খবর২৪ঘণ্টা.কম, ডেস্ক: পাল্টে যাচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ পদ্ধতির চিত্র। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ডিজিটালাইজেশনের মধ্যে প্রবেশ করছে নির্বাচন পদ্ধতি। পরিবর্তন আসছে গতানুগতিক সব নিয়ম-কানুনে। অবাধ প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ভোট ব্যবস্থাপনায় আমুল পরিবর্তন নিয়ে আসার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা এবং নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ সংক্রান্ত কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এখন শুধু কমিশনের অনুমোদনের অপেক্ষা।
ইসি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় ছয়টি এবং অফিস ব্যবস্থাপনাতে চার ধরনের পরিবর্তন আসবে। সেই সঙ্গে সংযোজন হবে অত্যাধুনিক হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার। এ দুটিতে সম্ভাব্য ব্যয় হবে অর্ধকোটি টাকা। পদ্ধতিগত এই সংস্কারের কাজটি যথাযথ প্রয়োগ ঘটাতে সময় লাগবে ৪৬ সপ্তাহ; যা কয়েকটি ধাপে পাবে চূড়ান্ত রূপ। এর প্রয়োগ ঘটলে বদলে যাবে নির্বাচনের ফল পাল্টে দেয়ার সংস্কৃতি। দৌরাত্ব শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে ক্ষমতার দাপুটেদের। দলবাজ কর্মকর্তারা বাদ পড়বেন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা থেকে। দূরে বসেও তাৎক্ষণিক ভোটগ্রহণের চিত্র প্রত্যক্ষ করা যাবে সংসদীয় ৩০০ আসনের।
নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় সংস্কারের মধ্যে রয়েছে- পোলিং পারসোনাল ম্যানেজম্যান্ট, ক্যান্ডিডেট নমিনেশন প্রসেস অ্যান্ড ক্যান্ডিডেট সিস্টেম ম্যানেজম্যান্ট, অবজারভার ম্যানেজমেন্ট, পোল মনিটরিং রিস্ক অ্যানালাইসিস, সেন্টার ওয়াইজ রেজাল্ট কালেকশন অ্যান্ড রেজাল্ট ম্যানেজমেন্ট ও জিআইএস অ্যাপলিকেশন ফর পোলিং সেন্টার লোকেশন অ্যান্ড রেজাল্ট।
এছাড়া অফিস ব্যবস্থাপনার মধ্যে চার ধাপ হচ্ছে, হিউম্যান রির্সোস ম্যানেজমেন্ট, অ্যানোয়াল কনফিডেন্সসিয়াল রিপোর্ট (এসিআর) ম্যানেজমেন্ট, লিগ্যাল বা কেন ম্যানেজমেন্ট ও ইনভেনটরী ম্যানেজমেন্ট।
বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ পদ্ধতি সহজ এবং ফল দ্রুততার সঙ্গে একত্রিত করার লক্ষ্যে ইসির মাঠ পর্যায়ের নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য একটি ‘ট্যাব’ সরবরাহ করবে কমিশন। এটি এসএমএসের মাধ্যমে ভোটকেন্দ্রের তথ্য প্রেরণ, ভোটকেন্দ্রের ফল প্রেরণ, ভোটগ্রহণ চলাকালিন সময়ে সরাসরি ভিডিও, ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় তথ্য সংগ্রহ, মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন বায়োমেট্টিক ভেরিফিকেশন সার্ভিস ও মৃত ভোটার ব্যবস্থাপনা সমন্বয়ের ভূমিকা রাখবে। যান্ত্রিক এই যন্ত্রটির সহায়তায় ভোটের ফলের তথ্যটি নিদ্দিষ্ট সফটওয়্যারে আপলোড সাপেক্ষে কমিশন তাৎক্ষণিক কেন্দ্রওয়ারী ফল দেখতে পাবেন। পরে ম্যানুয়াল এবং ডিজিটাল নির্বাচনের ফল মিলিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হবে।
