দেশের সব ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নারীরা নিজেদের দক্ষতার প্রমাণ দিচ্ছেন। সেদিন আর নেই যে মেয়েরা শুধু ঘরের কাজই করবেন। নারীদের এখানে চাকরি করা যাবে না, ওখানে চাকরি করা যাবে না। এসব পুরোনো ধ্যান-ধারণাকে পেছনে ফেলে আগামীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে নারীরা।
পুরুষদের সঙ্গে একই কাতারে থেকে নারীরা এখন সব ক্ষেত্রে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছেন। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত পাবনা ঈশ্বরদী জংশন রেলওয়ে স্টেশনের নারী স্টেশন মাস্টার মাহবুবা শাহীনূর সম্পা।
শতবর্ষের বৃহত্তর ও পুরোনো রেলওয়ে জংশন স্টেশন ঈশ্বরদী জংশন। উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের রেলপথে চলাচল করার জন্য ঈশ্বরদী স্টেশনটির গুরুত্ব সেই বৃটিশ আমল থেকেই অনেক বেশি।
সেই গুরুত্বপূর্ণ ঈশ্বরদী রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন পরিচালনা করার জন্য স্টেশন মাস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন একজন নারী।
২০১৬ সালে সম্পা সহকারী স্টেশন মাস্টার হিসেবে রেলওয়েতে যোগদান করেন। পৈতৃক নিবাস মাদারীপুর জেলার মিঠাপুর হলেও তার বাবা সৈয়দপুরে রেলওয়ের কর্মচারী ছিলেন। শৈশব-কৈশোর কেটেছে সৈয়দপুরেই। ২০০৬ সালে সম্পা সৈয়দপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০০৮ সালে সৈয়দপুর মহিলা কলেজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন। তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়।
ঈশ্বরদী জংশন রেলওয়ে স্টেশনে নারী স্টেশন মাস্টার মাহবুবা শাহীনূর সম্পা বলেন, ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে শত বছরের ইতিহাসে আমি প্রথম নারী স্টেশন মাস্টার। অসম্ভব! তুমি ঈশ্বরদীতে দায়িত্ব পালন করতে কখনো পারবে না। সম্ভবই না। নারী হয়ে স্টেশন মাস্টারের দায়িত্ব পালন করা কিন্তু কঠিন! ঈশ্বরদী জংশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে নারী স্টেশনে মাস্টার! এ চাকরি মেয়েদের জন্য না। এখানে দিনে রাতে শিফটিং ডিউটি পড়বে। স্টেশনে প্রচুর কাজ, যা একটা মেয়ে কখনো করতে পারবে না। আমাকে অনেকেই এমন অনেক রকম কথা বলেছে। আমি ভয়কে দূরে ঠেলে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে হাসিমুখে জয়ী হয়েছি, আমি পেরেছি। আমাকে স্টেশনের স্টাফরা সহযোগিতা করেছেন।
নারী স্টেশন মাস্টার মাহবুবা শাহীনূর সম্পা আরও বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল, ভালো একজন শিক্ষিকা হবো। এজন্য ছাত্রজীবন থেকে অনেক টিউশনি করেছি। ভাগ্যচক্রে আমি মাস্টার তো হয়েছি, তবে স্টেশন মাস্টার। ২০১৬ সালে স্টেশন মাস্টার হিসেবে যোগদান করি। ২০১৭ সালে আমার বিয়ে হয়, তিনিও স্টেশন মাস্টারের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ট্রেন কন্ট্রোলার হিসেবে রয়েছেন। আমার তিন বছরের ছেলে আছে।
২০০৮ সালে আমার বাবা চাকরি থেকে অবসরে গেছেন। পরিবারের অনেক দায়বদ্ধতা ছিল, বাড়ির বড় সন্তান আমি। আমাকেই কিছু করতে হবে। ২০১৫ সালে রেলওয়ের চাকরির সার্কুলার বের হলে ঘনিষ্ঠ এক ভাইয়ের উৎসাহে আবেদন করি। রেলওয়েতে চাকরির আবেদন করেছিলাম কথাটি শুনে বাড়ি থেকে বলেছিল, রেলওয়েতে চাকরি পেতে মামু-খালু থাকতে হয় কিন্তু! লাখ লাখ টাকা লাগে চাকরি পেতে হলে! তখন রেলওয়ে চাকরি পাওয়াটাও একটা সৌভাগ্যের ব্যাপার ছিল।
তখন রেলওয়ের চাকরি মানেই সোনার হরিণ পাওয়া। বাবা রেলওয়ের কর্মচারী ছিলেন, তাই আমার পোষ্যকোটা ছিল। সেই মনোবল নিয়ে আমি লিখিত, মৌখিক পরীক্ষাতে অংশগ্রহণ করি। যেদিন ফলাফল বের হয়, সে খবরটাও অন্যের কাছ থেকে শুনতে হয় যে আমি পরীক্ষাতে পাস করেছি। আমার ধারণা ছিল, চাকরিটা হবে না। মনোবল শক্ত ছিল বলেই চাকরিটা হয়েছে।
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দৃঢ় প্রত্যয় এবং প্রগাঢ় আত্মবিশ্বাস নিয়ে সামনে যে এগিয়ে যাওয়া যায়।
তিনি বলেন, আধুনিক যুগে মেয়েরা কেনই বা বিশ্বাস করবে, তারা চ্যালেঞ্জ নিতে জানে না? মানুষ দেখুক! নারী বলে কেন পিছিয়ে থাকব। সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে, সব ধরনের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।
নারীরা কোন দিকে যাবে, সেই লক্ষ্য যদি ঠিক থাকে, তাহলে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব। নিজেকে মানুষ ভাবতে হবে, ছেলেরা শুধু পারবে এমন নয়, মেয়েরাও সব কাজ করতে পারবে। তাহলে মেয়েরাও আর পিছিয়ে থাকবে না।
বিএ
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০