বাঘা প্রতিনিধি, রাজশাহীর বাঘা পৌর নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী আক্কাছ আলীর পরাজয়ের নেপথ্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। গতকাল শনিবার রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সাংসদ ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহিরয়ার আলম তাঁর নিজস্ব ফেসবুকে ষ্ট্যাসাসে উল্লেখ করেছেন বাঘা পৌর নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সকলকেই ধন্যবাদ জানাই। দু:খজনকভাবে এই ভোটে নৌকা প্রতিকের প্রার্থী ত্যাগী, পোড় খাওয়া, পরীক্ষিত, নিবেদিত, দূর্দিনের রাজপথের সৈনিক আওয়ামী লীগ নেতা আক্কাছ আলী সামান্য ভোটে পরাজিত হয়েছে। কিন্তু ১২ জন কউন্সিলরদের মধ্যে আওয়ামী লীগেরই ৮ জন নির্বাচিত হয়েছে। আমি জয়ী সকলকে শুভ কামনা জানাই।
বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের দূর্গ, ভবিষ্যতেও তা থাকবে এতে কোন সন্দেহ নাই। তারপরও আমাদের মেয়র প্রার্থীর পরাজয়ের বড় কারন হলো উপজেলা ও পৌর আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের বেশ কিছু নেতাদের কাউন্সিলর ভোটে স¤পৃক্ত হওয়া। পাশাপাশি গুটি কয়েক নেতার ব্যক্তি স্বার্থও এই নির্বাচনকে প্রাভাবিত করেছে। আমাকে কথা দিয়েও কাউন্সিলর নির্বাচন থেকে সরে যায়নি, এরকম নজিরও সৃষ্টি হয়েছে যা আমি কঠিন হাতে দমন করবো সামনের দিনে। ১২ বছর মেয়র পদে থেকে এবং দীর্ঘ সময় মামলা এই নির্বাচনে যে প্রভাব ফেলেছে তা নাইবা বললাম। নির্বাচনে প্রার্থীর জয় পরাজয় নির্ভর করে প্রার্থী এবং দলের নেতাকর্মী উভয়দেরই তৎপরতা ও কর্মকান্ডের উপর। এই পরাজয়ের দায়ভার কেউ এড়াতে পারবে না।
শুরু থেকেই বাঘা পৌরসভার এই নির্বাচনটি এই সময়ে বিশেষকরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে হওয়া নিয়ে কিছুু মানুষের মধ্যে আশংকা ছিল। কিন্তু বাঘা বাসীর জোরালো দাবীর প্রতি সম্মান রেখেছি বলেই আমি স্থানীয় সাংসদ এবং মন্ত্রী হয়েও নির্বাচনে বাধা হয়ে দাড়াইনি। পূর্ব থেকেই প্রার্থী এবং দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের সমন্বয়হীনতা ও আস্থাহীনতা বিদ্যমান ছিল।
আমি সর্বাত্তক চেষ্টা করেছি এবং এই নির্বাচনকে সামনে রেখে দেরিতে হলেও বাঘা আওয়ামী লীগ একত্রিত হয়েছে। যতটা সমন্বিতভাবে এবং পরিকল্পিতভাবে কাজ করা উচিত ছিল তার সময় ও সুযোগ পাওয়া যায়নি বলেও হয়তো আমরা মেয়র হারিয়েছি। ভোটের আগের রাতেও আমি বাঘার গুরুত্বপূর্ণ ৫ জন নেতার কাছ থেকে আগাম ভোটের হিসাব নিয়েছিলাম। সেখানেও আমি জয় নিয়ে শংকিত ছিলাম। প্রার্থীর পক্ষ থেকেও কিছু সিমাবদ্ধতা ছিলো। যা এখানে বলতে চাইনা। আক্কাছ আলী মেয়র থাকাকালীন এই পৌরসভাকে তৃতীয় শ্রেনী থেকে প্রথম শ্রেনীত উন্নীত করেছে। তার সময়েই বাঘা পৌরসভা প্রায় ৫০ কোটি টাকার উন্নয়ন বরাদ্দ পেয়েছে এবং অনেক উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে।
আমাদের প্রার্থী পরাজিত হলেও পৌরসভার উন্নয়ন কর্মকান্ড অব্যহত থাকবে। পাশাপাশি আক্কাছ আলীর রাজনীতি আরও বেশি জোরালো হবে বলে আমি মনে করি। পোড় খাওয়া এই নেতার এই অভিজ্ঞতা নতুন নয়। অতীতেও তিনি পরাজিত হয়েও গণমানুষের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং দুর্দান্ত মনোবল নিয়ে ভোটে জয়লাভ করেছেন।