পোর্টালের মাধ্যমে সব প্রতিষ্ঠান থেকে সম্ভাব্য ভোট কর্মকর্তাদের আগাম তথ্য সংগ্রহ করা হবে। পরবর্তীতে সংরক্ষিত ডাটাবেইজ থেকে তথ্য যাচাই-বাছাই করে দলবাজদের বাদ দিয়ে নিয়োগ করা হবে ভোট কর্মকর্তা। কারণ নির্বাচনে ভোট কর্মকর্তা নিয়োগ এবং ভোটকেন্দ্র চিহ্নিতকরণকে সংবেদনশীল কাজ মনে করছে ইসি। তাদের নিয়োগে যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় এবং স্বচ্ছ হয় তার জন্য প্রযুক্তির এই ব্যবহার হবে; এটাকে সাংবিধানিক সংস্থার ভাষায় ভোট কর্মকর্তা নিয়োগ এবং ভোটকেন্দ্র ব্যবস্থাপনা।
প্রযুক্তির সহায়তায় নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের তথ্য অনলাইনে সংগ্রহ করা অর্থাৎ প্রার্থীরা একটি নিদিষ্ট পোর্টালে তার মনোনয়নপত্র জমা দেবে। এতে করে মনোনয়নপত্র বাছাইসহ অন্যান্য কাজ নির্ভুলভাবে সম্পন্ন করা যাবে।
কমিশনের ভাষায় এই প্রযুক্তিকে বলা হচ্ছে অনলাইন মনোনয়নপত্র জমা এবং প্রার্থী ব্যবস্থাপনা। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থাপনা এবং রিপোর্টিংয়ের সহায়তায় দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষকদের ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে তাদের আবেদন গ্রহণ, তথ্য সংগ্রহ, পর্যবেক্ষকদের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা এবং তথ্য সরবরাহ করা এর মাধ্যমে পর্যবেক্ষকদের পরিচয়পত্র প্রদান ও তাদের প্রতিবেদন সংগ্রহ সহজ হবে।
বর্তমানে নির্বাচনের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য কয়েকজন কর্মকর্তার সমন্বয়ের একটি টিম কাজ করে। তারা নিদিষ্ট এলাকার অন্তর্ভুক্ত সকল প্রিসাইডিং অফিসারের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। এমনকি তারা ভোট শুরুর পর প্রতি ঘন্টায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ফোনে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে, যা সময় সাপেক্ষ। এছাড়া এই প্রক্রিয়ায় নেয়া তথ্য নিয়ে পরবর্তীতে বিভ্রান্ত তৈরি হয়। তাছাড়া এ সকল তথ্যের কোন ডাটাবেজ তৈরি হয় না। ফলে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সংগৃহিত প্রতিবেদন নিয়ে কোন বিশ্লেষণ করতে পারে না কমিশন।
আগামী নির্বাচনে প্রযুক্তির প্রসার ঘটাতে প্রিসাইডিং অফিসাররা ইসির নির্ধারিত শর্ট কোডে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে কেন্দ্রের অবস্থান জানাতে পারবেন। ইসির সার্ভারে কর্মকর্তাদের পাঠানো ক্ষুদে বার্তা সংরক্ষণ থাকবে এবং প্রোগ্রামের মাধ্যমে কোডগুলোকে ডি-কোড করে প্রদর্শন করা যাবে, এই পদ্ধতিকে পোল মনিটরিং এবং রিস্ক অ্যানালাইসিস বলছে কমিশন। এর মাধ্যমে ফল পাল্টে দেয়া ক্ষমতার দাপুটেদের দৌরাত্ব কমে আসবে। আর কেন্দ্রওয়ারী নির্বাচনের ফল সংগ্রহ এবং ফল ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি দৃশ্যমান করতে বিদ্যমান সফটওয়্যারকে উন্নীত (আপডেট) করা এবং ফলাফল সংগ্রহের জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে ট্যাব সরবরাহ করা। এর সহায়তায় তাৎক্ষণিক ফলাফল ওয়েব সাইটে প্রকাশ করার মাধ্যমে দূরে বসে নির্বাচনের ফল প্রত্যক্ষ করতে পারবেন ইসির শীর্ষব্যক্তিরা।
