পাকিস্তানের প্রতিটি জয় মানে আরব আমিরাতে উৎসব। প্রবাসী পাকিস্তানিরা এখানে আনন্দ মিছিল নিয়ে বের হন রাস্তায় ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ ধ্বনিতে। এভাবেই কাটে মধ্যরাত পর্যন্ত। এখানকার পাকিস্তানি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সাজসাজ রব, উড়ছে পাকিস্তানের পতাকা। দলের জয়ে যেন আরব আমিরাত হয়ে ওঠে একটুকরো পাকিস্তান।
এখানকার পাকিস্তানি রেস্তোরা ‘করাচি দরবার’ বিখ্যাত এক নাম। প্রতিটি শাখায় ভিড় জমে যায় খেলার দিন। তার আগের দিন থেকে বিক্রি হয় টিকিটও। সবার উদ্দেশ্য তো ওই জয়টাই।
ফাইনালে যেতে পাকিস্তানের সামনে আর একটা ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুইয়ে দুইয়ে চার মিলে গেলেই তৃতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে যাবে এশিয়ার অন্যতম পরাশক্তি দলটি।
চলতি বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে বাবর আজমের দল। সুপার টুয়েলভ পর্বে পাঁচ ম্যাচের সবকটি জিতেই এসেছে সেমি-ফাইনালে। এই যাত্রায় হারিয়েছে অন্যতম ফেভারিট ভারতকে, হারিয়েছে ফাইনাল নিশ্চিত করা নিউজিল্যান্ডকেও।
অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়াকে সেমি-ফাইনালে আসতে মেলাতে হয়েছে নানা সমীকরণ। চারটি ম্যাচ জিতলেও সেমির টিকিট নিশ্চিত করতে তাকিয়ে থাকতে হয়েছিল রান-রেটের দিকে। তবে সেমি-ফাইনালের মতো ম্যাচে লড়াইয়ে নামার আগে অজিদের মাথায় রাখতে হবে দুবাইয়ে পাকিস্তানের ৯০ শতাংশ দর্শকের কথাও।
এসবের মাঝেও অজিদের ভাবতে হবে অতীত নিয়ে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে দুই দলের ২৩ বারের মুখোমুখিতে পাকিস্তানের জয় ১৩টি আর অস্ট্রেলিয়ার জয় ৯টি। টাই হয়েছিল এক ম্যাচ। বিশ্বকাপের আসরে ছয়বারের লড়াইয়ে অবশ্য জয়ের পাল্লা দু’দলেরই সমান। ৩টি করে জয় দুই দলের।
তবে দুবাইয়ের স্পোর্টিং উইকেটে দুই দলের ব্যাটারদের ভাবতে হবে প্রতিপক্ষের পেসারদের নিয়ে। একদিকে মিচেল স্টার্ক, জশ হ্যাজেলউড, প্যাট কামিন্সরা। অন্যদিকে রয়েছেন শাহিন শাহ আফ্রিদি, হাসান আলি, হারিস রউফদের মতো তারকারা।
স্পিন এটাকিংয়েও দুই দলেই আছেন বিশ্বসেরারা। দুই পাকিস্তানি স্পিনার শাদাব খান, ইমাদ ওয়াসিম অন্যদিকে অজিদের স্পিন বিভাগ একাই সামলে নিচ্ছেন অ্যাডাম জাম্পা।
এদিকে লম্বা সময় ধরে অফ-ফর্মে থাকা ডেভিড ওয়ার্নারও ফিরেছেন ফর্মে। তাছাড়া ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অধিনায়ক অ্যারণ ফিঞ্চ নিছেই। এছাড়াও রয়েছেন মার্কাস স্টয়েনিস, গ্ল্যান ম্যাক্সওয়েলরা
অজি ব্যাটারদের শক্তির হুঙ্কারে পাল্টা জবাব দিতে তৈরি চলতি আসরে চার ফিফটি করা বাবর আজম ও ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান। তবে কন্ডিশন বলে এগিয়ে থাকবে পাকিস্তান। ঘরের মাঠে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বন্ধ হবার পর থেকেই আরব আমিরাতে নিয়মিত খেলেছে পাকিস্তান।
তাই সবদিক থেকে পাকিস্তানকে এগিয়ে রাখছেন অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। তবে নিজেদেরও পিছিয়ে রাখছেন না তিনি। বলেছেন, ‘পাকিস্তান এখন খুব ভাল ফর্মে। ওরা ব্রিলিয়ান্ট ক্রিকেট খেলছে। পাওয়ার প্লেতে ব্যাটে-বলে সমান তালে খেলাটাই ওদের সাফল্যের কারণ। এদিকে গত কয়েক সিরিজে যদি তাকান তবে আমাদের পারফরম্যান্স দেখে হয়ত সেমিতে খেলার আগে অনেকে হারিয়েই দিয়েছেন আমাদের। এতে কোনও সমস্যা নেই। যে কেউ যেকোনো কিছু ভাবতে পারে। আমরা মাঠেই নিজেদের প্রমাণ করবো।’
এদিকে নিজ দেশের বিপক্ষে লড়াই দেখতে মুখিয়ে আছেন পাকিস্তান দলের ব্যাটিং কোচ ম্যাথু হেইডেন। অল্প সময়ের জন্য দলটির দায়িত্বে নিয়ে আমূল বদলে দিয়েছেন পাকিস্তানকে। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে হেইডেনের বিশ্বাস জিতবেন বিশ্বকাপ, ‘এটা ঠিক যে আমি খুব অল্পসময় এই দলটার সঙ্গে আছি। এর মানে আমাকে খুব দ্রুত ওদের হৃদয়ের সঙ্গে যুক্ত হতে হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি এতে আমি সফল। আর পাকিস্তান এমনিতেই প্রতিভাবান ক্রিকেটে ভরপুর। তো আমাকে খুব একটা পরিশ্রমও করতে হয়নি এবং আমরা গ্রুপ হিসেবে কতটা এক হতে পেরেছি তা আপনারা ভারত ম্যাচে দেখেছেন। ওই ম্যাচই আমাদের জোর ধাক্কা দিয়েছে। আমি দেখছি ক্রিকেটারদের মধ্যে ওই ম্যাচ জয়ের পর শিরোপার ক্ষুধা বেড়েছে। এখন সামনে অস্ট্রেলিয়ার মতো পাঁড় পেশাদার দল আছে, এটা সত্যিই বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আমি আশাবাদী যেভাবে আমরা এগিয়েছি তার ধারাবাহিক তাতে অবশ্যই আমরা সফল হবো।’
২০০৭ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভাগ্যের খেলায় ভারতের কাছে হেরে গেলেও পরের আসরে (২০০৯) শিরোপা ঘরে তোলে পাকিস্তান। এরপর আর ফাইনালে ওঠা হয়নি দলটির। ওয়ানডের পাঁচবার বিশ্বকাপ জয়ী অজিরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ফাইনাল খেলেছে মাত্র একবার। ২০১০ সালের আসরে ফাইনালে উঠলেও হেরে যায় ইংল্যান্ডের কাছে। অপেক্ষা এবার কে হাসে শেষ হাসি।
তবে এই ম্যাচে বড় বিষয় হতে পারে টস ভাগ্য। দুবাইতে চলতি বিশ্বকাপে অনুষ্ঠিত হওয়া ১১টি ম্যাচের মধ্যে পরে ব্যাট করা দল জিতেছে ১০টি ম্যাচে। আগে ব্যাট করে জয় কেবল ১টি ম্যাচে।
বিএ/
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০