এই পরাজয়ে অনেকের কাছেই অনেক প্রশ্নের উদয় হতে পারে। কিন্তু সংঘবদ্ধ আওয়ামীলীগ যে, সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী তা নতুন করে প্রমানের কিছু নাই। তবে এই ফলাফল নিয়ে নের্তৃবৃন্দের সাথে নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষন হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। হাতে গোণা কিছু চক্রান্তকারী আর কিছু বিরোধী মানুষ এই পরাজয়ে হয়তো মুচকি হাসছেন। তাদের মুখকে মলিন করে দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনতে বাঘা পৌরসভার সবাই আবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে যেমনটি নিকট অতিতে করেছিলো আড়ানী পৌরসভায় আর ৩টি ইউনিয়নে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও স্থানীয় ইস্যুগুলোই ভোটারের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে। এই পরাজয় যে কোন ক্রমেই পৌরসভায় আওয়ামীলীগের জনপ্রিয়তার মানদন্ড নয়, তা এই নির্বাচন যারা কাছ থেকে দেখেছেন তারা অবশ্যই মানবেন।
এই নির্বাচন এটাও প্রমাণ করেছে আওয়ামীলীগ সরকার অন্য যে, কোন দলীয় সরকারের চেয়ে বেশী গণতান্ত্রিক এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে এই নির্বাচন হতোইনা। আশা করি পৌরসভার জনগণ তা মনে রাখবেন।
বাঘা পৌরসভার নির্বাচন একযুগ পর ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দলীয় একক প্রার্থী ছিলেন আক্কাছ আলী। নির্বাচনে বিএনপির একক প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাকের কাছে পরাজিত হন তিনি।
২২ হাজার ভোটার নিয়ে ২০০১ সালে বাঘা পৌরসভা গঠিত হয়। এ সময় নির্বাচনে ৫২০ ভোটের ব্যবধানে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক। এই নির্বাচনে আ.লীগের বিদ্রোহীস্ত্র প্রার্থী থাকায় আক্কাছ আলী পরাজিত হন। তবে ২০০৬ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনে ২২৬ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হন আওয়ামীলীগ নেতা আক্কাছ আলী। তবে এই নির্বাচনে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার কারনে আবদুর রাজ্জাক পরাজিত হন।
প্রশ্ন উঠেছে, ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচনে কারো বিরুদ্ধেই তো বিদ্রোহী প্রার্থী নেই-তাহলে এক হাজার ৫২৬ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামীলীগের প্রার্থী আক্কাছ আলী পরাজিত হলেন কেন? কারণ হিসেবে জানা গেছে, দলীয় কোন্দল, পৌর করের নামে ভ্যান চালকদের কাছে অর্থ আদায়, লীয় কার্যালয়ের সামনে বিস্ফোর, নারীদের ভোট না পাওয়া, সীমানা বৃদ্ধির কারণে ভোট বেড়ে যাওয়ায় প্রার্থীর ফুরফুরে মনোভাব।
আক্কাছ আলী ১২ বছর ক্ষমতায় থাকাকালিন যাদের মূল্যায়ন করেছে তাদের অধিকাংশ জন এবার কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়ে ভোট করেছেন। আর যাদের মূল্যায়ন করেন নি তারা মঞ্চে ভাষণ দিলেও মাঠপর্যায়ে কাজ করেন নি। এমনকি জেলা পর্যায়ের নেতারাও বাঘায় এসে লোক দেখানো বক্তৃতা করে চলে গেছেন। দলের ত্যাগী কর্মীদের বক্তব্য এ সমস্ত নেতারা যদি মাঠ পর্যায়ে কাজ করতো তাহলে এই পরাজয় হতো না।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/রখ
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০