এছাড়া সংসদীয় ৩০০ আসনের ভোটগ্রহণ পদ্ধতিকে ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করতে জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেমে (এআরসিজিআইএস) পদ্ধতির সফটওয়্যার উন্নীত করা হচ্ছে। এআরসিজিআইএসর ওয়েব ভার্সনের মাধ্যমে পুরো নির্বাচনী এলাকাকে দেখানো সম্ভব। এমনকি ভোটকেন্দ্রের ফল, ভোট চলাকালিন কেন্দ্রের অবস্থা ম্যাপে প্রদর্শনের জন্য কেন্দ্রের লংজিটিউট এবং ল্যাটিটিউট সংগ্রহ করে জিইও-স্পাটাইল ডাটাবেজে সংযোজন করা। অফিস ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ফেরাতে সব কর্মকর্তা-কর্মচারিদের তথ্য ও ছবি নিয়ে ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করা তাদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য কার্যক্রম তদারিক কমিশন সচিবালয়ে বসে অবলোকন করতে হিউম্যান রির্সোস এবং প্যারোল ম্যানেজমেন্ট সিষ্টেম চালু করা। আর নির্বাচনী কার্যক্রম বা প্রক্রিয়ায় কোন সঙ্গতি পরিলক্ষিত হলে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি লিগ্যাল ইস্যু ম্যানেজমেন্ট সিষ্টেম চালুর মাধ্যমে যেকোন অংশীজন আইনের আশ্রয় গ্রহণ করতে পারবে।
এছাড়া ইসি সচিবালয় ও মাঠ পর্যায়ের দপ্তরগুলোর স্থায়ী ও অস্থায়ী সম্পদসমূহের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাতে স্বচ্ছতা ফেরাতে ইনভেনটরী অ্যান্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সহায়ক হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করছে কমিশন। আগামী নির্বাচনের আগে এই পদ্ধতি বাস্তবায়নের জন্য ক্রয় থেকে শুরু করে সব ধরণের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে সময় লাগবে ৪৬ সপ্তাহ। এর পেছনে কমিশনের ব্যয় হবে নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় ৪৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং অফিস ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ফেরাতে ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা।
এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার করে নির্বাচন কার্যক্রমকে আরো গতিশীল ও স্বচ্ছ করা যায় এ বিষয়ে আমার নেতৃত্বে যে কমিটি রয়েছে সেখানে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে এই পদ্ধতিটিকে নির্বাচনে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটা কমিশন সভায় উপস্থাপন করা হবে এবং তাদের অনুমোদন সাপেক্ষে এই প্রযুক্তি বাস্তবায়নে আমরা কাজ শুরু করবো।
তিনি আরো বলেন, প্রযুক্তির ব্যবহার করতে চাইছি নির্বাচনে স্বচ্ছতা ফেরার জন্য। তবে নির্বাচনে যে ধরণের প্রযুক্তির গ্রহণযোগ্যতা পাবে সেটা নিয়েই আমরা কাজ করছি। তিনি বলেন, নির্বাচনী ফল এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কেন্দ্র থেকে বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে সরাসরি ইসি সচিবালয় এবং রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠাতে পারবেন। পাশাপাশি ম্যানুয়ালি পদ্ধতিতেও তথ্য পাঠাতে পারবেন। দুটির তথ্য সমন্বয় করে ফল প্রকাশ করা হবে। পাশাপাশি এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ৩০০ সংসদীয় আসনের তথ্যও তাৎক্ষণিক প্রত্যক্ষ করা যাবে।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/রখ
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০