাঁ জেলা পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মকবুল হোসেন। সস্তা ও সহজে শিশুশ্রমিক মেলায় ভাটা মালিকরা তাদের কাজে লাগাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রকাশ্যে শিশুশ্রমের ঘটনা ঘটলেও প্রশাসনের তেমন কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই।
সরেজমিনে উপজেলার খাজুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মেসার্স খান এন্ড সন্স ইটভাটায় শিশুরা কাঁচা ইট শুকানোর জন্য ইট উল্টে দেয়া, শুকানো এবং ভেঙে যাওয়া কাঁচা ইট কুড়িয়ে স্তুপ করছেন। থরে থরে সাজানো কাঁচা ইট রোদে শুকানোর পর এগুলো নিয়ে যাওয়া হচ্ছে চুল্লিতে। আগুনের তাপে পুড়ছে ইট। সেই সাথে পুড়ছে শিশুর রঙিণ ভবিষ্যৎ এবং স্বপ্নও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিশুশ্রমিকরা জানায়, ভাটায় কাজ করা শিশুদের বয়স ৭-১১ বছরের মধ্যে। ওদের কেউ কেউ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে।
আবার কেউ এখন আর বিদ্যালয়ে যায় না। কেউ নিজে থেকেই, আবার কেউ কেউ মা-বাবার সাথে ভাটার কাজে এসেছে। কাঁচা ইট রোদে শুঁকানো, ইট তৈরি, ট্রলিতে করে ইট টেনে ভাটার চুল্লিতে পৌঁছানো ও মাটি বহনসহ সব কাজেই নিয়োজিত রয়েছে শিশুরা। তারা আরও জানায়, এক হাজার ইট শুঁকানোর জন্য প্রতিটি শিশুকে দেওয়া হয় মাত্র ৪০-৫০ টাকা। এ কাজের জন্য একজন প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিককে দিতে হতো ২০০-৩০০ টাকা। অথচ মজুরি সাশ্রয় করতে আইন অমান্য করে শিশুদের কাজে লাগাচ্ছেন ইটভাটার মালিকরা।
শিশুশ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মেসার্স খান এন্ড সন্স ইটভাটার ম্যানেজার শ্রী সুবোধ। তিনি জানান, তাদের ভাটায় কোনো শিশুশ্রমিক নেই। আইন মেনেই তারা সরদারদের মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগ করেছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান মিলন জানান, আইনে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ। বিষয়টি তার জানা নেই। তদন্ত করে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও জানান তিনি।
জেএন
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০